সেদিন আমার হাতটা বিমের নিচে আটকে ছিল। ডাক্তার আমাকে উদ্ধার করতে পারেনি। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। মরে গেছি বা মরেই যাব, এমন অবস্থা। তখন আমাকে দেওয়া হল গাছ কাটার একটি করাত। ডান হাতে করাত ধরে নিজেই নিজের বাম হাতটা কেটে ফেললাম। এখনও ভূমিকম্প বা জোরে শব্দ হলেই আঁতকে উঠি। এই বুঝি ভবনটি ধসে পড়ল। এভাবেই ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজার সেই দিনের ঘটনার দু:সহ বর্ণনা দিয়েছেন ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলা ঝাউগাই গ্রামের সাইদুল ইসলামের স্ত্রী রোজিনা আক্তার।
রোজিনা আরও জানান, হাতকাটা ছাড়াও মাথা ও কানে প্রচণ্ড আঘাত পান। সাভার সিআরপিতে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়েছেন। কষ্টের মাঝে তিনি প্রশান্তি খুঁজে পেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে স্পর্শে। দুদিন এসে মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা এবং সাহস দিয়েছেন। এই সান্ত্বনাই বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা। অনুদান দিয়েছেন ১০ লাখ টাকা।
তার বড় মেয়ে আক্তার সালমা রিমি অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। ২০১৫ সালে জন্ম নেয় কন্যা সাদিয়া আক্তার, যার বর্তমান বয়স ৭ বছর। সে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। পরিবারে নতুন সংযোজন হয়েছে আট মাসের ছেলে আইয়েন ইসলাম।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া আর্থিক অনুদানের টাকায় ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম। টিনের ঘরে ভয় করে, শব্দ হলে রানা প্লাজার ভয়ঙ্কর সেই দিনের স্মৃতি ভেসে ওঠে। তাই পাকা ভবন করেছি। তিনটি তালা লাগিয়ে গেইট করেছিলাম গোয়ালঘরে। সেখান থেকে গর্ভবতী গরু গত ২৭ ডিসেম্বর রাতে চুরি হয়ে গেছে। স্বামীর ভ্যানগাড়িটি চুরি করতে আরও দুইবার হানা দেয় চোর সিন্ডিকেট। তাই চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছি।
রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে এ উপজেলার ১৩টি পরিবারের স্বপ্ন। কয়েক মিনিটেই ভেঙে গেছে এসব পরিবারের শত পরিকল্পনা ও বেঁচে থাকার প্রেরণা। কারও হয়নি বাড়ি করা, বোনের বিয়ে, পিতামাতাকে দুই বেলার অন্ন জোগাড়, ভাইবোনদের লেখাপড়া, সন্তানদের লালন করা, বিয়ের হলুদ রাঙা হাত।