ময়মনসিংহে হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে আরও দুই হত্যা: গ্রেফতার ৩

ময়মনসিংহের ত্রিশালে হত্যা মামলায় স্বাক্ষ্য দেওয়ার জেরে সাক্ষীকে হত্যার ঘটনায় জড়িত স্থানীয় ভূমিদস্যু চক্রের মূলহোতা ‘জিলানী বাহিনীর’ প্রধান আব্দুল কাদের জিলানীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১৪ এর আভিযানিক দল।

বুধবার রাতে গাজীপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে জিলানী বাহিনীর প্রধান আব্দুল কাদের জিলানী, তার ভাই আব্দুস সোবহান ও ছেলে রাকিবুল ইসলামকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

র‌্যাব জানায়, চক্রটি স্থানীয় কৃষকদের জমিদখল করে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রি করে আসছিল। এর প্রতিবাদ করায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিন মাস্টার ও রফিকুল ইসলামকে হত্যা করে। এই হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে তারা আরও একটি হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

বৃহস্পতিবার র‌্যাব সদর দপ্তর থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠায় র‌্যাব-১৪ এর মিডিয়া অফিস।

এদিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ ব্রিফিংয়ে কমান্ডার মঈন বলেন, ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার জামতলী গ্রামে গত ১৪ এপ্রিল রাতে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা আবুল কালাম ও তার দুই ভাতিজাকে বাড়ির সামনে হত্যার উদ্দেশে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে আবুল কালাম ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এই ঘটনায় নিহতের ভাতিজা বাদী হয়ে ত্রিশাল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এলাকাবাসী হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার রাতে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আব্দুল কাদের জিলানীর বাঁশ ঝাড় থেকে হত্যায় ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

যেভাবে একের পর এক হত্যা

র‌্যাব জানায়, নিহত আবুল কালামের ভাতিজা সোহাগ নিহত স্কুল দপ্তরি রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলার সাক্ষী ছিলেন। আর চার বছর আগে মুক্তিযোদ্ধা মতিন মাস্টার হত্যার ঘটনায় মিটিং মিছিল করেছিলেন রফিকুল ইসলাম। তাকেও খুন করার পর জীলানিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হলে সোহাগ আদালতে স্বাক্ষী দেন। এতে জিলানী ও তার সহযোগীরা তাকে মারধর করেন ও হত্যার হুমকি দেন। এরই একপর্যায়ে ১৪ এপ্রিল রাতে তার ওপর সশস্ত্র আক্রমণ চালানো হয়। পরবর্তীতে তার চিৎকারে চাচা আবুল কালামসহ তার ছোট ভাই ও চাচাতো ভাই তাকে উদ্ধারে এগিয়ে এলে আব্দুল কাদের জিলানীসহ নয়জন তাদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালান। পরবর্তীতে সবাইকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে আবুল কালাম আজাদ মারা যান।

মঈন বলেন, মূলত বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিন মাস্টার হত্যা মামলা এবং রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলা থেকে বাঁচার জন্য তারা আবুল কালাম আজাদকে হত্যা করে।

তিনি জানান, জিলানীর নেতৃত্বে চক্রটি জালিয়াতির মাধ্যমে এলাকার কৃষকদের জমি দখল করে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে অতিরিক্ত মুনাফায় বিক্রি করত। মুক্তিযোদ্ধা মতিন মাস্টার ওই এলাকার একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ১৯ বছর ধরে একটি রাজনৈতিক দলের ওয়ার্ড সভাপতি ছিলেন। তিনি জীলানির এই কাজের প্রতিবাদ করায় ২০১৮ সালে ৪ জুলাই রাতে মতিন মাস্টারকে হত্যা করে আব্দুল কাদের জিলানী ও তার বাহিনী। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হলে তদন্তে জিলানীর ভাই তোফাজ্জল হোসেন, মোফাজ্জল হোসেন ও তার আরেক সহযোগী মো. মোবারক হোসেনসহ আটজনের নামে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ।

এরপর এই মামলা থেকে বাঁচতে স্থানীয় কাউকে হত্যা করে মতিন মাস্টার হত্যা মামলার সাক্ষীদের ভয় দেখিয়ে আদালতে হাজিরা দেওয়া থেকে বিরত রাখার পরিকল্পনা করেন জিলানী। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল রাতে স্থানীয় স্কুলের দপ্তরি রফিকুল ইসলামকে হত্যা করা হয়। এই রফিকুল মতিন মাস্টার হত্যার বিচারের দাবিতে মিছিল মিটিং করে আসছিলেন।

দপ্তরি রফিকুল ইসলাম হত্যায় জিলানীসহ পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। একপর্যায়ে রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলার সাক্ষী মো. সোহাগকেও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সাক্ষী সোহাগকে ঘটনার দিন রাতে হত্যার উদ্দেশে হামলা করা হলে তার চাচা আবুল কালাম এগিয়ে এলে নির্মমভাবে খুন হন।

কমান্ডার মঈন বলেন, আব্দুল কাদের জিলানী এলাকায় সন্ত্রাসী, ভূমি দখল ও বিভিন্ন অপকর্মের জন্য ২০ থেকে ২৫ জনের একটি বাহিনী গড়ে তুলেছেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় দুইটি হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজি ও সরকারি কাজে বাধা প্রদান সংক্রান্ত মোট ১২টি মামলা ও ১০টি জিডি রয়েছে। তিনি বিভিন্ন মামলায় একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন।

Share this post

scroll to top