মুশফিকুর রহিমের ডাবল সেঞ্চুরি

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেই অনন্য এক মাইলফলক স্পর্শ করলেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশের দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ওয়ানডেতে ২শ’ ম্যাচ খেলার রেকর্ড স্পর্শ করলেন মুশি। এর আগে বাংলাদেশের হয়ে শুধুমাত্র বর্তমান ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাই ২শ’ ম্যাচ খেলেছেন।

২০০৬ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচে ওয়ানডে অভিষেক হয় মুশফিকের। এরপর উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে দলের অপরিহার্য খেলোয়াড় হয়ে উঠেন তিনি। ২০১১ সালে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০ দলের অধিনায়কত্ব পান মুশফিক। ২০১৭ সাল পর্যন্ত টেস্ট দলের অধিনায়ক থাকলেও, ২০১৪ সালে ওয়ানডে ও টি-২০ দলের দায়িত্ব থেকে মুশফিককে সরিয়ে দেয়া হয়।

তারপরও দলের ব্যাটিং লাইন-আপের মেরুদন্ড মুশফিক। এখন পর্যন্ত ২০০ ওয়ানডেতে ৬টি সেঞ্চুরিতে ৫৩৭৫ রান করেছেন তিনি। ব্যাটিং গড়- ৩৪ দশমিক ৬৭।

এছাড়াও ৬৬টি টেস্টে ৪০০৬ ও ৭৭টি টি-২০তে ১১৩৮ রান করেছেন মুশফিক।

গাপটিলের টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে সিরিজ হারলো বাংলাদেশ
ওপেনার মার্টিন গাপটিলের টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে নিউজিল্যান্ডের কাছে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ হারের স্বাদ পেয়ে গেল সফরকারী বাংলাদেশ। গাপটিলের ১১৮ রানের সুবাদে আজ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৮ উইকেটে হারে টাইগাররা। এই জয়ে এক ম্যাচ বাকী রেখেই সিরিজ জিতে নেয় কিউইরা।

প্রথম ম্যাচেও বাংলাদেশকে ৮ উইকেটে হারিয়েছিলো নিউজিল্যান্ড। আজ টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ৪৯ দশমিক ৪ ওভারে ২২৬ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। জবাবে ৮৩ বল বাকী রেখেই ম্যাচ জিতে নেয় নিউজিল্যান্ড।

ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্বান্ত নেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। ব্যাট হাতে নেমে এবারও ব্যর্থ বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। ১৬ রানের মধ্যেই বিদায় নেন তারা। আগের ম্যাচের মতই তামিম ৫ ও লিটন ১ রান করে ফিরেন। দু’জনে যথাক্রমে হেনরি ও বোল্টের শিকার হন।

দু’ওপেনারের বিদায়ের মাঝে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত শুরু করেছিলেন তিন নম্বরে নামা সৌম্য সরকার। আগের ম্যাচেও চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ের সময়ে নিউজিল্যান্ড বোলারদের পাল্টা আক্রমন চালিয়েছিলেন সৌম্য। ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় রানের চাকা সচল রেখে ২২ বলে ৩০ রান করে আউট হন তিনি। আর আজকের ম্যাচে ৩টি বাউন্ডারিতে নিজের পথচলা শুরু করেন সৌম্য ২৩ বলে ২২ রান করে ডি গ্র্যান্ডহোমের বলে আউট হন।

দলীয় ৪৮ রানে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে সৌম্যর বিদায় ঘটে। এরপর প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ মিথুন। সৌম্যর সাথে ৩২ রানের জুটির পর মিথুনের সাথে ৩৩ রান দলকে দেন বাংলাদেশের জার্সিতে ২শতম ম্যাচ খেলতে নামা মুশি। মুশফিককে ২৪ রানে থামিয়ে দিয়ে এই জুটিতে ভাঙ্গন ধরান নিউজিল্যান্ডের পেসার লোকি ফার্গুসন।

ছয় নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে এবারও ব্যর্থ মিডল-অর্ডারের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। গেল ম্যাচে ১৩ রানের পর এবার ৭এ থেমে যান তিনি। গেল সাত ম্যাচে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি মাহমুদুল্লাহ। তার বিদায়ে ৯৩ রানে পঞ্চম উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।

