গাড়িটির আমদানি মূল্য দেড় কোটি টাকার কম। তবে শুল্ককর পড়ে প্রায় ১০ কোটি টাকা। এরপর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন খরচ ও মুনাফা যোগ হয়ে গাড়িটি বাংলাদেশের বাজারে বিক্রি হওয়ার কথা প্রায় ১২ কোটি টাকায়। তবে সংসদ সদস্যরা নিজেদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করলে ছাড় পান প্রায় ১০ কোটি টাকা। কার্যত তাঁরা ১২ কোটি টাকার গাড়ি কিনতে পারেন দেড় কোটি টাকায়।
জাপানের টয়োটা ব্র্যান্ডের ল্যান্ড ক্রুজার এফজেএ ৩০০ ডব্লিউ মডেলের এই গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক, যিনি ব্যারিস্টার সুমন নামে বেশি পরিচিত। গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে তিনি প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর ৫১ জন সংসদ সদস্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির উদ্যোগ নিয়েছিলেন, ঋণপত্র খুলেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১০ জনের গাড়ি দেশে এসেছে। ছয়জন গাড়ি খালাস করতে সমর্থ হয়েছেন। চারজনের গাড়ি খালাস করার আগেই ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ফলে চার সংসদ সদস্যের গাড়ি আটকে দিয়েছে কাস্টমস।
সংসদ সদস্যরা নিজেদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করলে ছাড় পান প্রায় ১০ কোটি টাকা। কার্যত তাঁরা ১২ কোটি টাকার গাড়ি কিনতে পারেন দেড় কোটি টাকায়।
কাস্টমস সূত্র জানায়, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের তিন মেয়াদে অন্তত ৫৭৬টি গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করেন সংসদ সদস্যরা। এসব গাড়ির আমদানিমূল্য (অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু ধরে) ৪২৮ কোটি টাকা। গাড়িগুলো সাধারণ মানুষের জন্য আমদানি করা হলে শুল্ককর দিতে হতো সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি। সংসদ সদস্যরা এই পরিমাণ শুল্ককর ছাড় পেয়েছেন।
সংসদ সদস্যরা সাধারণত দামি গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করেন। এবার ছয়জন যেসব গাড়ি আমদানি করেছেন তার বাজারমূল্য ৯ থেকে ১২ কোটি টাকা। এর আগে ২০০৯ সাল থেকে আমদানিকরা গাড়ির বাজারমূল্য ছিল ৬ থেকে ১২ কোটি টাকা।
সংসদ সদস্যদের এ সুযোগ দেওয়া শুরু হয় এরশাদের আমলে। ১৯৮৮ সালের ২৪ মে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়। পরবর্তী সময়ে বিএনপি ক্ষমতায় আসে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। তারা এরশাদ সরকারের বিভিন্ন নীতি ও আইন বদলে দেয়। কিন্তু শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির সুযোগটি বহাল রাখে সব সংসদ। এখন সংসদ সদস্যরা পাঁচ বছরে একটি গাড়ি আমদানি করতে পারেন।
এবার ছয়জন যেসব গাড়ি আমদানি করেছেন তার বাজারমূল্য ৯ থেকে ১২ কোটি টাকা। এর আগে ২০০৯ সাল থেকে আমদানিকরা গাড়ির বাজারমূল্য ছিল ৬ থেকে ১২ কোটি টাকা।
দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির সুযোগ দেওয়া সম্পূর্ণ অনৈতিক ও বৈষম্যমূলক। তাঁরা রাজনৈতিক বিবেচনায় ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সুযোগটি নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। এই আন্দোলনের চেতনা কোথাও বৈষম্য থাকবে না। আশা করব, অন্তর্বর্তী সরকার সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত সুবিধার গাড়িসহ সব বৈষম্যমূলক নীতি তাদের সংস্কারের মধ্যে রাখবে।’
সংসদ সদস্যদের এ সুযোগ দেওয়া শুরু হয় এরশাদের আমলে। ১৯৮৮ সালের ২৪ মে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়। শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির সুযোগটি বহাল রাখে সব সংসদ।
দ্বাদশ সংসদে হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে নির্বাচিত সৈয়দ সায়েদুল হক এবার সবচেয়ে দামী গাড়িটি এনেছেন। কাস্টমসের শুল্কায়নের নথি অনুযায়ী, গাড়িটির আমদানিমূল্য দেখানো হয় ১ লাখ ১১ হাজার ডলার বা ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। কাস্টমস শুল্কায়নমূল্য (যে দাম ধরে শুল্ক আরোপ করা হয়) নির্ধারণ করে ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এ ধরনের গাড়ির শুল্কহার ৮২৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। এ হিসাবে শুল্ককর আসে ১০ কোটি টাকার বেশি।
জাপানের ক্রস কনটিনেন্ট করপোরেশন থেকে গাড়িটি আমদানি করা হয়। এটি ২০২৪ সালে তৈরি। সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি (সিসি বা ইঞ্জিন–ক্ষমতা) ৩ হাজার ৩৪৫।
সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির সুযোগ দেওয়া সম্পূর্ণ অনৈতিক ও বৈষম্যমূলক। তাঁরা রাজনৈতিক বিবেচনায় ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সুযোগটি নিয়েছেন।
সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক বিদেশে রয়েছেন। তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকলেও ছয় লাখ টাকা অগ্রিম আয়কর (এআইটি) দিয়েছি। দ্বাদশ সংসদের মেয়াদের সময় গত ২০ জুন গাড়িটি খালাস করেছি। তবে এখনো নিবন্ধন করিনি। কারণ আমার পুরোনো গাড়িটি বিক্রির পর মালিকানা বদলের প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। আমি একটি গাড়িই রাখব।’
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামি গাড়ি এনেছেন মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। গত ৩০ জুলাই তিনি গাড়িটি খালাস করেন। তিনি গাড়ি এনেছেন সিঙ্গাপুরের টয়োটা টুশো এশিয়া প্যাসিফিক প্রাইভেট লিমিটেড থেকে। তাঁর গাড়ির ব্র্যান্ডও টয়োটা এলসি স্টেশন ওয়াগন জিআর-এস। গাড়িটির সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ৩ হাজার ৩৪৬।
সাকিব আল হাসানের গাড়িটির আমদানিমূল্য দেখানো হয় ১ কোটি ১৪ লাখ জাপানি ইয়েন বা ১ কোটি ৬ লাখ টাকা। এই গাড়িরও শুল্কহার ৮২৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। গাড়িটির শুল্কায়ন মূল্য প্রায় ১ কোটি ৮ লাখ টাকা। এ হিসাবে গাড়িটির শুল্ককর আসে ৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। সংসদ সদস্য হিসেবে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়েছেন সাকিব আল হাসান। শুধু অগ্রিম কর বাবদ ৫ লাখ ৩৯ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে।
ঢাকা-১০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ ৯ কোটি টাকা বাজারমূল্যের একটি গাড়ি আমদানি করেছেন। তিনি শুল্কছাড় পেয়েছেন ৮ কোটি টাকা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের ফয়জুর রহমান, নাটোর-১ আসনের আবুল কালাম ও লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের গোলাম ফারুকও ৯ কোটি টাকা বাজারমূল্যের গাড়ি আমদানি করে ৮ কোটি টাকা করে শুল্কছাড় পান।
সব মিলিয়ে খালাস হওয়া ছয়টি গাড়িতে সাড়ে ৫১ কোটি টাকা শুল্কসুবিধা পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্যরা।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামি গাড়ি এনেছেন মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। গত ৩০ জুলাই তিনি গাড়িটি খালাস করেন।
কাস্টমস সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হাওয়ার পরও আটকে যাওয়া চারটি গাড়ির মধ্যে বগুড়া-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান মজনু ও সিরাজগঞ্জ-২ সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরির গাড়ির শুল্কায়নও শেষ হয়েছে। তবে তাঁরা খালাস করতে পারেননি। আবার ময়মনসিংহ-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম আনিসুজ্জামান এবং টাঙ্গাইল-৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অনুপম শাহজাহানের দুটি গাড়ি শুল্কায়ন শেষ হওয়ার আগেই দ্বাদশ সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। এতে এই দুই গাড়িও আটকে গেছে।
এ ১০টি গাড়ির বাইরে ৪১টি গাড়ি আমদানি হয়েছে কি না, তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। কারণ এসব গাড়ির কোনো নথিপত্র কাস্টমসে জমা দেওয়া হয়নি। এসব গাড়ির ঋণপত্র খোলা হয় মার্চ থেকে ৩০ জুলাই সময়ে। তবে কাস্টমস কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, কিছুসংখ্যক গাড়ি এখনো আমদানি হয়নি। আবার কিছুসংখ্যক গাড়ি আমদানি হলেও এখনো নথিপত্র জমা দেওয়া হয়নি।
ঢাকা-১০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ ৯ কোটি টাকা বাজারমূল্যের একটি গাড়ি আমদানি করেছেন। তিনি শুল্কছাড় পেয়েছেন ৮ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদের মেয়াদের সময় যেসব গাড়ি শুল্কায়ন হয়েছে, সেগুলো খালাস হয়েছে। দ্বাদশ সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর যেসব গাড়ি আমদানি হচ্ছে, সেগুলো শুল্কমুক্ত খালাসের সুযোগ নেই। তবে দ্বাদশ সংসদের মেয়াদের সময় আমদানি হলেও খালাস হয়নি, এ রকম চারটি গাড়ি আটকে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি দেওয়া হয়েছে।
শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকলেও ছয় লাখ টাকা অগ্রিম আয়কর (এআইটি) দিয়েছি। দ্বাদশ সংসদের মেয়াদের সময় গত ২০ জুন গাড়িটি খালাস করেছি। তবে এখনো নিবন্ধন করিনি। কারণ আমার পুরোনো গাড়িটি বিক্রির পর মালিকানা বদলের প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। আমি একটি গাড়িই রাখব।
সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক।
