বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিপজ্জনক পরিবেশে বন্দি রাখা হয়েছে মন্তব্য করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ ও বিভিষীকাময় অগ্নিকাণ্ডে নিহত প্রায় একশত মানুষের মৃত্যুতে গোটা জাতির সাথে আমরাও শোকাহত। বিএনপির পক্ষ থেকে গতকাল শনিবার সারা দেশে শোক দিবস পালন করেছি।
তিনি আরো বলেন, পুরান ঢাকায় মৃত্যুর সাথে বসবাস করছেন বাসিন্দারা। আর সরকার নিজেদের অবৈধ মসনদ সুরক্ষায় গ্রেফতার-মামলা-অত্যাচারে ব্যস্ত। তথাকথিত উন্নয়নের নামে পকেট ভারী করা হয়েছে, অথচ জনগণের জন্য বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়নি।
আজ রোবাবর সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
রিজভী বলেন, আমরা উৎকন্ঠিত হয়ে পড়ি পরিত্যক্ত কারাগারে একমাত্র বন্দী দেশনেত্রীকে নিয়ে। তিনি গুরুতর অসুস্থ। বসতে পারছেন না। হাঁটা চলা করতে পারছেন না। তাকে যখন কারাগারে নেয়া হয় তখন তিনি হেঁটে কারাগারে ঢুকলেন আর এখন তিনি হুইল চেয়ারে করে আদালতে আসছেন। সরকারের কি ভয়ঙ্কর নির্মমতা!
তিনি বলেন, চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডের দিন সারারাত চারদিকে বিকট শব্দ, মানুষের আর্তচিৎকার, রাসায়নিক বিস্ফোরণের ভয়ঙ্কর ও বিকট শব্দ গ্রাস করেছিল আশপাশের সকল এলাকা। অল্প দূরত্বে নির্ঘুম উৎকন্ঠায় সময় কেটেছে চরম অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়ার। আর আমরা গভীর উৎকন্ঠা নিয়ে মহান আল্লাহর কাছে তার নিরাপত্তার জন্য দোয়া করেছি। তাকে এক অশুভ উদ্দেশ্যে ভয়াবহ বিপজ্জনক পরিবেশে বন্দী করে রেখেছে অবৈধ শাসকগোষ্ঠী।
তিনি বলেন, আমি গভীর উদ্বেগ-উৎকন্ঠা এবং আতংকের সাথে বলছি- আমাদের প্রাণপ্রিয় দেশনেত্রী বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা বেগম খালেদা জিয়াকে যে পরিত্যক্ত কারাগারে অবরুদ্ধ রাখা হয়েছে তার চারপাশে রাসায়নিক বিস্ফোরকের ডিপো। চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানসন থেকে নাজিমউদ্দিন রোডে দেশনেত্রীর কারা প্রকোষ্ঠের দূরত্ব মাত্র দেড় থেকে দুই শত মিটার। খুব কাছে হওয়ায় এই কারাগারের পুকুরে পাম্প বসিয়ে অগ্নিকান্ডের রাতে সেখান থেকে পাইপে নন্দ কুমার দত্ত রোড দিয়ে চুড়িহাট্টায় পানি নিয়েছিলো দমকল বাহিনী।
রিজভী বলেন, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) তাদের এক জরিপে জানিয়েছে, পুরান ঢাকায় ২ হাজারেরও বেশি কলকারখানা এবং ২২ হাজার গুদাম ও দোকান রয়েছে। সরকার পুরান ঢাকায় ৮০০ এর বেশি অবৈধ রাসায়নিক গুদাম এবং কারখানা চিহ্নিত করেছে। ওয়াহেদ ম্যানসনের বেজমেন্টে লাশের সন্ধানে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গতকাল বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যালের চোরাই গোডাউনের সন্ধান পেয়েছেন। সেখানে শত শত বস্তা, প্লাষ্টিকের ড্রাম আর টিনের মাঝারি সাইজের ড্রামে আয়রন অক্সাইড, আয়রনিক ইয়ালো, অক্সাইড রেডবার ও এসিড গ্রিন পেয়েছেন। তারা বলেছেন, কোনোভাবে আগুন নিচে গেলে এমনভাবে বিস্ফোরণ ঘটতো যা বিল্ডিংটিকে উড়িয়ে নিয়ে যেত। তখন এই আগুন এক থেকে দুই শত মিটার পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়তো। কী হতো জানি না, এটি ভাবলেই অজানা আশঙ্কায় শিউরে উঠতে হয়। তখন কারাগারে দেশনেত্রীর কি হতো তা মহান আল্লাহ জানেন। এ নিয়ে কথা বলতে গা শিউরে উঠছে। বেগম জিয়ার কারাগারের চারদিকে এই বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থের গুদাম, কারখানা ও দোকান ভরা। গোপনে এরকম কত কেমিক্যাল গোডাউন আছে তা খোদ কর্তৃপক্ষই জানেনা।
তিনি আরো বলেন, চুড়িহাট্টার একদিন পর গত শুক্রবার রাতে পুরান ঢাকার সিদ্দিক বাজারে গ্যাসের একটি পাইপ লাইন থেকে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট সেখানে আগুন নেভাতে যায়। চার বছর আগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কম্বল তৈরির কারখানায় আগুন লাগার ভয়াবহতা আমাদের এখনো মনে আছে। গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে যে কক্ষে বন্দী রাখা হয়েছে তার ১৫০ গজের মধ্যে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মারে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। আল্লাহর রহমতে সেই অগ্নিকান্ড ভয়াবহ রূপ নেয়নি। শুধু প্রতিহিংসার জেরে শেখ হাসিনা এমন একটি কেমিক্যাল বিস্ফোরক বেষ্টিত ভয়ংকর বারুদের ডিপোর মাঝখানে আতঙ্কজনক পরিবেশে দেশনেত্রীকে এক বছর ধরে বন্দী রেখেছেন।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেছেন, ‘সরকার চকবাজার ট্রাজেডির দায় এড়াতে পারে না।’ আমি সরকারকে বলবো এই ঘটনার দায় যেহেতু স্বীকার করেছেন এখন পদত্যাগ করুন। স্বচ্ছ ভোট জালিয়তির সাফল্যের মৌতাতে বুঁদ হয়ে থাকবেন না। দেশবাসীকে দয়া করে রেহায় দিন। পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য দেশে এই বিভীষিকাময় ঘটনা ঘটলে দায় স্বীকার করে সরকার পদত্যাগ করতো।
বিএনপির এই নেতা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে চরম অসুস্থ। চিকিৎসাসেবা থেকেও বঞ্চিত করে স্যাঁতস্যাঁতে ও জরাজীর্ণ কারাপ্রকোষ্ঠে আটকে রেখেছে। শুধু তাই নয়, তার আত্মীয়স্বজনকেও তার সাথে দেখা করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই- অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি নিশ্চিত করুন।
বেগম খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি বিএনপি নেতা গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী, শামসুর রহমান শিমুল বিশ^াস, হাবিব উন নবী খান সোহেল, লায়ন আসলাম চৌধুরী, ফজলুল হক মিলন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, মীর সরফত আলী সপু, জি কে গউছ, সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, শহিদুল ইসলাম বাবুল, সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, একরামুল হক বিপ্লব, মামুনুর রশিদ মামুন, শেখ মোহাম্মদ শামীম, হযরত আলী, মিয়া নুর উদ্দিন অপু, মনোয়ার হোসেন, ইসাহাক সরকার এবং দেশব্যাপী হাজার হাজার বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি চান রিজভী।