সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০১৯-২০ সালের নির্বাচন আগামী ১৩ ও ১৪ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। আইনজীবীদের এই শীর্ষ সংগঠনে কারা নেতৃত্ব দেবেন তা নিয়ে আদালত অঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা। দীর্ঘ প্রায় সাত বছর বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট বার পরিচালনা করছেন। তবে এবারের নির্বাচনকে যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার সমর্থকেরা। গত ১১ ফেব্রুয়ারি প্যানেল ঘোষণা করে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। অন্য দিকে বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের ‘নীল’ প্যানেল চূড়ান্ত হয়নি। সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলীকে সভাপতি ও ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকনকে নীল প্যানেল থেকে সম্পাদক করা হয়েছে বলে বেশ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী জানিয়েছেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো প্যানেল ঘোষণা করা হয়নি।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন বলেন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের প্যানেল চূড়ান্ত হয়নি। এখনো প্যানেল ও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি।
অপর দিকে সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, তাকে সম্পাদক পদে প্রার্থী করা হয়েছে বলে এ বিষয়ে গঠিত আহ্বয়াক কমিটির প্রধান ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার জানিয়েছেন। আর সভাপতি পদে সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীকে প্রার্থী করা হয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল এখনো ঘোষণা করা হয়নি।
জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্ট বারের প্রার্থী ঠিক করতে জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার ও প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি করা হয়। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে স্কাইপের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট বারের প্রার্থী ঠিক করতে সিনিয়র আইনজীবীদের সাথে আলোচনা করেছেন।
এ নিয়ে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। আইনজীবীদের দাবি যোগ্য, জনপ্রিয়, দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা ও খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে যারা মাঠে-ময়দানে সক্রিয় তাদের প্রার্থী করা সময়ের দাবি। আইনজীবীদের দাবি গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আইনজীবীদের আন্দোলন যারা এগিয়ে নিতে পারবেন তাদের যেন প্রার্থী করা হয়।
সরকার সমর্থকদের প্যানেল : নির্বাচনকে সামনে রেখে প্যানেল ঘোষণা করেছে সরকার সমর্থক সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা প্যানেল)। গত ১১ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্যসচিব ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এই প্যানেল ঘোষণা করেন। সাদা প্যানেলের সভাপতি পদে সমিতির সাবেক সম্পাদক সিনিয়র আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন ও সম্পাদক পদে বাংলাদেশ আইন সমিতির সাবেক সম্পাদক আইনজীবী আবদুন নুর দুলালের নাম ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া সহসভাপতি (দু’টি) পদে বিভাষ চন্দ্র বিশ্বাস ও মো: জসিম উদ্দিন, কোষাধ্যক্ষ পদে সৈয়দ আলম টিপু, সহ-সম্পাদক (দু’টি) পদে মোহাম্মদ বাকির উদ্দিন ভূঁইয়া ও কাজি শামসুল হাসান শুভ, কার্যনির্বাহী সদস্য পদে মোহাম্মদ জগলুল কবির, মশিউর রহমান, শামীম সরদার, আফিয়া আফরোজি রানী, আওলাদ হোসেন ও হুমায়ূন কবিরের নাম ঘোষণা করা হয়।
১৩ ও ১৪ মার্চ ভোট : আগামী ১৩ ও ১৪ মার্চ দুই দিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনে ভোট গ্রহণ হবে। ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল এবং ৬ মার্চ মনোনয়ন প্রত্যাহারের তারিখ ধার্য করা রয়েছে। এবার সুপ্রিম কোর্ট বারের সদস্যসংখ্যা হচ্ছে আট হাজার ৮৮ জন।
সিনিয়র আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি নির্বাচন সাব কমিটি গঠন করা হয়েছে। কার্যনির্বাহী কমিটির মোট ১৪টি পদে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের ২০১৮-১৯ সালের নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থক জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য ‘নীল’ প্যানেল নিরঙ্কুশ জয় পায়। এ প্যানেল থেকে সভাপতি, সম্পাদক, দু’টি সহসভাপতি, একটি সহ-সম্পাদকসহ ১০টি পদে জয়ী হয়। আর সরকার সমর্থক সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের ‘সাদা’ প্যানেল একটি সহ-সম্পাদক ও তিনটি সদস্যসহ চারটি পদে জয়ী হয়। নীল প্যানেল থেকে সভাপতি নির্বাচিত হন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন। আর সম্পাদক নির্বাচিত হন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুবউদ্দিন খোকন।