এ অবস্থায় বাংলাদেশকে লড়াইয়ে ফেরান মিথুন ও সাব্বির রহমান। নেপিয়ারের প্রথম ওয়ানডেতে ৬২ রান করা মিথুন এবারও ত্রানকর্তার ভূমিকায় অবর্তীণ হন। দলের প্রয়োজনীয় সময়ে ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠার চেষ্টা করেন সাব্বির। তাই দু’জনের ব্যাটিং দৃঢ়তায় দেড়শ ছাড়িয়ে ভালো অবস্থায় পৌঁছানোর পথে হাটচ্ছিলো বাংলাদেশ। এসময় ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন মিথুন। তবে এবারও হাফ-সেঞ্চুরির পর নিজের ইনিংসটি বড় করতে পারেননি মিথুন। ৭টি চার ও ১টি ছক্কায় ৬৯ বলে ৫৭ রান করা মিথুন শিকার হন এ্যাস্টলের। সাব্বিরের সাথে ৭৫ রানের জুটিতে তার অবদান ছিলো ৪৩ বলে ৪২ রান। এই জুটি মোকাবেলা করেন ৮২ বল।

দলীয় ১৬৮ রানে মিথুনের বিদায়ের পর লোয়ার-অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানের ছোট-ছোট ইনিংসের সাথে সাব্বিরের ৬৫ বলে ৪৩ রানে এবারও সম্মানজনক স্কোরে পৌছাতে সমর্থ হয় বাংলাদেশ।শেষ পর্যন্ত ৪৯ দশমিক ৪ ওভারে ২২৬ রানে অলআউট হয় টাইগাররা। প্রথম ওয়ানডেতে ২৩২ রানে অলআউট হয়েছিলো বাংলাদেশ। বল হাতে এ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ফার্গুসন ৩টি, অ্যাস্টল-নিশাম ২টি করে উইকেট নেন।

জয়ের জন্য ২২৭ রানের টার্গেটে এবার শুরুটা খুব বেশি ভালো করতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। আগের ম্যাচের ১০৩ রানের জুটি গড়া কিউইদের দুই ওপেনার গাপটিল ও হেনরি নিকোলস এবার ৪৫ রানের বেশি যেতে পারেননি। নিকোলসকে তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। ২৩ বলে ১৪ রান করেন নিকোলস।

এরপর দলের হাল ধরেন গাপটিল ও অধিনায়ক উইলিয়ামসন। বাংলাদেশ বোলারদের বিপক্ষে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেন তারা। ফলে শতরানে পৌছাতে ১৮তম ওভার লাগে নিউজিল্যান্ডের। এসময় মারমুখী মেজাজে হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৬৬ রানে দাঁড়িয়ে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান গাপটিল। ৫৪ বল মোকাবেলা করে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩৫তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়েছিলেন তিনি।

মারমুখী মেজাজে থাকায় ক্যারিয়ারের ১৬তম সেঞ্চুরি পেতে খুব বেশিক্ষন অপেক্ষা করতে হয়নি গাপটিলকে। ৭৬তম বলেই তিন অংকের ঘরে পা রাখেন গাপটিল। সেঞ্চুরি করে ব্যক্তিগত ১১৮ রানে থামেন প্রথম ওয়ানডেতে অপরাজিত ১১৭ রান করা গাপটিল। মুস্তাফিজের শিকার হওয়ার আগে ৮৮ বলের ইনিংসে ১৪টি চার ও ৪টি ছক্কা তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে উইলিয়ামসনের সাথে ১২৭ বল মোকাবেলা করে ১৪৩ রান যোগ করেন গাপটিল। এই জুটিতে গাপটিল ৮৮ ও উইলিয়মসন ৪৬ রান অবদান রাখেন।

গাপটিল-উইলিয়ামসনের এই জুটিতে জয়ের ভিত পেয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। মুস্তাফিজের বলে গাপটিল যখন ফিরেন তখন নিউজিল্যান্ডের জয়ের জন্য দরকার ছিলো ৩৯ রান। এই প্রয়োজনীয় রান তুলে নেন উইলিয়ামসন ও রস টেইলর। ফলে ৮৩ বল বাকী রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় নিউজিল্যান্ড। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩৭তম হাফ-সেঞ্চুরি করা উইলিয়ামসন ৬৫ রানে ও টেইলর ২১ রানে অপরাজিত ছিলেন। উইলিয়ামসন-টেইলর ৩টি করে বাউন্ডারি মারেন। মুস্তাফিজ ৪২ রানে ২ উইকেট নেন। এ ম্যাচেও সেরার খেতাব পান নিউজিল্যান্ডের গাপটিল।

আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি ডানেডিনে অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top