সুযোগ কী তাহলে হাতছাড়া হয়ে যাবে? নিজ দেশেই দিশেহারা নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের আগে ভারতের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ হেরেছে তারা ১-৪ এ। হেরে যাওয়া ম্যাচগুলোতে ব্যাবধান ছিল ৮ উইকেট, ৯০ রান, সাত উইকেট ও ৩৫ রান। সেই নিউজিল্যান্ডকে বাংলাদেশেরও চেপে ধরার কথা। কিন্তু প্রথম ম্যাচে যেভাবে প্রকাশ পেল মাশরাফি-মুশফিকদের দুর্বলতা, তাতে আত্মবিশ্বাসটা বেড়েই গেল কিউইদের।
ভারতের বিপক্ষে সিরিজে হারের প্রতিশোধটা তারা নিয়ে নেবে হয়তো উপমহাদেশের আরেক দল বাংলাদেশের বিপক্ষে! তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটি জয়ের পর কেন উইলিয়ামসন ও গাপটিলের দল আত্মবিশ্বাস পেয়ে উড়ছে! তাহলে কী হতে যাচ্ছে এ সিরিজ।
শনিবার ও বুধবার অনুষ্ঠিত হবে বাকি দুই ওয়ানডে যথাক্রমে ক্রাইস্টচার্চ ও ডানেডিনে। সেখানে ভালো কিছু হবে না, পূর্ব ধারা অনুসারেই সব ম্যাচে হার। নিউজিল্যান্ডকে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে হারানোর স্বপ্ন কী তাহলে অধরাই থাকবে?
আসলে নিউজিল্যান্ড তাদের কক্ষপথে ফেরার আপ্রাণ চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আত্মবিশ্বাসের তলানিতে যাওয়া দলটিকে চেপে ধরার তো সুযোগ টিম বাংলাদেশের সামনে। শক্তির দিক থেকে হয়তো অনেক পার্থক্য ভারতের সাথে বাংলাদেশের। কিন্তু ওয়ানডেতে খুব বেশিই যে পার্থক্য তাও তো আবার নয়। অন্তত নিউজিল্যান্ডকে মোকাবেলার প্রেক্ষাপটে।
আসলে বাংলাদেশ এলোমেলো হয়েই পৌঁছেছে নিউজিল্যান্ডে। শুরুতে আস্থা দেখানো তাসকিন ইনজুরিতে পরে বিদায় নিলো। সেটা সমস্যা ছিল না। সাকিবের ইনজুরিই মূলত সব এলোমেলো করে দিয়েছে। এটাই স্বাভাবিক। বিপিএলের মতো খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও ব্যস্ততম শিডিউলে ক্রিকেট খেলার পর ক্রিকেটাররা ক্লান্ত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আর সে ক্লান্তি মাঝে মাঝে ইনজুরিতে পড়তে উৎস হিসেবে কাজ করে।
বাংলাদেশ দল মূলত নিউজিল্যান্ড সফরের গুরুত্ব দেখছে দুই ভাবে। নিউজিল্যান্ডকে তার দেশে হারানো বা ওই কন্ডিশনেও বাংলাদেশ সচরাচর ভালো করতে পারে তা প্রুফ করা। আরেকটি হলো ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে সম্ভাব্য স্কোয়াডে প্রস্তুতি নেয়া। কিন্তু সেরা দল নিয়ে যদি ম্যাচই না খেলা যায়, তাহলে দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে যোগসূত্রটা কিভাবে অ্যাডজাস্ট করবে। বিপিএলটা আরেকটু কম সময়ে শেষ করে অন্তত সপ্তাহখানেক আগে শেষ করে দলটাকে নিউজিল্যান্ডে পাঠালে ভালো হতো।
তাছাড়া বিপিএলটা পিছিয়েও অনুষ্ঠান করা যেত। কারণ ঘরোয়া ক্রিকেটের এ লিগ মূলত খেলোয়াড়দের উন্নতির জন্যই, যা জাতীয় দলের পারফরমেন্স বাড়াতে সাহায্য করবে, এটাই তো ঘরোয়া ক্রিকেটের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু ওই ঘরোয়া ক্রিকেট যদি ক্রিকেটারদের ইনজুরড ও দুর্বলভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উপস্থিত করে তাহলে সে খেলার যৌক্তিকতা কোথায়? একই সাথে গুরুত্বপূর্ণ একটা সিরিজের কেউ কেউ উপস্থিত হতে পেরেছেন ২-৩ তিন আগে।
প্রথমত দীর্ঘ দিন টি-২০ ম্যাচ খেলে ওয়ানডে মেজাজ দেখে দূরে ক্রিকেটাররা। দ্বিতীয়ত, উপমহাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনের মধ্যে যেখানে বিস্তর ফারাক। এমন অবস্থাতে এত স্বল্প সময়ের নোটিশে নিজেদের সেরাটা উপহার দেয়া সত্যিকার অর্থেই টাফ। তারপর বাংলাদেশ যদি প্রতিনিয়ত ফার্স্ট ও বাউন্সি উইকেটে খেলে বেড়াত। নিজ দেশের জহুর আহমেদ ও শেরেবাংলা বা সিলেটের উইকেটের ধরন কী তা আর লিখে বোঝানোর প্রয়োজন নেই।
বিদেশের মাটিতেও অমন কন্ডিশনে তো বছরে ২-১টি সিরিজ খেলার সুযোগ পায়। তাহলে কিভাবে খেলোয়াড়রা দ্রুত মানিয়ে যাবেন। প্রথম ম্যাচ শেষে অধিনায়ক মাশরাফিও অ্যাডজাস্ট না হতে পারার দুর্বলতার কথা উল্লেখ করেছেন, যা প্রকারন্তে বিসিবির ‘দুর্বল পলিসির খেসারত’ গুনতে হয়েছে বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। মাঠে পারফরমেন্স করতে হবে ক্রিকেটারদের। জয় ছিনিয়ে আনতে হবে তাদেরই।
কিন্তু সেই সব পারফরমারদের পর্যাপ্ত সুযোগ করে দেয়ার দায়িত্বটা বিসিবিরই। কিন্তু সেটা কী দেখার সুযোগ তাদের আছে? এর আগে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ বা আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে অন্তত ১২-১৫ দিন পূর্বে সে কন্ডিশনে দল পাঠিয়েছে বিসিবি। যার রেজাল্টও এসেছে। সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে খেলেছে টিম বাংলাদেশ। বিশ্বকাপেও খেলেছে কোয়ার্টার ফাইনাল। সে ধারা থাকলে এ সিরিজে ভালো কিছু প্রাপ্তির সুযোগ ছিল। কিন্তু এখন সে আশা কী করা যাবে? সময়ই তা বলে দেবে!