রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচর যেন আরেক পৃথিবী

মায়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নিপীড়ন থেকে বাঁচতে সমুদ্র পাড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়াতে সব মিলিয়ে অন্তত ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে রোহিঙ্গাদের চাপ কমাতে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার। এ পর্যন্ত ১৩ ধাপে কক্সবাজার থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরে পৌঁছেছে ২৯ হাজার ১১৬ জন রোহিঙ্গা। কিন্তু ভাসানচরে যেসব রোহিঙ্গাদের প্রেরণ করা হয়েছে তাদের  কারও বাবা-মা, কারও ভাইবোন, কারও ছেলেমেয়ে এখনও কক্সবাজারের উখিয়াতেই রয়ে গেছে। যেকারণে, পৃথিবীতে বেঁচে থেকেও জীবিত প্রিয়জনদের এক পলক না দেখতে পারার বেদনায় কাতর অধিকাংশ রোহিঙ্গা। আর সেজন্য কয়েকদিন পরপর ভাসানচর থেকে উকিয়া পালিয়ে যাওয়ার সময় ধরা পড়ছেন রোহিঙ্গারা।

চট্টগ্রাম জেলা বিশেষ শাখার (ডিএসবি) উপ-পরিদর্শক (এসআই) তানভীর আহম্মেদ  জানান,গত ৮ জুলাই দুপুরে ও সন্ধ্যায় নোয়াখালীর ভাসানচর থেকে দালালকে টাকা দিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য পালিয়ে যায় রোহিঙ্গারা। দালালরা তাদের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের সুপারডাইক এলাকায় নামিয়ে পালিয়ে যায়। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানায়, উন্নত বাসস্থান ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা সত্ত্বেও ভাসানচরে তাদের ভালো লাগছিল না। তাদের কারও বাবা-মা, কারও ভাইবোন, কারও ছেলেমেয়ে উখিয়ায় রয়েছে আর তারা ভাসানচরে। পরিবার ও আত্মীয়স্বজন ছাড়া ভাসানচরে থাকা তাদের জন্য কষ্টকর। তাই তারা কুতুপালংয়ের উদ্দেশ্যে দালালচক্রের মাধ্যমে পালিয়ে যাচ্ছিল।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রথমধাপে ৩১ মে তিন দালালসহ ১০ জন, দ্বিতীয় ধাপে ২২ জুন ১৪ জন, তৃতীয় ধাপে ১১ জুলাই ১৮ জন, চতুর্থ ধাপে ২০ জন এবং ৯ সেপ্টেম্বর ৯ জন, চলতি বছরের ৮ জুলাই ২২ রোহিঙ্গাকে মিরসরাই উপকূল থেকে আটক করেন মিরসরাই, জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ ও শিল্পনগরে দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা।

মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন জানান, রোহিঙ্গারা মূলত কক্সবাজারে থাকা তাদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের কাছে যাওয়ার জন্য পালিয়ে আসে। ভাসানচর থেকে সবচেয়ে সহজরুট মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল। মহাসড়কও কাছে। আমাদের টহল টিম সজাগ থাকায় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আটক করতে সক্ষম হচ্ছে।

শরণার্থী হিসেবে কুতুপালং রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পের বাসিন্দা আবুল করিম জানান,  শরণার্থী জীবন নিয়ে রোহিঙ্গারা খুশি নয়। পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিয়ে নিজ দেশে ফিরে গিয়ে তারা স্বাধীন জীবন উপভোগ করতে চান।

করিম আরও জানান, একটি পাখিকে খাঁচায় বন্দি করে রাখলে যা হয় তাদের অবস্থাও তাই। খাঁচা মুক্ত পাখি হতে চান তারা। উড়তে চান আকাশে। কিন্তু কবে হবে তাদের মুক্ত জীবন?

Share this post

scroll to top