সব রকম আত্মরক্ষার অধিকার ভারতের আছে : যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন বলেছেন, আত্মরক্ষার যে কোনো অধিকারে ভারতের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে। গত শুক্রবার তিনি ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডুভালকে এ কথা জানান। একই সাথে তিনি পাকিস্তান থেকে জয়েশ-ই মোহাম্মদসহ সব ধরনের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে নির্মূল করতে ওয়াশিংটন-দিল্লি এক সাথে কাজ করারও প্রতিশ্রুতি জ্ঞাপন করেন।

শুক্রবার এক টেলিফোন আলাপে এসব কথা বলেন বোল্টন। গত বৃহস্পতিবার ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের পুলওয়ামায় সিআরপি কনভয়ে আত্মঘাতি হামলায় ৪৯ জন নিহতের ঘটনায় সহমর্মিতা জানাতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ ফোন করা হয়। এ সময় তারা এসব সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সেগুলো সরানোর ব্যাপারেও আলাপ করেন।

অজিত ডুভাল জানান, সীমান্তের ওপার থেকে চালানো এসব হামলার প্রতিরোধের ব্যাপারে ওয়াশিংটন দিল্লিকে সব ধরনের সহযোগিতার কথা জানিয়েছে।

এদিকে বোল্টন পিটিআইকে জানান, আমি দিল্লির সঙ্গে এ বিষয়ে দুইবার কথা বলেছি। আমি তাদেরকে জানিয়েছি, যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই এ ধরনের হামলার বিরোধী এবং এ তীব্র নিন্দা জানায়। একই সময়ে তিনি এ-ও জানান, আমরা পাকিস্তানকে এ ধরনের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সমর্থন দেয়া শেষ করতে আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে তাদের কাছে পাকিস্তান সন্ত্রাসীদের স্বর্গে পরিণত না হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও পাকিস্তানের প্রতি একই ধরনের আহ্বান জানিয়ে ভারতের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমরা সব সময় এ ধরনের হামলা বিরোধী।

হোয়াইট হাউজ থেকে ইসলামাবাদের প্রতি পাঠানো এক বার্তায়ও এ ধরনের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, পাকিস্তানকে এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে সন্ত্রাসীরা দেশটিকে অপরাধ স্বর্গে পরিণত করতে না পারে।

এর আগে ওই হামলার ব্যাপারে পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে ভারতকে দুর্বল করা যাবে না। বরং এর হামলার জবাব দিতে সেনাবাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে।

ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের পুলওয়ামায় সিআরপি কনভয়ে আত্মঘাতি হামলাকে প্রতিবেশী দেশের ‘অনেক বড় ভুল’ বলে আখ্যা দিয়ে দেন মোদি। এ সময় তিনি নিজেদের প্রতিবেশী দেশ ও সেখানকার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রতি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, ‘তাদেরকে এর জন্য কড়া মূল্য দিতে হবে।’

মোদি আরো বলেন, ভারতের মানুষ এখন ‘পাল্টা জবাব’ চান। আর সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে নিরাপত্তা বাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দেয়া হয়েছে।

মোদি তার ভাষণে অবশ্য পাকিস্তানের নাম কোথাও উল্লেখ করেননি। তবে তিনি বারবার যে প্রতিবেশী দেশের কথা উল্লেখ করছেন, তাতে আর কারো বোঝার বাকি নেই, প্রতিবেশী দেশ কোনটি? মোদি বলেন, ‘পুরো বিশ্বে একঘরে হয়ে পড়া আমাদের প্রতিবেশী দেশটি যদি এ কথা ভেবে থাকে, ষড়যন্ত্র করে ভারতে অস্থিরতা তৈরি করতে পারবে, তা হলে তাদের এ স্বপ্ন ছেড়ে দেয়াই উচিত।

পাকিস্তান অবশ্য এ হামলার দশ ঘণ্টা পরে একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে নিয়মমাফিক বিবৃতি ও নিজেদের দায় অস্বীকার ছাড়া আর তেমন কোনো কিছু জানানো হয়নি। ভারতকে অবাক করে চীনও প্রায় একই কাজ করেছে। সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানালেও তাতে পাকিস্তানকে কোনোভাবে দায়ী করা হয়নি। ফলে প্রত্যাশিত হলেও ক্ষুব্ধ হয়েছে ভারত। কারণ ভারত আশা করেছিল, কাশ্মিরে চালানো এ আত্মঘাতী হামলার কড়া প্রতিবাদ জানাবে সব দেশ।

বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলওয়ামায় সন্ত্রাসী হামলায় গোয়েন্দা-ব্যর্থতার পাশাপাশি মোদী সরকারের সার্বিক কাশ্মীর নীতি এবং উপত্যকায় সন্ত্রাসবাদ দমনে ব্যর্থতার দিকেও আঙুল উঠেছে।

ভারত অবশ্য এ মুহূর্তে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক দুই ধরনের পদক্ষেপকেই সামনে রাখছে। কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় পাকিস্তানকে এক ঘরে দিতে চাইছে দিল্লি। পাকিস্তান হাইকমিশনার সোহেল মাহমুদকে ডেকে পাঠিয়ে কড়া প্রতিবাদনও জানিয়েছে তারা।

কিন্তু এ মুহূর্তে সামরিক কোনো পদক্ষেপ নিতে হলে মোদি সরকারকে ভাবতে হবে অনেকবার। কারণ সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের চমকটা পাওয়া গেলেও ওই অভিযানের কার্যকারিতা আসলে কতটুকু ছিল, তা নিয়ে এখনো ভারতবাসী সন্দিহান। কারণ তারপরে উল্লেখযোগ্যহারে সন্ত্রাসী হামলা কমেছে বলে দেখা যায়নি। ফলে শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনীকে দেয়া স্বাধীনতা কিভাবে ব্যবহার হবে তাই হয়তো চিন্তার বিষয় হয়ে উঠবে।

সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top