নিউমার্কেটে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির ২৪ নেতার নামে মামলা

ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে নিউমার্কেট এলাকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের উস্কানিদাতা হিসেবে বিএনপির ২৪ নেতাকে চিহ্নিত করে তাদের নামে মামলা ঠুকেছে পুলিশ। সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর আক্রমণ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ভাঙচুর ও জখম করার অভিযোগে মামলায় পুলিশ তাদের আসামি করেছে। গত বুধবার গভীর রাতে নিউমার্কেট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়ামীন কবীর বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

মামলায় অচেনা ২০০ থেকে ৩০০ জন ব্যবসায়ী ও কর্মচারী এবং ৫০০ থেকে ৬০০ জন অচেনা ছাত্রকে আসামি করা হয়। তবে এজাহারে উস্কানিদাতা ও সরাসরি জড়িত ২৪ জনের নাম রয়েছে। তাদের সবাই নিউমার্কেট থানা ও ওয়ার্ড বিএনপি এবং দলটির অঙ্গসংগঠনের নেতা। যদিও এজাহারে তাদের দলীয় পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

ওই মামলার এজাহারে হামলার উস্কানিদাতা হিসেবে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে অ্যাডভোকেট মকবুলকে। এ ছাড়া আমীর হোসেন আলমগীর, মিজান, টিপু, হাজি জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারি, হাসান জাহাঙ্গীর মিঠু, হারুন হাওলাদার, শাহ আলম শন্টু, শহীদুল ইসলাম শহীদ, জাপানি ফারুক, মিজান ব্যাপারী ও আসিফ নামের একজনকে উস্কানিদাতা হিসেবে আসামি করা হয়। অন্য ১২ জনের মধ্যে সরাসরি হামলার আসামি হিসেবে রহমত, সুমন, জসিম, বিল্লাল, হারুন, তোহা, মনির, বাচ্চু, জুলহাস, মিঠু, মিন্টু, বাবুলসহ অচেনা ২০০ থেকে ৩০০ জনের নাম রয়েছে।

তবে এজাহারে নাম থাকা ওই আসামিদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক নম্বর আসামি অ্যাডভোকেট মকবুলের পুরো নাম অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন সর্দার। তিনি নিউমার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি। বর্তমানে তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য। যে দুটি দোকানের কর্মচারীদের নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত; ক্যাপিটেল ফাস্ট ফুড ও ওয়েলকাম ফাস্ট ফুড নামের দোকান দুটির মালিক তিনি। যদিও তার দুই চাচাতো ভাই দোকানগুলো চালান।

দুই নম্বর আসামি আমীর হোসেন আলমগীর নিউমার্কেট থানা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক, মিজান ওই থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক, টিপু ছাত্রদলের নেতা, জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারী নিউমার্কেট বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে মহানগর বিএনপির সদস্য, হারুন হাওলাদার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, জাহাঙ্গীর মিঠু সহসাংগঠনিক সম্পাদক, শন্টু ওরফে নান্টু সহসভাপতি, শহীদ ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও নিউমার্কেট বিএনপির সহসভাপতি, জাপানি ফারুক প্রচার সম্পাদক, মিজান ব্যাপারী যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য সচিব এবং নিউমার্কেট ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক।

সরাসরি আসামি হিসেবে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে রহমত ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক, সুমন ওয়ার্ড কমিটির সদস্য, জসিম থানা কমিটির সদস্য, বিল্লাল ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক, হারুন যুবদলের ওয়ার্ড নেতা, তোহা নিউমার্কেট থানা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক, মনির স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি, বাচ্চু ও জুলহাস ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য, মিঠু, মিন্টু ও বাবুল ওয়ার্ড যুবদলের পদধারী নেতা।

এজাহারে থাকা আসামিদের মধ্যে টিপু দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে রয়েছেন। এ ছাড়া জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারী ওই এলাকায় ব্যবসা করেন না।

ব্যবসায়ী ও ছাত্রদের সংঘর্ষে বিএনপি নেতাদের উস্কানিদাতা হিসেবে আসামি করার বিষয়ে নিউমার্কেট থানার ওসি স. ম. কাইয়ুম বলেন, এজাহারে কোথাও কোনো দলের কথা উল্লেখ নেই। রাজনৈতিক পরিচয়ে কাউকে আসামি করা হয়নি।

ওই এলাকার ব্যবসায়ী নন এবং দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে-এমন ব্যক্তিদের আসামি করার বিষয়ে ওসি বলেন, ‘মামলাটি তদন্তাধীন। এই প্রক্রিয়ায় এর বেশি কথা বলা সম্ভব নয়। তদন্তেই সব বের হবে।’

মামলায় প্রধান আসামি অ্যাডভোকেট মকবুল জানান, তিনি নিউমার্কেট এলাকায় সাত মাস ধরে যান না। ঘটনার সময় তো সেখানে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। নিজে দুটি দোকানের মালিক হলেও তা পরিচালনা করেন তার দুই চাচাতো ভাই। রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্যই পুলিশ তাকে মামলায় জড়িয়েছে।

এজাহারে যাদের নাম রয়েছে তারাও বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের পদধারী নেতা জানিয়ে তিনি দাবি করেন, রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতে পুলিশ সবার নাম জুড়ে দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ কয়েক বছর ধরে বিদেশে।

মামলাটির এজাহারে বাদী বলেছেন, গত সোমবার রাত পৌনে ১২টার দিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি ভাঙচুর থামানোর চেষ্টা করেন। ছাত্ররা তখন নিউমার্কেটের দুই নম্বর গেটের ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে। শিক্ষার্থীদের বাধা দিলে তারা নিউমার্কেট থেকে ঢাকা কলেজের দিকে চলে যায় এবং কলেজের গেটের সামনে বাঁশের লাঠি, রড, দা, হকিস্টিকসহ অবস্থান নেয়।

এতে বলা হয়, রাত ২টা ৩৫ মিনিটের দিকে এজাহারভুক্ত (১ থেকে ১২ নম্বর) আসামিদের উস্কানিতে ও এজাহারভুক্ত অপর ১২ জনসহ ২০০ থেকে ৩০০ জন ব্যবসায়ী ও কর্মচারী লাঠি, রড ও হকিস্টিক নিয়ে নিউমার্কেট থেকে দৌড়ে গিয়ে ঢাকা কলেজের দিকে ইটপাটকেল ছোড়ে। তখন ঢাকা কলেজের ৫০০ থেকে ৬০০ ছাত্র পাল্টা ইটপাটকেল ছোড়ে। উভয় পক্ষকে নিবৃত করতে গেলে ১০ থেকে ১৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হন।

ওই এজাহারে বলা হয়, সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ ৮৮টি টিয়ার গ্যাসের শেল ও ২১১ রাউন্ড শটগানের গুলি ছোড়ে।

Share this post

scroll to top