মোবাইল নম্বর পোর্টেবেলিটি বা এমএনপি সেবা চালুর মাত্র চার মাসে নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর পরিবর্তন করেছেন এক লাখ ৩৩ হাজার ৬২১ জন গ্রাহক। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অপারেটর পরিবর্তন করেছেন দেশের শীর্ষ টেলিকম অপারেটর গ্রামীণফোন গ্রাহকেরা। অপারেটর পরিবর্তনের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলালিংক। অন্য দিকে সবচেয়ে বেশি গ্রাহক পেয়েছে দ্বিতীয় শীর্ষ অপারেটর রবি। এ ছাড়া গ্রাহকদের অপারেটর পরিবর্তনে সবচে বেশি বাধা দিয়েছে বাংলালিংক। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কমিশন (বিটিআরসি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।
এর আগে গ্রাহকদের স্বার্থ বিবেচনা করে গত বছর ১ অক্টোবর দেশে প্রথমবারের মতো এমএনপি সেবা চালু হলেও তার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় ২৪ অক্টোবর। ফলে আগের নম্বর ঠিক রেখে এক অপারেটরের গ্রাহক অন্য অপারেটরে যেতে পারছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ সেবা চালু আছে। শুরুতে অপারেটর পরিবর্তনের খরচ ১৫৮ টাকা থাকলেও বর্তমান সরকার টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পরই এমএনপির খরচ কমিয়েছে। বর্তমানে অপারেটর বদলে গ্রাহকের খরচ ৫৭ টাকা ৫০ পয়সা। এর মধ্যে ৫০ টাকা এমএনপির ফি বা মাশুল, মাশুলের ওপর ১৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট সাড়ে সাত টাকা। আর সিম পরিবর্তনের কর ১০০ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। গত ১৩ জানুয়ারি এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
বিটিআরসির গত ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, দেশের শীর্ষ অপারেটর গ্রামীণফোনের গ্রাহক সাত কোটি ২৭ লাখ ৩২ হাজার। রবির চার কোটি ৬৮ লাখ ৮৬ হাজার, বাংলালিংকের তিন কোটি ৩৫ লাখ ১৮ হাজার এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান টেলিটকের ৩৮ লাখ ৫৪ হাজার গ্রাহক রয়েছে। এসব গ্রাহকের বিপরীতে গ্রামীণফোনের স্পেক্ট্রাম আছে ৩৭ মেগাহার্টজ, রবির ৩৬ দশমিক ৫ মেগাহার্টজ ও বাংলালিংকের ৩০ দশমিক ৬ মেগাহার্টজ। রবি ও বাংলালিংকের গ্রাহক যোগ করলে যে গ্রাহক দাঁড়ায় গ্রামীণফোনের একারই গ্রাহক প্রায় তার সমান। অথচ তাদের স্পেক্ট্রাম প্রায় অন্যদের সমান।
বিটিআরসির সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, এমএনপি চালু হওয়ার পর গ্রামীণফোনের ৬২ হাজার ৩১৭ জন গ্রাহক অন্য অপারেটরে চলে গেছেন। আবেদনের পর বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন ৩৯ হাজার ৮৫৭ জন। আর অন্য অপারেটর থেকে গ্রামীণফোনে এসেছেন ১২ হাজার ৩৪৬ জন।
দ্বিতীয় শীর্ষ অপারেটর রবি থেকে অন্য অপারেটরে গেছেন ২৩ হাজার ৯১১ জন। এ সময় অন্য অপারেটরে যেতে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন ১৪ হাজার। অন্য দিকে অন্য অপারেটর থেকে রবিতে এসেছেন সর্বোচ্চ ৯৩ হাজার গ্রাহক।
তৃতীয় শীর্ষ অপারেটর বাংলালিংক পরিবর্তন করে অন্য অপারেটরে গেছেন ৪৫ হাজার গ্রাহক। অপারেটর পরিবর্তনে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন ৪৪ হাজার গ্রাহক। বাধাপ্রাপ্তির দিক থেকে এটি সর্বোচ্চ। বিপরীতে অপারেটর পরিবর্তন করে বাংলালিংকে এসেছেন ২৫ হাজার গ্রাহক।
এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় অপারেটর টেলিটক ছেড়েছেন দুই হাজার ৩০১ জন গ্রাহক। আর টেলিটকে এসেছেন দুই হাজার দুইজন গ্রাহক।
এ দিকে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সর্বমোট ২৭ হাজার ৪৪৮ জন গ্রাহক এক অপারেটর থেকে অন্য অপারেটরে স্থানান্তরিত হয়েছেন। এর মধ্যে গ্রামীণফোন ছেড়েছেন ১২ হাজার ৬৫৯ গ্রাহক। রবি ছেড়েছেন তিন হাজার ৫০৫ জন, বাংলালিংক ১০ হাজার ৮৩৬ জন ও টেলিটক ছেড়েছেন ৪৪৮ জন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গ্রামীণফোনের হেড অব কমিউনিকেশন সৈয়দ তালাত কামাল নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘গ্রামীণফোন গ্রাহকের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। এমএনপি সেবার মাধ্যমে আমাদের কিছু গ্রাহক এবং অন্য অপারেটরদের কিছু গ্রাহক তাদের পছন্দের নেটওয়ার্ক বেছে নিয়েছেন। গ্রামীণফোনের শক্তিশালী নেটওয়ার্কে গ্রাহকদের স্বাগত জানাতে পেরে আমরা আনন্দিত।’
এমএনপি সেবায় নিজেদের গ্রাহক বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়ে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের হেড অব করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স সাহেদ আলম বলেছেন, ‘আমাদের নেটওয়ার্ক ও সেবার মান প্রতিযোগীদের চেয়ে অনেক উন্নত হওয়ার কারণেই এমএনপির মাধ্যমে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক গ্রাহক রবিকে বেছে নিয়েছেন বলে আমরা মনে করি। গ্রাহকের আস্থার প্রতিদান দিতে নেটওয়ার্ক ও সেবার মান ধরে রাখতে আমরা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করেছি এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘তবে করপোরেট গ্রাহকদের এমএনপি সেবা গ্রহণে এখনো বড় ধরনের জটিলতা রয়ে গেছে। এমএনপি সেবা চালুর পর এখন পর্যন্ত একটি মাত্র করপোরেট প্রতিষ্ঠান সফলভাবে এমএনপি সেবা নিতে পেরেছে। ব্যাংকের ওটিপি সেবা পেতেও সমস্যায় পড়ছেন এমএনপি সেবা নেয়া অনেক গ্রাহক। আমরা আশা করি নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসব সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেবে।