বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা যোগদানের জন্য আরো এক মাস সময় পাচ্ছেন। নানা জটিলতার মুখে যোগদানের সময় এক মাস বাড়ানো হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রণালয় এবং এনটিআরসিএ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আগামী দুই-একদিনের মধ্যে এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে। এর পরই এটি নির্দেশনা আকারে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) ও এনটিআরসিএ-তে যাবে। পরে এনটিআরসিএ সুপারিশকৃত শিক্ষকদের এসএমএস’র মাধ্যমে জানিয়ে দেবে বলে মন্ত্রণালয় ও এনটিআরসিএ’র দায়িত্বশীল সূত্র গতকাল নয়া দিগন্তকে জানান। আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি এ সময় শেষ হচ্ছে।
মন্ত্রণালয় ও এনটিআরসিএ সূত্রে জানান, বর্ধিত সময় শুধু শিক্ষকদের জন্যই নয়, এ সময় প্রতিষ্ঠানগুলোকেও দেয়া হবে। যাতে তারা (প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠান প্রধানরা) বিগত দিনের ভুল বুঝে, সুপারিশকৃতদের যোগদানের সুযোগ দেন। অন্যথায় অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি ও অনুমোদন এবং গভর্নিং কমিটি বাতিল করা হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের কারণ দর্শানোও হবে না। বর্ধিত সময়ের পর মন্ত্রণালয় অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাবে।
এনটিআরসিএ সারা দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শূন্যপদ/সৃষ্ট পদের চাহিদার ভিত্তিতে গত ২৪ জানুয়ারি ৩৯ হাজার ৩১৭ জন শিক্ষক মেধা তালিকার ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করে। সুপারিশকৃত শিক্ষকদের যোগদানের আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উন্নয়ন বাবদ অর্থ দাবি করাসহ তাদের যোগদানে বাধা প্রদান করা হচ্ছে বলে শত শত অভিযোগ এনটিআরসিএ-তে জমা পড়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) গত ৯ ফেব্রুয়ারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের উদ্দেশে একটি নির্দেশনা জারি করেছে। তাতে জনবল কাঠামো ২০১৮-এর ১৮.১(ঘ) অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এনটিআরসিএ তে শিক্ষক-কর্মচারীর চাহিদা দিলে, উক্ত পদে এনটিআরসিএ কর্তৃক নির্বাচিত/ মনোনীত শিক্ষক/কর্মচারীকে নিয়োগ দিতে হবে। প্যাটার্ন অতিরিক্ত চাহিদা দিলে উক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর শতভাগ বেতনভাতা প্রতিষ্ঠান থেকে নির্বাহ করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে প্রতিষ্ঠান প্রধানের বেতনভাতা স্থগিত-বাতিল করা হবে এবং পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মাউশি এবং এনটিআরসিএ সূত্রে জানা গেছে, সুপারিশকৃত শিক্ষকদের যোগদানের বাধাই শুধু নয়, কারিগরি ও মাদরাসায় সুপারিশকৃত শিক্ষকদের বিধিগত জটিলতার কারণেও অনেকে যোগ দিতে পারছেন না। মাদরাসা শিক্ষকদের বি-এড ডিগ্রি শর্ত থাকায় সুপারিশপ্রাপ্ত মাদরাসার কৃষি বিষয়ের শিক্ষকেরা যোগদান করতে পারছে না।
এনটিআরসিএ সূত্রে জানা গেছে, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষকদের এমপিও নীতিমালায় মাদরাসার কৃষি বিষয়ের শিক্ষকদের বি-এড ডিগ্রি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ কারণে এনটিআরসিএ সুপারিশপ্রাপ্ত দুই শতাধিক কৃষি বিষয়ের শিক্ষক যোগদান করতে পারছেন না। অথচ অন্য কোনো বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বি-এড ডিগ্রি বাধ্যবাধকতা উল্লেখ করা হয়নি।
কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নীতিমালায় এ শর্তটি কারণে মাদরাসার কৃষি বিষয়ের সহকারী শিক্ষকেরা নিয়োগে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন, এ কারণে শর্তকে আপাতত শিথিল করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের কারিগরি শিক্ষা ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো: আলমগীর বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি এ ব্যাপারে একটি সুপারিশ ও প্রস্তাবনা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলেই শর্ত শিথিলের জন্য জিও জারি করা হবে।
সচিব আরো জানান, জিও জারির পর শিক্ষকদের যোগদানের সময় বাড়ানোর সুপারিশ পাঠানো হবে এনটিআরসিএ’র কাছে। এ ব্যাপারে মৌখিকভাবে এনটিআরসিএ-কে যোগদানের সময় বাড়ানোর অনুরোধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি আগেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে বলে আশা করি।