সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও এলাকাবাসী।
শনিবার সোনাগাজী পৌর শহরের জিরো পয়েন্টে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে এ মানবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় অনেকে কাপনের কাপড় গায়ে বেঁধে আহাজারী করতে থাকেন।
মানববন্ধনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই প্রধান বনজ কুমারের বিচার বিভাগীয় শাস্তির দাবি করেন আন্দোলনকরীরা।
তাদের দাবি, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে নির্দোষ ১৬ জন মানুষকে বনজ কুমার মিডিয়া ড্রায়ালের মাধ্যমে মিথ্যা কাল্পনিক ঘটনা সাজিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আসামি করেন। আত্মহত্যাকে হত্যা বলে চালিয়ে দেয়া হয়। উক্ত মামলার বিচার বিভাগীয় পূর্ণ তদন্ত দাবি করেন আন্দোলনকারীরা।
মানবন্ধনে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়। এতে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর কমিশনার নুরনবী লিটন।
তিনি বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রুহুল আমীন ও সাবেক কমিশনার মাকসুদ সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রের শিকার। তারা মডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে সোনাগাজী দুর্নীতিবাজ পৌর মেয়র খোকনের ষড়যন্ত্রে শিকার। তিনি নির্বাচনের আগে তার পথের কাঁটা সরানোর জন্য টাকা খরচ করে তার বিরোধী নিরপরাধ লোকদের ফাঁসিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন লিটন।
সোনাগাজী উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিন গনি মামলার বিচার বিভাগীয় পূর্ণ তদন্তের দাবি করেন। তিনি বলেন, এ মামলায় মিথ্যা, সাজানো ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ১৬ আসামিকে সাজা দেয়া হয়েছে।
মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন- পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবু তৈয়ব বাবুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শামছুল আরেফিন, সোনাগাজী ৭ নম্বর ওয়ার্ড পৌর কমিশনার ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জামাল উদ্দিন নয়ন, ৪ নম্বর ওয়ার্ড পৌর কমিশনার ও যুবলীগ নেতা বেলাল হোসেন।
মানববন্ধনে শিক্ষক আফসার উদ্দিনের স্ত্রী সুরাইয়া হোসেন ইফাত বলেন, ‘নুসরাতের পরিবার ন্যায় বিচার পেলে আমরা কেন ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবো। তারা এ রায়কে ফরমায়েশী রায় উল্লেখ করে উচ্চ আদালতে ন্যায় বিচার আশা করেন। গত ৬ এপ্রিল আমার স্বামী কলেজ রোড়ে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়ানোর সময় নুসরাত অগ্নিদগ্ধ হয়। কলেজ রোড়, জিরো পয়েন্ট, মাদরাসা এলাকাসহ পুরো পৌর শহর সোনাগাজী মডেল থানা ও পৌরসভার সিসি ক্যামেরার আওতায় ছিল। ঘটনার পরে গত ১০ এপ্রিল পিবিআই সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে যায়।’
তিনি আরো বলেন, ‘মামলার বিচার চলাকালীন সময়ে আমাদের আইনজীবী ওই দিনের সিসিটিভি ফুটেজ তলবের জন্য আবেদন করলেও সেটা পাওয়া যায়নি। সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব করে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে আমার নির্দোষ স্বামীকে ফাঁসিয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ হাজির করা হোক। যদি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় আমার স্বামী মাদরাসা গেটে পাহারায় ছিলেন, তবে যেকোনো দণ্ড আমরা মাাথা পেতে নিব। আদালতে ৮৭ জন সাক্ষীর কেউ আমার স্বামীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়নি। নুসরাতের পরিবারে যারা সাক্ষী দিয়েছে তারাও কোনো সাক্ষ্য দেয়নি। নুসরাতের অডিও-ভিডিও জবানবন্দিতে আমার স্বামীর নাম বলেনি। তারপরও আদালত আমার স্বামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। আমরা এ রায় মানি না।‘
মানববন্ধনে অংশগ্রহনকারী শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান সানজিদা, সাদিয়া হোসেন, সুমাইয়া আক্তার, সাদিয়া জাহান রোজা, আমজাদ হোসেন সুমন ও শাহাদাত হোসেন জুয়েল বলেন, গত ৬ এপ্রিল নুসরাত যখন অগ্নিদগ্ধ হয় তখন আফসার স্যার কলেজ রোড়ে আমাদের প্রাইভেট পড়াচ্ছিলেন। ওই সময় আমরা খবরটি জানতে পারলে স্যার আমাদের ছুটি দিয়ে বাসায় চলে যান। থানার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে তার প্রমাণ মিলবে। সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব করে আমাদের স্যারকে ফাঁসানো হয়েছে। ঘটনার সময় স্যার আমাদের সামনে ছিলেন। তিনি ওই সময় গেইট পাহারা দেয় কিভাবে? আমরা আমাদের নির্দোষ স্যারের মুক্তি চাই। এতদিন প্রশাসনের ভয়ে আমরা মুখ খুলতে সাহস করিনি। এখন নির্দোষ ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড হওয়াতে আমারা মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছি।’
মানবববন্ধনে বাবার মুক্তি চেয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে হাজির ছিলেন আফসার উদ্দিনের শিশু সন্তান আরদিনা আফসার আলিফ ও আহনাফ বিন আফসার ওয়াসিম। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের বাবাকে ফিরিয়ে দেয়ার আবেদন জানান।
সোনাগাজী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি,তদন্ত) আবুল কাসেম এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি লন্ডন প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ড ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামি নিয়ে একটি প্রতিবেদন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। যেখানে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের অন্যায়ভাবে মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রমূলক ফাসিঁর বিষয়টি তথ্য বহুল প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এরপর থেকে সোনাগাজী আবারো আলোচনায়। এতে আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠছে সোনাগাজী।
এর আগে ২৪ আক্টোবর ২০১৯ সালে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্রুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালত চাঞ্চল্যকর এ মামলায় ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডে আদেশ দেন। প্রত্যক আসামিকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেন। মাত্র সাড়ে ছয় মাসের মাথায় এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।