ঠিক এক সপ্তাহ আগেই সেনাদের রক্ত টগবগ করে ফোটার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বলেছিলেন, পুলওয়ামা কাণ্ডের জন্য ‘বড় দাম’ চোকাতে হবে। কিন্তু সাত দিনের মধ্যেই গরম গলা নরম করলেন মোদী।
কিন্তু সাত দিনের মধ্যেই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে থমকে যাওয়া সামগ্রিক আলোচনা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি করার কথা লেখা হল ভারত-সৌদি আরব যৌথ বিবৃতিতে। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বয়ান থেকে স্পষ্ট যে, মুখে যাই বলা হোক, প্রকৃতপক্ষে ‘যুদ্ধং দেহি’ মনোভাব থেকে সরে আসতে বাধ্য হচ্ছে মোদী সরকার। আমেরিকা এবং চিনের চাপে (যদিও দু’টি রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য পৃথক) এই মুহূর্তে দক্ষিণ এশিয়ায় বড় রকমের কোনও সামরিক পদক্ষেপ করা সম্ভব নয় ভারতের পক্ষে, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।
তবে কূটনৈতিক ভাবে পাকিস্তানকে চাপে রাখাটা মোদীর ঘরোয়া রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়ে। সে কারণেই পুরনো অস্ত্র, অর্থাৎ পাকিস্তানকে জল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি ফের আরও এক বার (উরি হামলার পরেও বলেছিল ভারত) দেওয়া হয়েছে আজ। কেন্দ্রীয় জলসম্পদমন্ত্রী নিতিন গডকড়ী হুমকির স্বরে আজ বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজির নেতৃত্বে আমাদের সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ভারত থেকে পাকিস্তানে বয়ে যাওয়া জলের আমাদের যা ভাগ রয়েছে, তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ওই জল আমরা আমাদের জম্মু-কাশ্মীরের মানুষদের দেব।’’
বিষয়টি যথেষ্ট বিতর্কিত। সিন্ধু জলচুক্তি অগ্রাহ্য করে অববাহিকার উপরের দিকে থাকা ভারত যদি সত্যিই পাকিস্তানকে জল দেওয়া বন্ধ করে দেয়, তবে তার পরিণাম হবে যুদ্ধেরই মতো। এর পর চিন ভারতকে ব্রহ্মপুত্রের জল বন্ধ করে দিলে ভারতের অভিযোগ করার মুখ থাকবে না। তা ছাড়া, এই সিদ্ধান্তের ফলে গোটা জম্মু ও কাশ্মীরে বন্যার আশঙ্কা তৈরি হবে। বিষয়টি নিয়ে বিদেশ মন্ত্রকের কাছে জানতে চাওয়া হলে নীরবতাই বজায় রাখা হয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, বিভিন্ন মাধ্যমে আমেরিকা গত সাত দিনে ভারতকে জানিয়ে দিয়েছে, এই মুহূর্তে ভারত-পাক ফ্রন্টে কোনও রকম বাড়তি সামরিক উত্তেজনা যেন না হয়। কারণ আফগানিস্তানে তালিবানের সঙ্গে তাদের তথাকথিত শান্তি প্রক্রিয়া প্রায় শেষের মুখে। কাবুল থেকে মার্কিন সেনা পুরোপুরি সরিয়ে নেওয়ার এই সময়ে ইসলামাবাদকে প্রয়োজন ওয়াশিংটনের। এখন ভারতের সঙ্গে পাকিস্তান সামরিক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে আমেরিকার গোটা প্রস্তুতিটাই ভেস্তে যেতে পারে। তা ছাড়া, গোড়া থেকেই পাকিস্তান, জইশ-ই-মহম্মদ এবং মাসুদ আজহারের পাশে থেকেছে বেজিং। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ছায়াযুদ্ধ হলে চিন কোন পক্ষ নেবে, তা নিয়ে জল্পনার জায়গা নেই। পাশাপাশি, যুদ্ধের আন্তর্জাতিক দায়ভার ঘাড়ে চাপবে নয়াদিল্লির। সব মিলিয়ে হিতে বিপরীত হওয়ারই আশঙ্কা।