নেত্রকোনায় সার্বিকভাবে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বেশিরভাগ উপজেলাতে পানির অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। তবে এখনও বাড়ি ফেরার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। ৩২৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে অন্তত ১ লাখ ৬ হাজার ৬৮৮ মানুষ ঠাঁই নিয়েছে।
এদিকে মদন ও খালিয়াজুরিতে পানি আরও বাড়ছে। বন্যাকবলিত এলাকায় তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও গবাদিপশুর খাদ্যের।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহনলাল সৈকত শুক্রবার সকালে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও বারহাট্টায় বন্যার পানি কমতে শুরু করছে। দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে এখন বিপৎসীমার ৫৮৭ সেন্টিমিটার নিচে আছে। তবে উব্দাখালি নদীর পানি কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। খারিয়াজুরির ধনু নদের পানিও বিপৎসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে ভারী বৃষ্টিপাত না হলে বন্যার পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাবে।
কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাসেম জানান, কলমাকান্দায় পানি কমছে। উপজেলায় প্রায় ৯২ শতাংশ এলাকা নিমজ্জিত ছিল। এখনও প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা পানির নিচে আছে।
দুর্গাপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজীব উল আহসান জানান, দুর্গাপুরে বন্যা পরিস্থিতি বেশ উন্নতির দিকে যাচ্ছে। পৌর শহরে এখন পানি নেই। তবে গাঁকান্দিয়া, চণ্ডীগড়, বিরিশিরিসহ কয়েকটি ইউনিয়নে পানি ধীর গতিতে নামছে। পানি কমলেও দুর্ভোগ কমেনি। দুই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা জানান, দুটি উপজেলায় ৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখনও ৮ হাজার মানুষ আছেন।
খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম জানান, খালিয়াজুরীর দুর্গম এলাকায় উদ্ধার কার্যক্রম, স্বাস্থ্য সেবা ও বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শন করেন ময়মনসিংহ-১৯ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরীর, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহাবুবুর রহমান, জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ, পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সীসহ আরও অনেকেই।
মদনের ইউএনও বুলবুল আহমেদ জানান, মদনে পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। গোবিন্দ্রশ্রী, তিয়শ্রী, ফতেপুরসহ বেশ কিছু ইউনিয়নের প্রায় ৯৫ শতাংশ এলাকা পানির নিচে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলার ১০টি উপজেলার ৬২টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়েছে। এ পর্যন্ত বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য ৩২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তাতে প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার ৯৩৫ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, পানি কমলেও এখনও ৩২৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১ লাখের বেশি মানুষ আছেন। এ ছাড়া তাদের সঙ্গে প্রায় ১৫ হাজারের মতো গবাদি পশু নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নতুন করে আরও কয়েক হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার দেওয়া হয়।