আজারবাইজানকে ‘আগুনের দেশ’ বলা হয়, কারণ আজারবাইজানের রাজধানী বাকুর কাছাকাছি ইয়ানার দাগ নামের স্থান থেকে অবিরাম আগুন নির্গত হচ্ছে। এই স্থানটি ‘জ্বলন্ত পর্বত’ নামেও খ্যাত। আগুনের হলকা ও ফুলকি তিন মিটার পর্যন্ত ওপরে ওঠে। ১৩ শতাব্দীতে পর্যটক মার্কোপলো এখানে এসেছিলেন। তখনো তিনি এই ‘রহস্যময়’ আগুনের ফুলকি দেখে তা ভ্রমণকাহিনীতে লিপিবদ্ধ করেছিলেন।
কয়েক শতাব্দী পর ফ্রান্সের বিখ্যাত লেখক আলেকজান্ডার দুমাও এই রহস্যময় অগ্নিশিখার উল্লেখ করেছেন। অগ্নি উপাসকেরা এতে দুই হাজার বছর ধরে অর্ঘ্য দিয়ে আসছে। সোভিয়েত আমলে বিজ্ঞানীরা প্রচুর তেলের সন্ধান পেলে পুরো এলাকার তেল মস্কো সরকার শোষণ করে নিয়ে যায়। ফলে শিখার তেজ কমতে কমতে শূন্যে চলে আসে। আজারবাইজান সরকার এই শিখা চালু রাখার জন্য অন্য কূপ থেকে গ্যাসের সরবরাহ বজায় রেখেছে। এই অঞ্চলে কোনো পর্যটক এলে বাকুর প্রজ্বলিত শিখা না দেখে যান না। স্থানীয় এক কফি হাউজ থেকে পর্যটকরা এই প্রজ্বলন দেখে থাকেন। ইয়ানার দাগে আগুনের ১০ মিটার লম্বা দেয়াল হাজার হাজার বছর ধরে জ্বলছে।
যুক্তরাষ্ট্রের হাভার্ড কেনেডি স্কুলের এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, লৌহ যবনিকার অন্তরালে থাকার কারণে আজারবাইজান দুই শ’ বছর বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। পাশের দেশ ইরানের সাথে সম্পর্ক তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উভয় দেশের মধ্যে ২১৮ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে, উভয় দেশের সীমানা কাসপিয়ান সাগরেও রয়েছে। সেখান থেকে সহজেই বাণিজ্য ও রণতরী এই দু’দেশে যাতায়াত করতে পারে। বিশ্বের দ্বিতীয় শিয়াপ্রধান দেশ হলো আজারবাইজান। এর বড় জনগোষ্ঠী তুর্কিভাষী। দেখা গেছে, তুর্কিভাষী জনগোষ্ঠী বিভিন্ন কারণে সেখানে বঞ্চিতদের তালিকায়। শিয়া-সুন্নি বিরোধের কারণে এতদিন ইরানও এগিয়ে আসেনি; তুরস্কও এগোয়নি। ফলে সামগ্রিকভাবে মুসলমানরা বঞ্চিত হয়েছে, আর সুযোগটা কাজে লাগায় রাশিয়া ও আর্মেনিয়া এবং পাশ্চাত্য।
আজারবাইজানের সাথে পাশের খ্রিষ্টান অধ্যুষিত দেশ, আর্মেনিয়ার বিরোধ বহুদিনের। বিশেষ করে নাগার্নো কারাবাখ নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ চলে আসছে। পশ্চিমের অনেক দেশ আর্মেনিয়াকে অস্ত্র সহায়তা দিয়ে আসছে। সে তুলনায় আজারবাইজান সহায়তা পায়নি। আজারবাইজান একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাশিয়া তখন আজারবাইজানের তেল শোষণ করে সমৃদ্ধ হয়েছে। অথচ প্রয়োজনের সময় রাশিয়া তাদের সহায়তা না দিয়ে আর্মেনিয়াকে সাহায্য করছে। কিছু দিন আগে রাশিয়া আর্মেনিয়াতে মিসাইল ঘাঁটি স্থাপন করেছে। ইরান ও তুরস্ক আজারবাইজানে সাহায্য সহায়তা করতে পারে। কিন্তু উভয় দেশ রাশিয়ার সাথে বিভিন্ন চুক্তিতে আবদ্ধ। আজারবাইজান আরো সমৃদ্ধ হওয়ার জন্য মুসলিম দেশগুলোর সহায়তা প্রয়োজন। এমন এক সন্ধিক্ষণে ইরান এগিয়ে এসেছে এবং আজারবাইজানের সাথে তার নতুন করে সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে।
ইরানি সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ মোহাম্মদ বাকেরি ৯ জানুয়ারি আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি এর আগে আরো দুবার রাজধানী বাকুতে সরকারি সফরে গিয়েছিলেন। বলতে গেলে তিনি এই নতুন সম্পর্কের ভিত গড়েছেন। বাকেরি অনেক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদন করেছেন। এগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ছাড়াও সামরিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত চুক্তিও