ফুলপুরে কৃষি যন্ত্রপাতির মেলা

কৃষক, কৃষি উদ্যোক্তা, ছাত্র-ছাত্রী এবং সাধারণ জনগণকে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার লক্ষে কৃষি যন্ত্রপাতি মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৪ জুন) সকাল ১১ টায় ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে ওই মেলার উদ্বোধন করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. নজরুল ইসলাম খান।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগ দ্বারা পরিচালিত এপ্রোপ্রিয়েট স্কিল মেকানাইজেশন ইনোভেশন হাব (আসমি) প্রকল্পের আয়োজনে এবং ফুলপুর উপজেলা পরিষদের সহায়তায় ওই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ফিড দ্যা ফিউচার, ইউএসএইড, যুক্তরাষ্ট্র ও এএসএমসি, যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে ওই মেলার আয়োজন করা হয়।

এই মেলায় বাংলাদেশের ৬ টি কৃষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। এসিআই মটরস লিমিটেড, দি মেটাল (প্রা.) লিমিটেড , আবেদীন ইকুপমেন্ট লিমিটেড, বাংলামার্ট লিমিটেড,এবং এসকিউ গ্রুপ, এগ্রোমেক ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ এবং আসমি-বাংলাদেশ প্রকল্প তাদের কৃষি যন্ত্রপাতি নিয়ে মেলায় স্টল দেয়। স্টলে কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার (ফুল এবং হাফ ফিড), রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, ট্রাক্টর, রিপার, বিএইউ এসটিআর ড্রায়ার, আইওটিযুক্ত পাম্প এবং সেন্সরযুক্ত পাম্প প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেন। যন্ত্রপাতিগুলো ওইসব কোম্পানি ভারত, পাকিস্তান, জাপান, কোরিয়া এবং যুক্তরাজ্য থেকে আমদানি করে থাকে। সরকারি ভর্তুকির মাধ্যমে তারা কৃষকদের মাঝে এই সকল যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে আসছে।

মেলার পাশাপাশি পরবর্তীতে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় বাকৃবির উদ্ভাবন কৃষিযন্ত্র বাউএসটিআর ড্রায়ারের প্রয়োজনীয়তা এবং ব্যবহার নিয়ে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি দেখানো হয়। এরপর সফল কৃষি উদ্যোক্তা নিলয়, খোদেজা খাতুন, মো. নজরুল ইসলাম তাদের নিজ নিজ অভিজ্ঞতা সকলের সামনে তুলে ধরে। তারা প্রত্যেকেই কৃষিতে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে লাভবান হয়েছেন। এই সকল যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান ওই উদ্যোক্তারা।

আসমি-বাংলাদেশ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মঞ্জুরুল আলমের সভাপতিত্বে এবং আসমি-বাংলাদেশ প্রকল্পের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ড. চয়ন কুমার সাহার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. নজরুল ইসলাম খান। অনুষ্ঠানে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফুলপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শীতেষ চন্দ্র সরকার । বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফুলপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউল করিম রাসেল, ফুলপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুল্লাহ আল মামুন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ী, ময়মনসিংহের উপ-পরিচালক মো. মতিউজ্জামান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ী, ঢাকার সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের পরিচালক তারিক মাহমুদুল ইসলাম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট গবেষক, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিবর্গ, স্থানীয় কৃষক ভাই-বোন, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ প্রায় ৫০০জন।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. নজরুল ইসলাম খান বলেন, কৃষি থেকে সবকিছুর উৎপত্তি। কৃষি উৎপাদন ঠিক থাকার পরই শিল্প বা অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা করা যায়। ফসলের পোকা দমনের জন্য যান্ত্রিকীকরণ অনেক প্রয়োজন। যন্ত্রের সাহায্যে ফসলের উৎপাদন বাড়বে। আনেক কম সময়ে ফসল সংগ্রহ করা যাবে। ফলে সেই সময়ে অন্য কাজ করা যাবে। এই সেক্টরে উদ্যোক্তা হওয়ায় অনেক সুযোগ রয়েছে। জিডিপি তে কৃষিখাতের অবদান ১৪থেকে ১৫ শতাংশ হলেও জিডিপির প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। ব্যয়বহুল বীজতলার পরিবর্তে নিজের বাসার বারান্দাতেই চারা উৎপাদন সম্ভব। এখন ইউনিয়ন পর্যন্ত ওয়েবসাইট আছে। আগামী দিনের শক্তি হলো কৃষিশিক্ষা ও যান্ত্রিকীকরণ । এসএসসি ও এইচএসসির পরে ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই কৃষিকাজে যুক্ত হয়। তারাই যদি যন্ত্রের মাধ্যমে কৃষিতে উৎপাদন শুরু করে তাহলে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি হবে।

উল্লেখ্য, আসমি-বাংলাদেশ গবেষণা প্রকল্পটি ২০১৫ হতে ২০১৯ এবং ২০২০ হতে ২০২৩ পর্যন্ত দুই মেয়াদে পরিচালিত হচ্ছে। যার আওতায় যন্ত্র পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য ট্রেনিং, সেমিনারসহ উদ্যোক্তাদের আগ্রহ সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলের চারটি উপজেলায় কৃষি যন্ত্র ব্যবহার করে বিভিন্ন কৃষিকাজের উপর গবেষণা করে উৎপাদন ও উপযোগীতা পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। আধুনিক কৃষি যন্ত্র সহজভাবে ব্যবহার করে কৃষকদের সময়, শ্রম ও অর্থ সাশ্রয়ের জন্য টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহার ও এর মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এই গবেষণা প্রকল্পের মূল লক্ষ্য।

Share this post

scroll to top