সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতিকে প্রধান করে এবং পরিবহন ব্যবসায় সম্পৃক্ত স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রীসহ ব্যক্তিবর্গের সংখ্যাগরিষ্ঠতায় কমিটি গঠনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে বিতর্কিত ও পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকায় লিপ্ত ব্যক্তিবর্গকে বিশেষ করে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃস্থানীয়দের একচ্ছত্র প্রাধান্য থাকায় স্বার্থের দ্বন্দ্বের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে এই কমিটি গঠন প্রশ্নবিদ্ধ। তাই অবিলম্বে সুখ্যাতিসম্পন্ন ও সংশ্লিষ্ট খাতে বিশেষজ্ঞজনকে প্রধান করে স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি পুনর্গঠনের আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। প্রয়োজনে শ্রমিক ও মালিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে কমিটির বাইরে থেকে প্রদত্ত সুপারিশ কমিটি বিবেচনায় নিতে পারে বলেও মত দিয়েছে টিআইবি।
বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনায় জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি রোধে কোন কার্যকর উদ্যোগই যখন দেখা যাচ্ছে না, তখন অবশেষে যেভাবে কমিটি গঠিত হলো তাও সরকারের সদিচ্ছাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। কমিটির প্রধান হিসেবে ইতোপূর্বে বিতর্কিত ভূমিকা রাখা, পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ এবং একচোখাভাবে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক পক্ষের প্রভাবশালীজনকে কমিটিতে নিয়োগ দেওয়ায় এ কমিটি নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে- এমন আশা করা অসম্ভব।
ড. ইফতেখারুজ্জামান আরো বলেন, গভীর উদ্বেগের সাথে ইতোপূর্বে আমরা লক্ষ্য করেছি যে, গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় প্রাক্তন নৌপরিবহন মন্ত্রীর বিতর্কিত ভূমিকা ও প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে এবং এর প্রেক্ষিতে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের অভূতপূর্ব আন্দোলনের পরও শ্রমিকদের অনায্য দাবির পক্ষে তার এবং কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত একাধিক সদস্যের প্রত্যক্ষ অবস্থান তাদের নিরপেক্ষতা ও দুর্ঘটনা কার্যকর নিয়ন্ত্রণের স্বদিচ্ছাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
ড. জামান বলেন, ‘সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার ওপর টিআইবির গবেষণায় দেখা যায়, সড়ক পরিবহন খাতে সীমাহীন অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, বিচারহীনতা, দায়িত্বে অবহেলা ও প্রভাবশালীদের লাগামহীন অসাধু দৌরাত্ম্য বিদ্যমান। প্রভাবশালীদের দৌরাত্মে সড়কজুড়ে ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অদক্ষ চালক ও বেপরোয়া যান চালনা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। পরিবহন খাত কমিটি প্রভাবশালী শ্রমিক ও মালিক সংগঠনের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা প্রদানের সাংবিধানিক অঙ্গীকার নির্বিকারভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। এমতবস্থায় স্বার্থের দ্বন্দ্বসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত কমিটি আদতে কোন কার্যকরী ফল আনবে না। সরকারের নিকট আমাদের আহ্বান, অবিলম্বে নিরপেক্ষ ও স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত ব্যক্তি বিশেষ করে সংশ্লিষ্টখাতে সুখ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ; নাগরিক অধিকার ক্ষেত্রের অংশীজন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে এই কমিটি পুনর্গঠন করা।’