নেত্রকোনায় ভয়াবহ বন্যায় আশ্রয়কেন্দ্রে সাড়ে ১৬ হাজার মানুষ

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতে নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। এরমধ্যে কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরের পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। জেলার সঙ্গে উপজেলার দুটির সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া ছয় উপজেলায় সাড়ে ১৬ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন।

কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলা দুটির শহর থেকে শুরু করে সবগুলো গ্রামেই বন্যার পানি ঢুকেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত সাড়ে তিন লাখ মানুষ। এছাড়া খালিয়াজুরি, সদর, আটপাড়া ও বারহাট্টা উপজেলা মিলে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দি।

জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, জেলার ছয়টি উপজেলায় ১৮৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ১৬ হাজার ৪৮০ জন মানুষ ঠাঁই নিয়েছেন। বন্যাকবলিত প্রতিটি উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলাসহ মেডিকেল টিম নিয়োজিত হয়েছে। জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন এনজিও, স্বেচ্ছাসেবীসহ প্রশাসনের লোকজন মানুষসহ গোবাদি পশু নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, বন্যাদুর্গত এলাকায় এরইমধ্যে ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ৬০ মেট্রিক টন জিআর চাল ও নগদ আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক বলেন, কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরে ক্রমশ পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। অসংখ্য মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উপাসনালয় ডুবে যাচ্ছে। জেলার সঙ্গে কলমাকান্দার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথেষ্ট প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

শনিবার (১৮ জুন) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কলমাকান্দা উপজেলার কৈলাটি, পোগলা, সদর, নাজিরপুর ও বড়খাপন ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে সব গ্রামগুলোতেই পানি আর পানি। কলমাকান্দা শহরের সব এলাকায় পানি থৈই থৈই করছে। শুকনো ধান, চালসহ ঘরের আসবাপত্র সব কিছু পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেকেই বাসাবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিচ্ছেন।

প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে কলমাকান্দ-ঠাকুরাকোনা নবনির্মিত সড়কের স্থানে স্থানে মানুষ তাবু টানিয়ে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগিসহ গৃহপালিত প্রাণী নিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন। ওই সড়কটির হিরাকান্দা, আশারানী, পাবই, বাহাদুরকান্দাসহ বেশ কিছু স্থান নিচু থাকায় বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। সড়কের কোথাও কোথাও কোমর পানি। এতে করে জেলার সঙ্গে উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

কলমাকান্দা উপজেলা পরিষদ কার্যালয়সহ চানপুর, নদীপাড়, পশ্চিমবাজার, মধ্যবাজার, পূর্ববাজার, কলেজ রোডসহ প্রায় সব এলাকায় এখন হাঁটুপানি থেকে বুকপানি। বন্যার পানিতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিচ্ছে।

কলমাকান্দার কৈলাটি ইউনিয়নের ঘনিচা গ্রামের ময়না মোড়ল জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর থেকে পানি বেড়ে এখন তার ঘরে কোমরপানি। তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দুপুরে অন্যের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও পানি থাকায় সড়কের পাশে একটি বাজারে দোকান ঘরে ঠাঁই নিয়েছেন।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওয়াদুল্লাহ বলেন, কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, বারহাট্টাসহ ছয়টি উপজেলায় প্রায় সাড়ে ছয় শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এসব বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত জানান, ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার কংস, মোমেশ্বরী, ধনু, উব্দাখালিসহ কয়েকটি নদ নদীর পানি এখন বিপৎসীমার ওপরে। গতকাল শুক্রবার শুধু দুর্গাপুরেই ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। পানি আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।

কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাসেম বলেন, কলমাকান্দায় বন্যা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। উপজেলায় ৭৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এরমধ্যে ১৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে আড়াই হাজারের মতো মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। প্রশাসন সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৎপর রয়েছে।

Share this post

scroll to top