হাওর, বাওর, নদী ও বিলসহ প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছের ডিম ছাড়ার পর শতকরা ৮০ ভাগ নষ্ট হয়ে যায়। ২০% ডিমে মাত্র ২% মাছের উৎপাদন হয়। মৎস্য বিজ্ঞানীদেরকে এর কারণ নির্ণয় এবং প্রতিকারের উপায় বের করতে হবে। ২০৪১ সালে বর্ধিত জনসংখ্যার আমিষের চাহিদা পুরণের লক্ষ্য নিয়ে নিরাপদ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য মৎস্য বিজ্ঞানীদের কাজ করতে হবে।
রোববার ময়মনসিংহে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) ‘বার্ষিক গবেষণা অগ্রগতি (২০২১-২০২২ ও গবেষণা পরিকল্পনা (২০২২-২০২৩) প্রণয়ন’ শীর্ষক দিনব্যাপী আঞ্চলিক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। স্বাদুপানি কেন্দ্রের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত কর্মশালায় বিএফআরআই মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার শফিকুর রেজা বিশ্বাস। বক্তব্য রাখেন মৎস্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আফতাব হোসেন, বাংলাদেশ কৃষি বিদ্যালয়ের মৎস্য অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আবুল মনসুর মিল্লাত, বিএফআরআই’র সাবেক মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ জাহের, পরিচালক (গবেষণা) ড. খলিলুর রহমান, পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) ড. আনিছুর রহমান, স্বাদুপানি কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. অনুরাধা ভদ্র ও মৎস্য খামারি নিতিশ চন্দ্র দে। কর্মশালায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, মৎস্য অনুষদের বিভাগীয় প্রধান, মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও মৎস্য বিজ্ঞানীহ দুইশো পঞ্চাশ জন খামারি উপস্থিত ছিলেন।
বিভাগীয় কমিশনার শফিকুর রেজা বিশ্বাস বলেন, ২০৪১ সালে বর্ধিত জনসংখ্যার আমিষের চাহিদা পুরণের লক্ষ্য নিয়ে নিরাপদ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য মৎস্য বিজ্ঞানীদের কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ কৃষি বিদ্যালয়ের মৎস্য অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আবুল মনসুর মিল্লাত বলেন, হাওর, বাওর, নদী ও বিলসহ প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছের ডিম ছাড়ার পর শতকরা ৮০ ভাগ নষ্ট হয়ে যায়। ২০% ডিমে মাত্র ২% মাছের উৎপাদন হয়। মৎস্য বিজ্ঞানীদেরকে এর কারণ নির্ণয় এবং প্রতিকারের উপায় বের করতে হবে। এতে সফল হলে ১৫ থেকে ২০ বছর পর প্রাকৃতিক জলাশয়ে আবার মাছের প্রাপ্যতা নিশ্চিত হবে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, মিঠাপানি ও সাগরে প্রায় আটশো প্রজাতির মাছ রয়েছে। চাষাবাদে আমাদের প্রজাতির সংখ্যা বাড়াতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সাগর জয়ের পর প্রাথমিক গবেষণা শুরু হয়েছে। মাছের উৎপাদন বাড়াতে হলে সাগরের মাছ নিয়েও ব্যাপক গবেষনা করতে হবে। এজন্য বিষয় ভিত্তিক পড়াশোনা ও গবেষণা জোরদার করতে হবে।
তিনি বলেন, মিঠাপানিতে ২৬০ প্রজাতির মাছ রয়েছে। এরমধ্যে বড়জোর ৩০/৩৫টি মাছ মাঠ পর্যায়ে চাষ হচ্ছে। বাকী মাছগুলো এখনো চাষাবাদের বাইরেই রয়েছে। ২০৪১ সালে মাছের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯০ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে মাছের উৎপাদন হচ্ছে ৪৬ লাখ মেট্রিক টন। সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ক্ষেত্র তৈরি এবং সময়ের চাহিদা পুরণে অভিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে বৃহত্তর পরিসরে কাজ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ফসল উৎপাদনে কীটনাশক ও রাসায়নিক ব্যবহারে মাছের উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে, অপরদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে দিনদিনই উন্মুক্ত জলাশয়ও সংকুচিত হচ্ছে। তাই সাগরের দিকে আমাদের নজর দিতেই হবে। মাছের উৎপাদন বাাড়তে হলে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।