রয়েছে। ১৯৯১ সালে আজারবাইজানের স্বাধীনতার পর ২৭ বছরে, কোনো ইরানি উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তার প্রথম সফল সফর হলো এবার। বাকেরি আজারি প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী জাকির হাসানভের সাথে অন্তরঙ্গ সময় কাটালেন। মনে করা হচ্ছে- পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও বিশ্বাসযোগ্যতা বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। ২০১৮ সালে উভয় দেশের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা ও মন্ত্রীদের সফর বিনিময়ের কারণে উভয় দেশ কাছাকাছি আসতে সক্ষম হয় এবং নববর্ষের শুরুতে চুক্তি সম্পাদন করে।
উভয় দেশ যেসব বিষয়ে একমত হয়েছে- এর মধ্যে আছে, পারস্পরিক সম্পর্কের আরো উন্নয়ন, সামরিক সহযোগিতা প্রসার, উভয় দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা, আঞ্চলিক অখণ্ডতা, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, নর্থ-সাউথ করিডোরের কাজ সম্পন্ন করে রেল, নৌপথও ও স্থলপথে বাণিজ্যের সম্প্রসারণ। নাগোর্নো কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে বিরোধে ইরান সবসময় আজারবাইজানের পক্ষে থাকবে বলেও ঘোষণা দেয়া হয়। এটি আজারবাইজানের একটি বড় পাওনা। এসব চুক্তির আগে গত বছর উভয় দেশ কাসপিয়ান সি চুক্তি সম্পাদন করে, যেখানে উভয়ের মালিকানা স্বীকৃত হয়। এই চুক্তির পর উভয় দেশের প্রচুর পর্যটক যাওয়া আসা শুরু করেছেন। একটি কথা বলে রাখা দরকার, কাসপিয়ান সাগর তেলে ভরপুর। লোকে বলে ‘পানির চেয়ে তেল বেশি’।
তাছাড়া, ইরান ও আজারবাইজানের মধ্যে যে সীমান্ত রয়েছে, সেখানে আজো কোনো সংঘর্ষ বা সীমান্ত বিরোধ দেখা যায়নি। উভয় দেশের সীমান্তে অনেক ইরানি বসবাস করছেন যাদের ভাষা তুর্কি ভাষার অনুরূপ। ইরানের এই সীমান্ত গোলযোগহীন ও শান্ত, যদিও ইরানের অন্যান্য সীমান্ত গোলযোগপূর্ণ। যেমন বলা যায়- ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধের দখলদারি ইরানি সীমান্তেও নানা সমস্যার জন্ম দিয়েছে। পাকিস্তান সীমান্তে ইরানি সেনা নিখোঁজ হওয়া ও হত্যার ঘটনা লেগেই আছে। ইরান-আজারবাইজান সীমান্ত শান্ত থাকার কারণে কিছু উল্লেখযোগ্য বাঁধ ও বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।
আর্মেনিয়া ও জর্জিয়ার সাথে তুলনা করলে ককেশাস অঞ্চলে আজারবাইজান একটি স্থিতিশীল দেশ। তবে ইরানিরা ব্যবসায় ও অবসর কাটানোর জন্য জর্জিয়ায় বেশি যায়। জর্জিয়ার অনেক বদনাম আছে, ইরানিদের জন্য ভিসামুক্ত হলেও অনেক ইরানিকে জর্জিয়া থেকে বের করে দেয়া হয়েছে এবং অনেককে ঢুকতে বারণ করেছে। ইরানি ব্যবসায়ীদের ওপর অনেক অর্থনৈতিক বিধিনিষেধ চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এসব কারণে বলা যায়, আজারবাইজান শান্ত ও বন্ধুবৎসল। ২০১৮ সালে আর্মেনিয়ার ‘মখমল বিপ্লব’ও ইরানিদের আজারবাইজানের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে ইন্ধন জুগিয়েছে। এর মধ্যে আজারবাইজান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে অনেক স্থিতিশীলতা অর্জন করতে পেরেছে, যা জর্জিয়া ও আর্মেনিয়ার জন্য পীড়াদায়ক।
আজারি সরকার ‘ইরানি বিপ্লব’কে ভয় করে। মনে করে, সম্প্রসারণবাদের প্রথম শিকার হয়তো হবে আজারাবাইজান। তাই দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধন আগে আর হয়নি। আজারবাইজান ইসলামিক পার্টি ইরানি ভাবধারায় পুষ্ট। এদের অনেক সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত এবং সরকার নির্দেশনা দেয় বিচারের কাজে। সরকার মনে করে, এই দল ইরানের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তিতে লিপ্ত। এই দলের এক নেতা মাহির জাভাদভ সশস্ত্র দল গঠন করেছেন এবং ইরানের ভূখণ্ডে নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। মাহির ঘোষণা দিয়েছেন, ‘নিষ্পেষণ থেকে আজারবাইজানকে’ এবং আর্মেনিয়া থেকে কারাবাখ মুক্ত করবেন। বাকু সরকার মাহিরকে ফেরত চাইলেও ইরান তাকে আজারবাইজানের কাছে হস্তগত করেনি।
