পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে কম ঋণ নেয়া দেশ, টাকা পয়সা নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ খুব সেয়ানা। লাভজনক প্রকল্প ছাড়া বাংলাদেশ ঋণ নেয় না। শ্রীলংকার সঙ্গে বাংলাদেশের যারা তুলনা করেন তারা দুষ্ট লোক। এসব দুষ্ট লোকই চীন থেকে নেয়া ঋণ নিয়ে তুলকালাম করছে, যাতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতি অখুশি হন।
বুধবার সন্ধ্যায় সিলেটে দুস্থদের ঈদ উপহার বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন।
নিজ নির্বাচনী এলাকার গরিব মানুষকে ঈদ উপহার বিতরণের জন্য বিকালে সিলেটে আসেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে নিজ বাসা হাফিজ কমপ্লেক্সে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক আল খায়ের ফাউন্ডেশনের সহায়তায় দুস্থ ও অসহায় মানুষদের ঈদ উপহার বিতরণ করেন মন্ত্রী।
এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
উপহার বিতরণ শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন এ কে আব্দুল মোমেন।
এ সময় ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বাংলাদেশ সফরে কি ধরনের সুখবর থাকতে পারে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কিছু জানানো হয়নি।
তবে ভারতীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে মন্ত্রী বলেন, তিনি হয়তো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কোনো দাওয়াত নিয়ে আসবেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। এটা বাংলাদেশের জন্য সুখবর হিসেবেই বিবেচনা করছেন মন্ত্রী।
এই সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক ও হবে তবে সেই বৈঠকে তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মনে করে তিস্তা ইস্যু সেটেলড কারণ ভারতীয় সরকার তিস্তা পানির সমস্যা সমাধানের জন্য একাগ্রচিত্ত কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের জন্য সেটা সম্ভব হচ্ছে না।
মন্ত্রী বলেন, তিস্তা নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন নেই। এছাড়াও আরও অনেক বিষয়ে আমরা একমত হয়েছে সেসব বিষয় কিভাবে এগিয়ে নেয়া যায় সেসব বিষয়ে আলোচনা হবে এই বৈঠকে।
এক প্রশ্নের জবাবে , এক পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন শ্রীলংকা বাংলাদেশের তুলনা যারা করে তারা দুষ্ট লোক।
তিনি বলেন, শ্রীলংকার সঙ্গে বাংলাদেশের কোনোভাবেই তুলনা করা যায় না। বাংলাদেশের ১৬৫ মিলিয়ন লোক যেখানে শ্রীলংকার জনসংখ্যা মাত্র ২১ মিলিয়ন। প্রতিবছর বাংলাদেশের ৪৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি হয়। শ্রীলংকার রপ্তানি নেই বললেই চলে। এই মহামারির সময়েও ২৫ বিলিয়ন রেমিট্যান্স এসেছে বাংলাদেশে তার ধারে কাছেও নেই শ্রীলংকা। তাদের একমাত্র ইনকাম পর্যটন দিয়ে। গত দুই বছর মহামারির কারণে মার খেয়েছে। বাংলাদেশের কিছু বিদেশ থেকে কিনতে হয় না। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। শ্রীলংকার সব কিছু কিনতে হয়। সুতরাং শ্রীলংকা আর বাংলাদেশে অবস্থান জুতার কালী আর লিয়াকত আলীর মতো তুলনা।
এ সময় চীন থেকে বাংলাদেশের ঋণের প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, চীন থেকে বাংলাদেশের ঋণ নেয়া নিয়ে কিছু দুষ্ট লোক অবান্তর কথা বলছে। প্রথমত বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ খুব কম ঋণ নেয়া দেশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ তাদের জিডিপির ১১০ শতাংশ ঋণ নেয়, অন্যান্য দেশ আরও বেশি। জিডিপির প্রায় ১৫ শতাংশ ঋণ নেয়া বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে খুব সেয়ানা বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, যে প্রকল্পে লাভ হবে না সেই প্রকল্পে ঋণ নেই না আমরা।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের যে ঋণ আছে তার ৫ শতাংশ চীন থেকে নেয়া। কিন্তু কিছু দুষ্ট লোক আছে এই নিয়ে তোলপাড় করছে। তাদের উদ্দেশ্য চীন চীন বললে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতি অখুশি হবে।