পতিতাবৃত্তিতে রাজি না হওয়ায় সঙ্গীদের নিয়ে নববিবাহিতা স্ত্রীকে ধর্ষণ শেষে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। ঘটনাটি কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার জারইতলা ইউনিয়নের হাফসরদিয়া গ্রামের। এ ঘটনায় বুধবার ভোরে স্বামীসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, জারইতলা ইউনিয়নের হাফসরদিয়া গ্রামের মৃত রাজু মিয়ার ছেলে লালচান পাশের গ্রামের পিতৃহীন এক মেয়েকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে বিকৃত রুচির লালচান স্ত্রীকে দিয়ে পতিতাবৃত্তি ও অসামাজিক কার্যকলাপ করানোর চেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন। কিন্তু নানা কৌশলে গৃহবধূ নিজেকে রক্ষা করেন। এ নিয়ে কিছুদিন আগে এলাকায় সালিশ দরবার হয়। পরে স্ত্রী তার নানার বাড়িতে বসবাস করতে থাকেন।
সোমবার (২৭ জুন) সন্ধ্যায় লালচান শশুরবাড়িতে গিয়ে স্ত্রীর মামা ও স্বজনদের হাতে পায়ে ধরে কান্নাকাটি করে বলে এ রকম অন্যায় তিনি আর করবেন না। স্ত্রীর সাথে সুন্দরভাবে জীবনযাপন করবেন। লালচানের কথায় সরল বিশ্বাসে মেয়ের বাবার ও নানার বাড়ির লোকজন তার হাতে মেয়েটিকে দিয়ে দেন। মেয়েটি কান্নাকাটি করে বাবার বাড়ি উত্তর রসুলপুর গ্রাম থেকে স্বামীর সাথে শশুরবাড়ি হাফসরদিয়া গ্রামের পথে রওনা হন। রাত ৮টার দিকে শাহপুর মোড়ে পৌঁছালে স্ত্রীর মুখে গামছা বেঁধে তাকে রাস্তার পাশে পতিত জমিতে নিয়ে যান লালচান। পরে স্বামী লালচান ও তার সাত-আটজন সঙ্গী মিলে তাকে রাতভর ধর্ষণ করে অজ্ঞান অবস্থায় মাঠে ফেলে রেখে যান।
মঙ্গলবার সকালে স্থানীয়রা মেয়েটিকে গুরুতর অসুস্থ ও বিবস্ত্র অবস্থায় দেখতে পায়। পরে তাকে উদ্ধার করে নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই বধূর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে তিনি তার স্বামীসহ ঘটনায় জড়িত পাঁচজনের নাম বলে যান।
এ ঘটনায় বুধবার ভোরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে স্বামী লালচান মিয়াসহ (৩১) চারজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার হওয়া অন্য তিনজন হচ্ছেন রন্টু চৌকিদার (৪০), নাসিরুদ্দীন (৩৮) ও শরীফ মিয়া (৩২)।
এ ঘটনায় নিহত গৃহবধূর মামা জাহাঙ্গীর আলম স্বামী লালচান মিয়াসহ সাতজনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাত পরিচিত তিন-চারজনকে আসামি করে বুধবার নিকলী থানায় মামলা করেন।
এ ব্যাপারে নিকলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ মনসুর আলী আরিফ জানান, গৃহবধূ মারা যাওয়ার আগে পুলিশের কাছে দেয়া জবানবন্দিতে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত পাঁচজনের নাম জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে রনি মিয়া ছাড়া বাকি চারজনকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেছে। রনি মিয়াসহ মামলার অন্য আসামিদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।