বুধবার রাতে ঔষধ আনতে নিচে গিয়েছিল মা, আর ফিরে আসেনি; কিন্তু ৫ বছর বয়সী সানিন অপেক্ষায় আছে তার মা ফিরবেন। শুক্রবার ঢাকা মেডিকেলের মর্গে মামার কোলে চড়ে এসেও সে বারবারই প্রকাশ করেছে মাকে নিয়ে ফিরে যাওয়ার আকুতি।
রাজধানীর চকবাজারে গত বুধবার রাতে আগুনের ঘটনায় সানিনের মা বিবি হালিমা বেগম শিলা নিখোঁজ রয়েছেন। মামার সঙ্গে সানিন এসেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শিলার লাশ খুঁজে পেতে মেয়ে সানিনের ডিএনএ নমুনা নিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
‘মামা আম্মু কোথায়?’ বারবারই এমন প্রশ্নে মামা ইসরাফিল শুধু অঝোরে কেঁদেছেন, উত্তর দিতে পারেননি। ছোট্ট সানিন তখনও জানে না তার মুখ থেকে নেয়া লালার ডিএনএ নমুনায় খোঁজার চেষ্টা করা হচ্ছে তার মায়ের লাশ। এই নমুনার সূত্র ধরেই মিলতে পারে পুড়ে ছাই হওয়া তার মায়ের লাশ। কিন্তু এতকিছু বোঝাঁর কথা নয় শিশুটির। সে চাইছে মাকে নিয়ে বাসায় ফিরতে।
গত বুধবার রাতে মা অল্পসময়ের জন্য বাসার নিচে নেমেছিল। এরপর থেকে নিখোঁজ। সানিনের পাঁচ মাস বয়সী ছোট্ট বোনটাও সারাক্ষণ কাঁদছে, মায়ের অপেক্ষায়!
সানিনের বাবা মো. সুমন বলেন, ‘চকবাজার চুড়িহাট্টার আগুন আমাদের বাসা পর্যন্ত আসেনি। কিন্তু ভাগ্যই কিনা হালিমাকে টেনে নিল সেই আগুনের কাছে! আমার এই দুই শিশুর কী হবে? তাদের মাকে আমি এখন কোথা থেকে এনে দেব?’ সানিনের একটি ছোট বোন আছে পাঁচ মাস বয়সী।
শিলার বোনের স্বামী মো. বেলাল হোসেন জানালেন, ঘটনার দিন রাতে সানিন একটু অসুস্থ ছিল। তার বাবা সুমন ছিলেন কর্মস্থলে। তাই শিলা তাঁর এক বোন ও দুই শিশুসন্তানকে বাসায় রেখে নিচে গিয়েছিলেন ওষুধ কিনতে। তিনি সেই যে গেছেন, আর ফেরেননি।
গত বুধবার রাজধানীর পুরনো ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে নিহত হয়েছে অন্তত ৬৭ জন। এ ঘটনায় ৪৬টি লাশ সনাক্ত করা হয়েছে। বাকি ২১ লাশ সনাক্ত করা যাচ্ছে না। এ জন্য নিখোঁজ লোকদের স্বজনদের ডিএনএ সংগ্রহ করেছে সিআইডির ফরেনসিক টিম। ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে লাশ সনাক্ত করা হবে। শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বুথ স্থাপন করে স্বজনদের ডিএনএ নেয় সিআইডি। তবে এরপর কেউ ওই এলাকা থেকে নিখোঁজ স্বজনের খোঁজ চাইলে মালিবাগে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে ডিএনএ নমুনা দিতে পারবেন।