আদালত প্রাঙ্গণ থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ে ঘটনা ‘আবারও সেই জঙ্গি নাটক’ কি না, জনগণের মনে এমন প্রশ্ন জেগেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কী খোঁড়া যুক্তি? স্প্রে করে… আপনারা জঙ্গি, কনভিক্টেড জঙ্গি, তাকে একজন নাকি পুলিশ সদস্য নিয়ে আসছিল। এটা কেমন করে হতে পারে? অসম্ভব ব্যাপার!’
‘সেক্ষেত্রে জনগণের মনে প্রশ্ন জেগেছে, আবারও সেই জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থ করা হচ্ছে কি না। যাতে তাদের আবার ক্ষমতায় টিকে থাকা স্থায়ী হতে পারে, কিছুটা সময় পায়। আমরা জনগণের প্রশ্নটাই তুলে ধরলাম। আমরা বিশ্বাস করি- এসব অশুভ চক্রান্ত থেকে সরকার সরে দাঁড়াবে’, বলেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা গুলি করে নয়ন মিয়াকে হত্যা করতে পারেন, শাওনকে হত্যা করতে পারেন। আর আদালতে আপনাদের জঙ্গি উধাও হয়ে যায়, তখন আপনারা কিছুই করতে পারেন না। আমরা তো আদালতে যাই নিয়মিত, হাজিরা দিতে হয় আমাদের। আমরা তো দেখি চতুর্দিকে পুলিশ। সেখানে এন্ট্রি, এক্সিট সবই নিয়ন্ত্রিত।’
তিনি বলেন, ‘আরেকটা শুরু করেছিল অগ্নিসন্ত্রাস। খুব একটা হালে পানি পায়নি। এটা খুব বেশি নেয়নি মিডিয়া। যে কারণে সেটাকে তারা জোর দিয়ে প্রচার করতে পারছে না।’
‘কিছুদিন হলো জঙ্গি জঙ্গি শুরু করেছে, তারপর উধাও করে দিলো। তারা আবার কারা? অভিজিত হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত, যাদের শাস্তি হয়েছে। মার্কিন নাগরিক… বিষয়টা হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। এটা হতেই পারে না। আজ জনগণের মনে এই প্রশ্ন জেগেছে, কীভাবে আদালত থেকে আসামি ছিনতাই হয়ে যেতে পারে। তাও অভিযুক্ত সাজাপ্রাপ্ত আসামি’, বলেন তিনি।
কুমিল্লা, রাজশাহী ও ঢাকায় বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘোষিত স্থানেই হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।
ঢাকায় গণসমাবেশ নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে করার অনুমতি চেয়ে গত সপ্তাহে ঢাকা মেট্রোপলিটনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছে বিএনপি।
সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি স্পষ্ট করতে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা কথা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই- কুমিল্লায় ২৬ নভেম্বর, রাজশাহীতে ৩ ডিসেম্বর এবং ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশ। এই বিভাগীয় গণসমাবেশগুলোর প্রত্যেকটি উল্লেখিত দিনে একই সময়ে ঘোষিত স্থানেই হবে।’
‘সরকারের উচিত হবে- যদি ন্যুনতম শুভবুদ্ধির উদয় হয়, এই সমাবেশগুলোতে বাধা প্রদান না করা এবং নিজেদের এভাবে একেবারে হাস্যকর অবস্থায় না নিয়ে যাওয়া। যখন তারা বলেন যে, আমরা সুন্দর ব্যবস্থা করছি, সমাবেশকে সমর্থন করছি, সহযোগিতা করছি, তখন লোকে হাসে। মানুষজন তো প্রতিটা খবর রাখে। এখন তো ওই দিন নেই যে, সরকার যা বলে সব বিশ্বাস করতে হবে। এখন সোশ্যাল মিডিয়া দিয়ে মানুষ মুহূর্তের মধ্যে সব খবর পেয়ে যায়’, বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকায় বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তারের ঘটনা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি জানান, গত ২২ আগস্ট থেকে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৯৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ৪ হাজার ৪১২ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে, ১০ হাজার ৬৬৪ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪৪৫ জনকে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘৭টি সমাবেশে জনস্রোত দেখে সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে গোটা দেশে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। যেসব বিভাগে সমাবেশ হয়ে গেছে সেখানে হয়রানি করছে, মিথ্যা মামলা দিচ্ছে।’
‘বাকি ৩টা সমাবেশে যাতে লোকসমাগম না হয়, সেজন্য তারা মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করার কৌশল হিসেবে এখন মহানগরীতে আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালানো হচ্ছে। নেতারা কেউ বাসায় থাকতে পারছেন না’, বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, সদস্য সচিব আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, সদস্য সচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন আজাদ প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।