উচ্চফলনশীল নতুন পাঁচটি সরিষার জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক। জীবনকাল ৯০-৯৫ দিনের হওয়ায় আমন ধান চাষের পর একই জমিতে জাতগুলো চাষ করা যাবে। দীর্ঘ পাঁচ বছরের গবেষণায় দেখা যায় জাতগুলোর গড় ফলন হেক্টর প্রতি প্রচলিত অন্যান্য জাতের তুলনায় ৫০- ৮০ শতাংশ বেশি এবং সারাদেশে চাষের উপযোগী। দেশের ভোজ্যতেলের ঘাটতি পূরনও সম্ভব হবে জাতগুলো ব্যাপক হারে চাষ করলে।
সোমবার (২৭ জুন) সকাল ১১ টায় বাকৃবি সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গবেষক দলের প্রধান বাকৃবির কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. আরিফ হাসান খান রবিন।
গবেষক ড. রবিন জানান, দেশে সরিষা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বড় বাঁধা হলো নানান রোগ ও পোকার আক্রমণ যার মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো অলটারনারিয়া ব্লাইট রোগ। এটি একটি ছত্রাকজনিত রোগ। রোগটি এককভাবে তেলবীজের ফলন ৩০-৫০ শতাংশ কমিয়ে দেয়। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে জমির শতভাগ ফসল নষ্ট করে দেয়। নতুন উদ্ভবিত জাতগুলো অলটারনারিয়া ব্লাইট রোগের প্রতি উচ্চমাত্রায় সহনশীল এবং প্রায় ৯৯ শতাংশ প্রতিরোধী। জাতগুলো হলোবাউ সরিষা-৪, বাউ সরিষা-৫, বাউ সরিষা-৬, বাউ সরিষা-৭ এবং বাউ সরিষা-৮। কৃষকরা এ জাতগুলো চাষ করে প্রচলিত জাতের তুলনায় প্রায় দেড় থেকে দুই গুন লভ্যাংশ আয় করতে পারবে। বিগত তিন বছর যাবত বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে প্রকল্পটির গবেষণা চলমান রয়েছে। গবেষণা প্রকল্পটির সঙ্গে উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত ছিলেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান।
সরিষার উপকারিতা সম্পর্কে গবেষক বলেন, সরিষার তেলে আনসেচুরেটেড ফ্যাটি এসিড থাকায় রক্তে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে সরিষার তেল। এছাড়াও ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিডের একটি আদর্শ অনুপাত (২.৫ঃ১) থাকায় এটি স্বাস্থসম্মত।
তিনি আরও জানান, উদ্ভাবিত জাত পাঁচটি ব্রাসিকা জুনসিয়া প্রজাতির অন্তর্ভূক্ত। সরিষার তেলবীজে জাতভেদে ৪০ থেকে ৪৫ ভাগ তেল থাকে। প্রচলিত জাতিগুলোর উৎপাদন দেশের মোট চাহিদার মাত্র ১৫-২০ শতাংশ পূরণ করছে। ভোজ্য তেল আমদানিতে বাংলাদেশকে প্রতিবছর ২ হাজার ১’শ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হয়।
নতুন উদ্ভাবিত জাতগুলো আবাদের মাধ্যমে দেশে ভোজ্যতেলের সংকট অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।
অধ্যাপক ড. আরিফ হাসান খান রবিন নিউজিল্যান্ডের ম্যাসি বিশ্ববিদ্যালয় হতে ২০১১ সালে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তীতে ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় সুনচুন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে পোস্ট ডক্টরেট গবেষণা সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি সরিষা, ধান, গম ও মিষ্টি আলুর উন্নত জাত উদ্ভাবন নিয়ে গবেষণা করছেন। অধ্যাপক রবিন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হতে ২০১৮, ২০২০ এবং ২০২২ সালে ‘সেরা প্রকাশনা এওয়ার্ড’ প্রাপ্ত হন। এছাড়া ২০২২ সালের বাউরেসের বার্ষিক গবেষণা অগ্রগতি কর্মশালায় সেরা ‘প্রবন্ধ উপস্থাপক’ এওয়ার্ড প্রাপ্ত হন।