উত্তর ও দক্ষিণের আজারবাইজান নিয়েও বহু অভ্যন্তরীণ বিরোধ চলছে শতাব্দী ধরে। ইরান ও আজারবাইজানের মধ্যে শিয়া মৌলবাদের বিষয় নিয়ে গোপন মতবিরোধ রয়েছে। এখন আজারিদের ইরানি রাজনৈতিক বলয়ে প্রবেশ করতে হবে নতুবা ইরানিদের শিয়া মতবাদ প্রচার কর্মসূচি বন্ধ রাখতে হবে। আগের পার্সিয়ান প্রভাবমুক্ত যেসব নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী রয়েছে তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার ও মত প্রকাশের সুযোগ দিতে হবে ইরানকে।
আজারবাইজান সরকার এনজিওদের ওপর অতিরিক্ত কড়াকড়ি করায় বিদেশী সংস্থাগুলো কাজ করতে পারছিল না। এর মধ্যে ইরানভিত্তিক অনেক এনজিও রয়েছে। নতুন কোনো এনজিও গঠন করতে এত কাঠখড় পোড়াতে হয় যে, তা করা যাচ্ছে না। এমন কি বিদেশী ডোনারদের বিরুদ্ধেও ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়। কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। এসব মৌলিক কারণে দশকের পর দশক ইরান ও আজারবাইজান একমত হতে পারেনি।
আর্মেনিয়া সরকারিভাবে নাগার্নো কারাবাখ প্রজাতন্ত্রকে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে তাদের সব ধরনের সহায়তা আর্মেনিয়া দিয়ে থাকে। রাাশিয়াও নিজের স্বার্থে স্বঘোষিত কারাবাখ প্রজাতন্ত্রকে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। এখানকার সমস্যা ভূখণ্ড সম্পর্কিত ও জাতিগত। এখানকার লোকজন বেশির ভাগ আর্মেনীয় ভাষায় কথা বলে। তবে বিভিন্ন হিসাবে পুরো এলাকাটি আজারবাইজানের এলাকা হিসেবে স্বীকৃত। তাই আজারবাইজান এলাকাটি দাবি করছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, আর্মেনিয়া আজারবাইজানের অখণ্ডতার ওপর হস্তক্ষেপ করেছে। সেকেলে অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে উভয় দেশের মধ্যে যুদ্ধ চলে ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত। এই বড় যুদ্ধে চার লাখ উদ্বাস্তুর সৃষ্টি হয়। যুদ্ধবিরতির কারণে যুদ্ধ বন্ধ থাকলেও মাঝে মধ্যে তা বিস্ফোরণোম্মুখ হয়ে ওঠে। প্রায় পাঁচ লাখ আর্মেনীয় আজারবাইজানে বসবাস করছে। এদের অনেকেই উদ্বাস্তু। যদি আর্মেনিয়ার সাথে আবারো বড় ধরনের যুদ্ধ হয়, তবে এদের ভাগ্যবিপর্যয় ঘটতে পারে।
ইরান, তুরস্ক এবং রাশিয়ার মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সহায়তা পেলে বহু দিনের পুরনো নাগার্নো কারাবাখ সমস্যা যেটি আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে বহু যুদ্ধের জন্ম দিয়েছে, সেটি মেটানোর শক্তি জোগাবে। অন্তত রাশিয়া আর্মেনিয়াকে সামরিক সহায়তা প্রদান স্থগিত করবে। এটাও এক বড় প্রাপ্তি। সিরিয়ায় যেভাবে তুরস্ক-ইরান-রাশিয়া কাজ করছে, তেমিন উদ্যোগ এখানেও নেয়া হলে সবার জন্য গ্রহণযোগ্য একটি সমাধান সৃষ্টি হতে পারে।
ইরানি নৌচলাচলের ওপর মার্কিন অবরোধের কারণে ইরান এই চাপ থেকে নিষ্কৃতি লাভের উপায় খুঁজছে। তাই নর্থ সাউথ করিডোর ইরানের নৌ ও বাণিজ্য তরী চলাচলের জন্য বিকল্প পথ হতে পারে। আজারবাইজান ট্রানজিট রুটের কাজও করতে পারে। যদিও এক বড় অংশ ইরানের, তথাপি আজারবাইজানের সহযোগিতাও ভালো ফল বয়ে আনতে পারে। করিডোর ভালোভাবে কাজ করতে পারলে আজারবাইজান ও রাশিয়ার আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমা এবং এশিয়ার অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রবেশ সহজ ও অর্থবহ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তখন ইরান আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত হবে। বাকেরি খুব চেষ্টা করছেন- উন্নত সম্পর্ক সৃষ্টি করে এর ফসল ঘরে তুলতে। বিশেষ করে এ মুহূর্তে আমেরিকার চাপ থেকে ইরানের নিষ্কৃতি পেতে করিডোর সহায়ক হবে এবং তখন পশ্চিমাদের একটি বার্তা দেয়াও সম্ভব হবে। উভয় দেশ সম্পর্কোন্নয়ন করে ভূরাজনৈতিক পরিবেশ পাল্টে দিতে সক্ষম হবে।
আজারবাইজান তেলসমৃদ্ধ। দেশটি রাসায়নিক দ্রব্য, মেশিনারি, আঙ্গুর ও শাকসবজি, পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস, নন-ফেরাস মেটাল, তেলকূপের যন্ত্রপাতি, সিমেন্ট, ফেব্রিক্স, কটন, পাহাড়ি লবণ, মার্বেল, লাইমস্টোন ও নির্মাণ সামগ্রী রফতানি করে থাকে। ইরানের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি হওয়াতে প্রয়োজনীয় সামগ্রীগুলো ইরান হয়ে ইরাক ও পাকিস্তানে সহজে পরিবাহিত হতে পারবে।
পরিবেশ দূষণ আজারবাইজানের একটা বড় সমস্যা। বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি ও কৃষিখামার পরিবেশ দূষিত করছে। কাসপিয়ান সাগর থেকে ড্রিলিংয়ের মাধ্যমে তেল সংগ্রহ করার কারণেও পরিবেশ বিঘিœত হয়েছে। রাশিয়ানরা যখন প্রচুর পরিমাণে তেল সংগ্রহ করতে থাকে তখনো পরিবেশের ক্ষতি হয়েছিল। ইরানও একই সমস্যায় আক্রান্ত। পারস্পরিক সহযোগিতা পেলে উভয় দেশ উপকৃত হবে বলে বিজ্ঞানীরা আশাবাদ ব্যক্ত করছেন।
আজারবাইজানের আরেক বড় সমস্যা পানীয় জল। ৮.২ মিলিয়ন নাগরিক এর সঙ্কটে। তেলের পাইপলাইনের নিঃসরণ এবং সংরক্ষিত ট্যাংকের ‘লিকেজ’ ভূগর্ভের পানি অবিরত দূষিত করছে। অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার, কারখানার বর্জ্য ইত্যাদি নদীর পানি দূষিত করছে। সমুদ্রের লবণাক্ততা পানীয় জলের পাইপ লাইনকে বিনষ্ট করছে। এ সব মিলিয়ে রাজধানী বাকুসহ আজারবাইজানের পানীয় জলের সঞ্চালনব্যবস্থা বড়ই নাজুক। এ কারণে আজারবাইজানকে পরিবেশ ক্ষতিকর জোন হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছে। দশকের পর দশক এটাই স্বাস্থ্য সমস্যার জন্ম দিয়েছে। পানীয় জলের স্বল্পতা এবং পাইপলাইনে কম পানি সরবরাহের কারণে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া কলেরা ও হেপাটাইটিস রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটাচ্ছে। পানীয় জলে ‘মেটালের’ উপস্থিতির কারণে ক্যানসার রোগেরও প্রাদুর্ভাব হচ্ছে। এই সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য ইরানের সহায়তায় ক্যাসপিয়ান সাগর থেকে পানি সরবরাহের কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে তেলসমৃদ্ধ ইরানের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে আজারবাইজানিরা উৎসাহবোধ করছে।
আজারবাইজানের কৌশলগত অনন্য অবস্থান এ দেশকে এক গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদা এনে দিয়েছে। তুরস্ক ও রাশিয়ার সাথে স্থলপথে যোগাযোগের জন্যও এই দেশ প্রয়োজনীয়। বিশ্ব রাজনৈতিক মঞ্চে ইরান, তুরস্ক এবং রাশিয়া নতুন অক্ষরূপে আবির্ভূত হয়েছে। ইরান, আজারবাইজান, তুরস্ক নিয়মিত এবং মাঝে মধ্যে রাশিয়ার কর্মকর্তারা মিলিত হয়ে রাজনৈতিক মঞ্চে একটি শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে চাইছেন। মনে করা হচ্ছে, একটি ‘ল্যান্ড করিডোর’ প্রতিষ্ঠা করাই দেশ চতুষ্টয়ের প্রাথমিক উদ্দেশ্য।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব, বাংলাদেশ সরকার ও গ্রন্থকার