‘রাশিয়া ও চীনের সামনে বিপর্যয়ে ন্যাটো’

সংকটে পড়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক জোট নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন বা ন্যাটো। পাশাপাশি রাশিয়া ও চীনের নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রগুলো। গত শুক্রবার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলফার সেন্টার থেকে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। রিপোর্টে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্ত নেতৃত্বের অনুপস্থিতির সুযোগে রাশিয়া ও চীন ন্যাটোর শক্তিকে দুর্বল দিচ্ছে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলফার সেন্টার থেকে প্রকাশিত এই রিপোর্টটি লিখেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক দুই রাষ্ট্রদূত ডগলাস লিউট ও নিকোলাস বার্নস। সম্প্রতি জার্মানিতে অনুষ্ঠিত মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে এই রিপোর্টটি পড়ে শোনানো হয়।

নিরাপত্তা সম্মেলনে পড়ে শোনানো রিপোর্টে বলা হয়, ভিতর এবং বাইরে থেকে সৃষ্ট কঠোর কিছু চ্যালেঞ্জের কারণে ন্যাটো বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। ন্যাটোর ভিতর থেকে সৃষ্ট সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের বিষয়ে তারা বলেন, সামরিক জোট ন্যাটোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দোদুল্যমনতা ও স্ববিরোধীতা, জোটভূক্ত ইউরোপীয় দেশগুলোর স্বল্প প্রতিরক্ষা ব্যয় এবং যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে দীর্ঘসূত্রীতার কারণে জোটটি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে।

রিপোর্টে রাশিয়ার সামরিক শক্তি এবং চীনের অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত শক্তিকে ন্যাটোর জন্য বড় হুমকি বলে চিহ্নিত করা হয়। রিপোর্টে দাবি করা হয়, ন্যাটোর সবচেয়ে বড় সামরিক শক্তিসম্পন্ন প্রতিবেশী রাশিয়া এখনো তাদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। মস্কো আন্তর্জাতিক রীতিনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর পাশাপাশি বিভিন্ন উস্কানিমূলক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত এবং ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোতে সাইবার হামলা পরিচালনা করছে বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে রাশিয়ার সাথে আলোচনা বা যেকোনো কর্মসূচীর ব্যাপারে দুটি পথ (একটি আলোচনা ও অন্যটি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি) খোলা রাখতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে প্রকাশিত এই রিপোর্টে পরামর্শ দেয়া হয়। পাশাপাশি যদি যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে, সেক্ষেত্রে কি কি ঝুঁকি সামনে আসতে পারে সেগুলো নির্ণয় করতেও পরামর্শ দেয় সংস্থাটি।

রিপোর্টে আরো বলা হয়, বেশিরভাগ ন্যাটো সদস্য ও মিত্র দেশের জন্য চীন সরাসরি সামরিক হুমকি হিসেবে কাজ না করলেও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ন্যাটো ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক প্রতিযোগী হিসেবে দ্রুত প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে বেইজিং। পাশাপাশি আধুনিক সামরিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও নেতৃত্ব দিতে চাচ্ছে চীন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এই দুই রাষ্ট্রদূত বলেন,‘চীনের অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত শক্তি এবং শিল্প-সংক্রান্ত গুপ্তচরবৃত্তির দিকে ইউরোপীয় দেশগুলোর আরো মনোযোগ দেয়া দরকার। পাশাপাশি আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোর প্রযুক্তি খাতে চীনা বিনিয়োগের ব্যাপারে আরো বিধিনিষেধ আরোপ করা উচিত।’

উল্লেখ্য, নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন বা ন্যাটো বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক জোট। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার ২৯টি দেশ এই সামরিক জোটে সদস্য হিসেবে রয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব প্রতিহত করাসহ সমকালীন বাস্তবতায় ১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে এখনো এই জোটের নেতৃত্বে রয়েছে দেশটি।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top