যেসব সাবেক সংসদ সদস্য ঋণপত্র খুলেছিলেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দ্বাদশ সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকু, সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, গত নির্বাচনের আগে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে সংসদ সদস্য হওয়া মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর এবং সাবেক সংসদ সদস্য সাজ্জাদুল হাসান, আবুল কালাম আজাদ, এস এ কে একরামুজ্জামান, চয়ন ইসলাম, এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন প্রমুখ।
সংরক্ষিত নারী আসনের আট সাবেক সংসদ সদস্যের নামে গাড়ি আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছিল। তাঁরা হলেন তারানা হালিম, সানজিদা খানম, নাসিমা জামান ববি, নাদিয়া বিনতে আমিন, বেগম মাহফুজা সুলতানা, খালেদা বাহার বিউটি, রুনু রেজা ও শাহিদা তারেক দীপ্তি।
সংসদ সদস্য হওয়ার সুবিধায় আমদানি করা গাড়ি শর্ত ভেঙে হস্তান্তরসহ নানা অপব্যবহারের নজির আছে। এ জন্য এই সুবিধা থেকে বিলাসবহুল গাড়ি বাদ দেওয়া উচিত। যদি আমদানিসুবিধা দিতে হয়; তাহলে অন্তত কিছু শুল্ককর আরোপ করা উচিত।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান
জাপান থেকে রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডার সাবেক সভাপতি আবদুল হক বলেন, সংসদ সদস্যরা যেসব গাড়ি আমদানি করেছেন, তা দেশে বাণিজ্যিকভাবে খুব একটা আমদানি হয় না। কারণ দাম অনেক বেশি। তিনি বলেন, সংসদ সদস্যদের কেউ কেউ এক থেকে দেড় কোটি টাকা নিয়ে গাড়ি আমদানির অনুমতিপত্র বিক্রি করে দেন। সেই গাড়ি বাজারে কেনাবেচা হয়। তবে পাঁচ বছর সংসদ সদস্যরা গাড়ির মালিকানা হস্তান্তর করতে পারেন না। সেই চুক্তিতেই গাড়ি কেনাবেচা হয়।
সংসদ সদস্যদের বেশির ভাগই শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির সুযোগ নেন। পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে (১৯৯১-৯৬) বিএনপি ক্ষমতায় আসে। ওই সংসদের ৩০১ সংসদ সদস্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আনেন। এরপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। তাদের আমলে ১৭৬ সংসদ সদস্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি করেন। পরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০০১-০৬ মেয়াদের অষ্টম সংসদের সদস্যরা সব মিলিয়ে ৩১১টি গাড়ি আনেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ২০০৯ সালে আবার ক্ষমতায় আসে। সেবার অর্থাৎ নবম সংসদের মোট ৩১৫ সদস্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি এনেছেন।
দশম (২০১৪-১৮) ও একাদশ (২০১৯-২৩) সংসদের সদস্যরা শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে মোট কতটি গাড়ি এনেছেন, সে ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে কাস্টমস সূত্রে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত অন্তত ৫৭৬টি গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানির তথ্য পাওয়া যায়। এর বাইরেও আমদানি হয়ে থাকতে পারে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাদের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত হিসেবে বিভিন্ন ধরনের করছাড় ও কর অবকাশ সুবিধা তুলে নেওয়ার কথা বলেছিল। তার মধ্যে আলোচনায় আসে সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত সুবিধার গাড়িও। এরপর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সংসদ সদস্যদের আমদানি করা গাড়ির ওপর কিছু শুল্ক আরোপের জন্য দ্য মেম্বারস অব পার্লামেন্ট (রিমিউনারেশন অ্যান্ড অ্যালাউন্স) অর্ডার, ১৯৭৩-এর প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়। যদিও সে ক্ষেত্রে অগ্রগতি ছিল না। জুলাইয়ে বাজেট কার্যকর হয় এবং সুবিধাটি রেখে দেওয়া হয়।
সংসদ সদস্যদের বেশির ভাগই শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির সুযোগ নেন। পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে (১৯৯১-৯৬) বিএনপি ক্ষমতায় আসে। ওই সংসদের ৩০১ সংসদ সদস্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আনেন। এরপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। তাদের আমলে ১৭৬ সংসদ সদস্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি করেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) করা হলফনামা বিশ্লেষণ বলছে, দ্বাদশ সংসদে ৯০ শতাংশ সংসদ সদস্য ছিলেন কোটিপতি এবং ৬৭ শতাংশ ব্যবসায়ী। ধনী সংসদ সদস্যদের গাড়ি কিনতে হাজার হাজার কোটি টাকা শুল্কছাড় দিয়ে চিনির মতো নিত্যপণ্য ও মুঠোফোনের মতো জরুরি সেবায় উচ্চহারে শুল্ককর আরোপ করে রাখা হয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সংসদ সদস্য হওয়ার সুবিধায় আমদানি করা গাড়ি শর্ত ভেঙে হস্তান্তরসহ নানা অপব্যবহারের নজির আছে। এ জন্য এই সুবিধা থেকে বিলাসবহুল গাড়ি বাদ দেওয়া উচিত। যদি আমদানিসুবিধা দিতে হয়; তাহলে অন্তত কিছু শুল্ককর আরোপ করা উচিত।
সূত্র: প্রথম আলো