গর্জে উঠে তিস্তা এবার রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে। ভারতের ঢলে তিস্তা নদীর বন্যা পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে। সোমবার (২০ জুন) বিকাল ৩টায় দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার (৫২.৬০) ৩১ সেন্টিমিটার (৫২.৯১) উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার চরবেষ্টিত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। প্রচণ্ড শব্দে নদীর একূল ওকূল দুই কূল কাঁপিয়ে তুলেছে নদী। সোমবার সকাল ৬টায় তিস্তার পানি ৭ সেন্টিমিটার ও সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার নিচে ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই উজানে ঢলে ভয়াবহতা সৃষ্টি হয়।
দুপুর ১২টায় বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বিকাল ৩টায় আরও ৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পায়। এই পানি ভাটিঅঞ্চলে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতি আরও প্রকট আকার ধারণ করবে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসাফ উদ দৌলা জানান, ভুটানের অতি ভারি বৃষ্টির পানি নেমে আসায় ও উজানের গজলডোবার লকগেট খুলে দেওয়ায় ঢল নেমেছে।
এদিকে একটি সূত্র জানায়, গজলডোবার জলকপাটগুলো উন্মুক্ত করে প্রতি সেকেন্ডে পানি ছাড়া হয় দুই হাজার ৪৫৭ কিউসেক করে। মাত্র কুড়ি মিনিটে পানি ছাড়া হয় প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ কিউসেক। ফলে ভয়ঙ্কর রূপে গর্জে ওঠে তিস্তা নদী। ভারতের দো-মোহনী পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার (৮৫.৯৫ মিটার) চেয়ে ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। প্রবল স্রোতে শোঁ শোঁ শব্দে রাক্ষুসীরূপে রুদ্রমূর্তি ধারণ করে তিস্তা অববাহিকা এলাকা কাঁপিয়ে তুলছে।
এদিকে পানির প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় তিস্তা তীরবর্তী নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এলাকাগুলো হলো- পশ্চিম ছাতনাই, পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, টেপাখড়ি, খালিশাচাঁপানী, ঝুনাগাছচাঁপানী, ডাউয়াবাড়ি, গোলমুণ্ডা, শৌলমারী ও কৈমারী।
হঠাৎ তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পাড়ের মানুষ বড় বন্যার আশঙ্কা করলেও বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দাবি, তিস্তায় বড় ধরনের বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই। বৃষ্টির কারণে উজানের ঢেউয়ের ফলে পানির প্রবাহ বেড়েছে। ভারতে পানির প্রবাহ কমে যাচ্ছে। তাই ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানির প্রবাহ কমে যাবে বলে দাবি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া শাখা।
টেপাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হক জানান, তার ইউনিয়নের সহস্রাধিক পরিবারের বসতবাড়িতে হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। তিস্তার উজানে তেলির বাজার সংলগ্ন স্বপন বাঁধে বন্যার পানি প্রবেশ করায় হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ২ শতাধিক পরিবার বসতবাড়ি ছেড়ে তিস্তার বাম তীরে গ্রেয়িং বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।
খালিশা চাপানি ইউপি চেয়ারম্যান সহিদুজ্জামান সরকার বলেন, ছোটখাতা, বাইশপুকুর ও সুপারিটারীর সহস্রাধিক পরিবারের বসতবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। তিস্তার বন্যার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী ফেরদৌস আলমসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছে চাওয়া হয়েছে। তালিকা পাওয়া মাত্র বরাদ্দ দেওয়া হবে।
নীলফামারী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন জানান, তিস্তার চরের সব সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রাখা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩ হাজার শুকনা খাবারের প্যাকেট প্রদান করা হয়েছে।