২৭ বছরের জাভেদ আহমদ দশ বছর ধরেই এ এলাকাতে বসবাস করছেন, জম্মু-কাশ্মিরে যাতায়াত করছেন, শাল বিক্রি করছেন। কোনোদিন কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু পুলওয়ামার ঘটনার জেরে এবার তাকে হতে হয়েছে রক্তাক্ত।
তার দোষ তিনি কাশ্মিরের শাল বিক্রি করেন, তার ওপর মুসলমান। অবশ্য এতদিন এ ইস্যুগুলোও সামনে আসেনি, বরং তার শালের কদর ছিল বেশ।
কিন্তু এবার দীর্ঘদিনের পরিচিত নদিয়ার তাহেরপুরে উগ্র দেশভক্তদের হামলার মুখে পড়েন। তাকে জোর করে বন্দে মাতরম, ভারতমাতা কি জয় ইত্যাদি বলানোর চেষ্টা চলে। এক পর্যায়ে তাদের হামলারও শিকার হন তিনি। ফলে তার নাকমুখ থেকে রক্ত বেরুতে থাকে।
জানা গেছে, তাহেরপুর জাভেদ আহমদের একটি দোকান রয়েছে। এখানে থাকায় রয়েছে ভাড়াবাড়িও। এলাকার বহু মানুষকে তিনি চেনেন, তাকেও অনেকেই চেনে। তারপরও তাকে এ হামলার শিকার হতে হয়েছে। মেরে নাম-মুখ ফাটিয়ে দেয়া ওই হামলার ভিডিও ভাইরাল হয় মঙ্গলবার।
এ বিষয়ে বুধবার জাভেদ গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেন। কিন্তু কারো প্রতি ঘৃণা নয়, বরং ভালবাসার ঝাপি মেলে বসেন তিনি। জাভেদ বলেন, এতদিন ধরে আছি কোনোদিন নিরাপত্তার কোনো অভাব বোধ করেননি। আমি জানি মুষ্টিমেয় কিছু লোক বিদ্বেষ ছড়াতে এ সব করছে। আমরা এতে ভয় পাই না। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের ওপর আমাদের আস্থা রয়েছে।
তার এ কথার ভিত্তিও রয়েছে। কারণ মঙ্গলবার রাতে যখন জাভেদের ওপর হামলা হচ্ছিল, তখন এলাকারই কিছু লোক পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ এসে জাভেদ ও তার চাচাতো ভাই মেহরাজউদ্দিনকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। পুলিশ হামলাকারীদের একজনকে গ্রেফতার করেছে। বাকিদেরও গ্রেফতারের জন্য সন্ধান চালাচ্ছে তারা।
ভয়ে এলাকা ছাড়বেন কি না এ প্রশ্নের জবাবে জাভেদ বলে, এতদিন ধরে আমরা এখানে ব্যবসা করছি। কত মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। আমাদের ওপর যারা হামলা চালিয়েছে তাদেরকে আমরা চিনি না। কাজেই তাদের ভয়ে আমাদের এ জায়গা ছাড়ার কথাও ওঠে না।
পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলার পর থেকে দেশের বিভিন্ন অংশে কাশ্মিরিদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে, তাদের লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিদ্বেষ রুখতে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছেন। তার এ পদক্ষেপের প্রশংসা করে কাশ্মিরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে কাশ্মিরিদের ওপর হামলায় মমতার সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মিরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফের গাড়িবহরে আত্মঘাতি হামলা চালানো হয়। এতে মারা যায় ওই বাহিনীর ৪৪ জন সদস্য। পাকিস্তানভিত্তিক সংগঠন জয়েশ-ই মোহাম্মদ এ হামলার দায় স্বীকার করে। পরে ভারত এ জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে। পাকিস্তানও পাল্টা জবাবে জানায়, এ ধরনের উস্কানিমূলক কথাবার্তা না বলে বরং প্রমাণ থাকলে দিক। অভিযোগ সত্যি হলো আমরা সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবো।