নেত্রকোনার কলমাকান্দায় টানা পনেরো দিন বৃষ্টির পর সোমবার সকালে রোদ উঠায় স্থানীয় কৃষকদের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। তারা ধান শুকাতে পাকা রাস্তা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠসহ খোলা জায়গা বেছে নিয়েছেন।
এদিকে শামীম আহম্মেদ নামে এক কৃষকের বাড়ির আঙিনা ও খলা (ধান শুকানোর স্থান) থেকে পানি না নামায় ধান শুকানোর জন্য স্থান বেছে নিয়েছেন তার ইঞ্জিনচালিত দুটি নৌকা। তার এই ধান শুকানোর পদ্ধতি ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সাড়া পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৫ দিন ধরে উপজেলা জুড়ে ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে গত শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সোমবার সকাল থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তারা ধারণা করছেন বৃষ্টিপাত আর না হলে দুই দিনের মধ্যেই পানি বিপৎসীমার নিচে চলে আসবে।
গত দুই সপ্তাহ ধরে ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার প্রধান নদী উব্দাখালীসহ উপজেলার সব নদনদীর পানি হাওড়ে প্রবেশ করায় উপজেলাজুড়ে চরম দুর্ভোগ দেখা দেয়। এই পানি ও শ্রমিক সংকটের কারণে উপজেলার শতকরা প্রায় ২০ ভাগ বোরো ধান কৃষকেরা ঘরে তুলতে পারেননি।
সোমবার সকাল থেকে পানি কমতে থাকায় ধান ঘরে তুলতে শ্রমিকদের সঙ্গে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ পরিবারের লোকজনকে ধান কাটতে দেখা গেছে। এদিকে বেশ কয়েক দিন পর রোদ উঠলেও জায়গার অভাবে কৃষকেরা ধান শুকাতে হিমশিম খাচ্ছেন। আবার জায়গার অভাবে অনেকে বেছে নিয়েছেন পাকা সড়ক, খোলা জায়গা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ ইত্যাদি।
এরই মধ্যে শামীম আহম্মেদ নামে এক কৃষক ধান শুকানোর জন্য স্থান বেছে নিয়েছেন তার ইঞ্জিনচালিত দুইটি নৌকার ছাদ। আর এই বিষয়টির তথ্য ও ছবি সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা ওই কৃষকের বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করেন।
উপজেলার চত্রংপুর গ্রামের কৃষক শামীম আহম্মেদ বলেন, এ বছর তিনি আট একর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ করেছেন। তার মধ্যে পাঁচ একর জমির ধান কেটেছেন। বাকি ধান পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। সোমবার সকাল থেকে পানি কমতে থাকায় শ্রমিকরা কোনোরকমে ওই ধান কাটতে শুরু করেছে। তবে বেশিরভাগ ধান পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি জানান, বেশ কয়েক দিন ধরে রোদ না থাকায় ঘরে ধান থাকতে থাকতে অঙ্কুর গজিয়েছে। এখন (সোমবার) রোদ উঠলেও তার ধানের খলায় (ধান শুকানোর স্থান) প্রায় কোমর পানির নিচে থাকায় জায়গার অভাবে ধান শুকাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। তাই তিনি দুটি নৌকার ছাদে কিছু কিছু করে ধান শুকাচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার আটটি ইউনিয়নের ২১ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও উপজেলার ১৬৫টি পুকুরের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পানিতে ভেসে গিয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তানভীর আহম্মেদ।
এই ঢলের পানিতে খড় পচে যাওয়ায় গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিতে পারে বলেও কৃষকেরা জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাসেম নৌকায় ধান শুকানোর বিষয়ে বলেন, প্রকৃতির বিরূপ প্রভাবে স্থানীয় কৃষকরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে ধান শুকানোর জায়গা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় শামীম আহম্মেদ নামে এক কৃষক তার নৌকায় ধান শুকাতে শুরু করেছেন।