রাতে কর্মস্থল থেকে ফিরছিলেন মাঝবয়সি ইঞ্জিনিয়ার দীপায়ন ধর। হঠাৎ করে চারটি বাইক এসে তার পথ আটকায়। গাড়ি থেকে টেনে নামিয়ে চলল বেধড়ক মারধর। সাথে হুমকি, ‘খুব মুসলিমদরদি হয়েছিস? খুব কাশ্মির প্রেম? ভারতমাতা কি জয় বল্।’ এ সময় তারা দীপায়নকে মেরে নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার হুমকিও দেয়।
বুধবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে এ হামলা হয় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার দীপায়ন ধরের ওপর। পরে তিনি ঘটনা জানিয়ে মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ জানান। সামাজিক গণমাধ্যমে যুদ্ধের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে জানানোর কারণেই অজ্ঞাত লোকদের হাতে তিনি এ মারধর-হেনস্থার শিকার হয়েছে বলে দাবি করেন দীপায়ন। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া এ ব্যাপারে জানান, ‘অভিযোগ খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
দীপায়নের বাড়ি কলকাতায় হলেও কর্মসূত্রে এখন মেদিনীপুর শহরে থাকেন তিনি। আমতলার কাছাকাছি এলাকায় একটি প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ তিনি। বুধবার রাতে মেদিনীপুর শহর সংলগ্ন আমতলার কাছেই তিনি ওই হামলা ও হেনস্তার শিকার হন। এ বিষয়ে পরদিন বৃহস্পতিবার দীপায়ন বলেন, ‘পুরো ব্যাপারটা পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মধ্যে ঘটেছে। ওরা বাইকে এসেছিল। মারধর-হুমকির পরে বাইক নিয়েই খড়্গপুরের দিকে চলে যায়।’
পুলওয়ামায় আত্মঘাতি হামলায় জওয়ানদের মৃত্যুর প্রেক্ষিতে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে নিজের মতামত পোস্ট করেছিলেন এই ইঞ্জিনিয়ার। দীপায়নের মতে, পাকিস্তান মানেই সব মানুষ খারাপ, এমনটি তিনি মনে করেন না। হিংস্রতার বিরুদ্ধে হিংস্রতা, এই সমাধানে তিনি বিশ্বাস করেন না। তিনি যুদ্ধের বিরুদ্ধে। দীপায়ন লেখেন, ‘যুদ্ধ হচ্ছে মৃত্যু মৃত্যু খেলা, যুদ্ধ হচ্ছে তোমার কাছে আমার অবহেলা।’
সামাজিক গণমাধ্যমে যুদ্ধবিরোধী মন্তব্যের জেরে মারধর চলছে রাজ্যের নানা প্রান্তে। তবে মেদিনীপুরে এ প্রথম এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতির অভিযোগ, ‘দেশপ্রেমের নামে বিজেপির লোকেরাই হুমকি দিচ্ছে, মারধর করছে।’
বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাশের দাবি অবশ্য অন্য রকম। তিনি বলেন, ‘বিজেপির কেউ এমন কাজ করবে না। তবে কেউ দেশবিরোধী কথা বললে দেশের মানুষের আবেগে লাগে। তখন মানুষই প্রতিবাদ করেন।’ আর দীপায়ন বলছেন, ‘দেশকে সত্যি ভালবাসেন এমন কেউ এ ভাবে হামলা করতে পারেন না। আমার মতের পক্ষে অনেকের সমর্থন রয়েছে। আমিও তাই মানুষেই আস্থা রাখছি।’
কাশ্মিরের পুলওলামায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় সিআরপিএপের ৪৪ সদস্য নিহত হওয়ার পর পাকিস্তানকে দোষারোপ করে ভারত। বিভিন্ন মহলে তারা চেষ্টা চালায় পাকিস্তানকে এক ঘরে করার। তাতে সফল না হয়ে অর্থনৈতিকভাবে পাকিস্তানকে দুর্বল করার জন্য ভারতে পাকিস্তানের বাণিজ্যের বিশেষ সুবিধা বাতিল করে এবং পাকিস্তান থেকে আসা সব পণ্যের ওপর দুইশ শতাংশ শুল্কারোপ করে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ভারতের এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে পাল্টা হুমকি দেন ইমরান খান। তিনি বলেন, পাকিস্তান কোনোভাবেই এ হামলার সাথে জড়িত নয়। ভারতে কোনো কিছু হলেই তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আঙ্গুল তুলে থাকে। এ হামলায় যদি পাকিস্তান সম্পৃক্ত থাকে, তাহলে এর প্রমাণ আমাদের দিন, আমরা এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেব।