পায়রা বন্দর উন্নয়নের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়েছে সরকার। নিয়োগ পাওয়া নেদারল্যান্ডসের রয়েল হাসকনিং ডিএইচভি-সহ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্বদ্যিালয়ের (বুয়েট) গবেষণা, পরীক্ষা এবং পরামর্শক ব্যুরো (বিআরটিসি) ডিটেইল মাস্টার প্ল্যানসহ অন্যান্য রিপোর্ট প্রণয়নে ১৮ মাস সময় পাবে। এ জন্য ব্যয় হবে ১২৫ কোটি টাকা।
গতকাল বৃহস্পতিবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। জানা গেছে, এ কাজে বুয়েটের ২৯ জন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর এবং রয়েল হাসকনিং ডিএইচভির ৬১ জন বিশেষজ্ঞ অংশগ্রহণ করবেন। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ২৪টি ডেলিভারেবলস রিপোর্ট (সমীক্ষা এবং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোফর্মা) প্রণয়ন করবে। সঠিক কৌশলগত পরিকল্পনা ও ডিটেইল মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের জন্যই তাদের নিয়োগ দেয়া হয়।
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর এম জাহাঙ্গীর আলম, বিআরটিসি, বুয়েটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো: শামসুল হক এবং রয়েল হাসকনিংয়ের স্ট্র্যাটেজিক বিজনেস ডাইরেক্টর এরিক স্মিট নিজ নিজ পক্ষে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: আবদুস সামাদ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত হ্যারি ভারউইজ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পায়রা বন্দর সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে বাস্তবায়নাধীন ১০টি ফাস্টট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। মাস্টার প্ল্যান প্রণীত হলে এ বন্দরের অধিগ্রহণের জন্য নির্ধারিত প্রায় ৬৫০০ একর জমিতে টপোগ্রাফি ও অন্যান্য সার্ভের মাধ্যমে ল্যান্ডইউজ প্ল্যানসহ টার্মিনাল ও সব স্থাপনার অবস্থান মাস্টারপ্ল্যানে চিহ্নিত হবে। ফলে পায়রা বন্দরের উন্নয়নের জন্য গৃহীত মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাগুলো মাস্টারপ্ল্যান রিপোর্টের ভিত্তিতে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
সূত্র আরো জানায়, মাস্টারপ্ল্যানের আন্তর্জাতিকমানের ফিজিবিলিটি স্টাডি ও প্রকিউরমেন্ট ডকুমেন্টস দ্বারা বন্দরের নির্মিতব্য বাণিজ্যিক অবকাঠামোগুলোর জন্য উপযুক্ত বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা যাবে। মাস্টারপ্ল্যানের রিপোর্টের আদলে স্মার্টিফিকেশন ও উন্নয়ন-কৌশল অবলম্বন করে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতিতে এবং প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে বৈদেশিক বাণিজ্যে বন্দরের সেবা প্রদান করা যাবে। ফলে, পায়রা বন্দরভিত্তিক দেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং আর্থসামাজিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণে মাস্টারপ্ল্যান রিপোর্টটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।
মন্ত্রণালয় জানায়, পায়রা বন্দর উন্নয়নে মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় প্রথম টার্মিনাল নির্মাণ, রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ড্রেজিং ও রক্ষণাবেক্ষণ, ড্রাইবাল্ক/ কোলটার্মিনাল নির্মাণ ও ভারতীয় ঋণসহায়তায় মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় ট্রান্সশিপমেন্ট কনটেইনার টার্মিনাল, ডিপওয়াটার কনটেইনার টার্মিনাল, অফসোর টার্মিনাল/ সাপ্লাইবেস, কোর পোর্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার, নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন, হাউজিং এডুকেশন হেলথ ফ্যাসিলিটিজ, টাওয়েজ হারবার টাগস্, ইন্টারনাল ফেরি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে।
অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিমানবন্দর, পায়রা বন্দরের রেলসংযোগ, শিপইয়ার্ড ও শিপ মেরামত কার্যক্রম, লিক্যুইড বাল্ক টার্মিনাল, এলএনজি টার্মিনাল ইত্যাদি প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে।
এসব পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই, পরিবেশ ও সামাজিক ক্ষেত্রে প্রভাব নিরূপণ, ক্রয় পরিকল্পনা ও ক্রয় প্রস্তাব প্রণয়নসহ গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্টগুলো নিয়োগ পাওয়া পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বুয়েটের বিআরটিসির নেতৃত্বে রয়েল হাসকনিং ডিএইচবির সহায়তায় প্রণীত হবে।
এ ছাড়া পরামর্শ কাজের শুরুতে একবার এবং রিপোর্ট চূড়ান্ত করার আগে আরো একবার সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের মতামত গ্রহণ করা হবে। পোর্ট অপারেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান এবং কৌশলগত ট্যারিফ প্ল্যান প্রণয়ন এবং গভীর সমুদ্রবন্দরে রূপান্তরের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন তৈরি করবে তারা।