পূর্বের রেষারেষি ও নতুন করে ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে আবারও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে সাংবাদিক ও সাধারণ শিক্ষার্থীসহ কমপক্ষে ১৫জন আহত হয়েছেন। সোমবার বেলা ১১টার দিকে ছাত্রলীগের স্থগিত করা কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরতরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে চাইলে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জবি শাখা ছাত্রলীগের স্থগিত করা কমিটির কর্মীরা একত্র হয়ে সকাল থেকে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়। এরপর বেলা ১১টার দিকে স্থগিত কমিটি বিলুপ্ত ও নতুন কমিটির দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে চাইলে তাদের ধাওয়া দেন আগে থেকে অবস্থানরতরা। এসময় আন্দোলনরতদের ৮জন এবং স্থগিত কমিটির ২জন আহত হন।
এরপর আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাস গেট থেকে সরে গেলে স্থগিত কমিটির নেতাকর্মীরা শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে মোবাইলে ছবি ধারণ করাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন বিল্ডিংয়ের নিচে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এসময় কমপক্ষে পাঁচ সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হন। এদের সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
এরপর বিকেল ৩টার দিকে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে গেটে অবস্থান নেয় স্থগিত কমিটির কর্মীরা। এসময় তারা বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এ ঘটনায় সেখানে অবস্থানরত দৈনিক সংবাদের জবি প্রতিনিধি রাকিব আহত হন। এ সময় তাকে এলোপাতাড়ি আক্রমণ ও মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে নিকটস্থ সুমনা হাসপাতালে পাঠায়।
এদিকে, ক্যাম্পাসের আশপাশের বিভিন্ন স্থানে উভয় গ্রুপের শতাধিক নেতাকর্মী অবস্থান নিয়েছেন। ফলে এসব এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। আশপাশের বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় আহতরা বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল, মিটফোর্ড হাসপাতাল ও ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হামলায় আহত বিদ্রোহী গ্রুপের হাসানের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
নতুন কমিটির দাবিতে আন্দোলনরত বিদ্রোহী গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন আশরাফুল ইসলাম টিটন ও হোসনে মোবারক রিশাত। আশরাফুল ইসলাম টিটন স্থগিত কমিটির সহ-সভাপতির পদ পেলে তিনি পদত্যাগ করেন। অন্যগ্রুপের নেতৃত্বে আছেন তরিকুল রিমন, মোহাম্মদ কামরুল হোসেন ও আল শাবাব। বিবদমান দুই গ্রুপকেই ক্যাম্পাসে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে দেখা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, আশরাফুল ইসলাম টিটন ও হোসনে মোবারক রিশাত গ্রুপের সাথে বহিরাগত ঢাকা কলেজের শাহরিয়ার মামুন ও রাশিক মুস্তাকিম এবং কবি নজরুল কলেজের ছাত্রলীগ কর্মী সুজন ছিল। এছাড়াও বিদ্রোহী গ্রুপের সাথেই ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কৃত শাকিল, নূরে আলম ও আশিক সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
অন্যদিকে তরিকুল রিমন, মোহাম্মদ কামরুল হোসেন ও আল শাবাব গ্রুপ নিজেদের কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের অনুসারী, পদপ্রত্যাশী, সক্রিয় ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে দাবি করেছে। ক্যাম্পাসের অস্থিতিশীল অবস্থা প্রতিরোধ করার জন্য তারা ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছেন বলেও তাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।
পাশাপাশি আশরাফুল ইসলাম টিটন ও হোসনে মোবারক রিশাত গ্রুপও নিজেদের পদপ্রত্যাশী ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের অনুসারী হিসেবে দাবি করেছেন। হোসনে মোবারক রিশাত বলেন, ক্যাম্পাসে কিছু হলেই স্থগিত কমিটি আমাদের কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে এবং ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কার করিয়েছে।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজোয়ানুল হক শোভন বলেন, যার যার স্বার্থ হাসিলের জন্য সবাই আমাদেরকে ব্যবহার করে। সবাইতো আমাদের কর্মী। সবাইতো ছাত্রলীগ। আমরা বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত করে রিপোর্ট নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
স্থগিত কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, তারা তো কার্যক্রম ভালোর চেয়ে খারাপ করছে। এ বিষয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবো।
এ বিষয়ে জানতে জবি ছাত্রলীগের স্থগিতকৃত কমিটির সভাপতি তরিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূর মোহাম্মদকে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।