আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার (উদ্যান) মেলা দেখতে ১৫০ কর্মকর্তা নেদারল্যান্ডস সফরে যাচ্ছেন। কৃষি মন্ত্রণালয় ও এর দপ্তর-সংস্থা থেকে ইতোমধ্যে ১০০ জনের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাকি নামের তালিকা প্রক্রিয়াধীন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
আরও জানা যায়, কৃষি মন্ত্রণালয় ছাড়াও এই মেলা পরিদর্শনে সরকারের নীতিনির্ধারণী একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তাদেরও সঙ্গে নেওয়া হচ্ছে।
এর মধ্যে রয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমটির সদস্য অর্থাৎ সংসদ-সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশন, আইএমইডি, অর্থ বিভাগ, পররাষ্ট্র, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা।
সামান্য একটি মেলায় শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দীর্ঘ তালিকা দেখে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আপত্তি জানানো হয়েছিল। এতেও তালিকা ছোট হয়নি। শুধু তাই নয়, কেউ কেউ যাচ্ছেন স্বামী-স্ত্রীসহ। এরই মধ্যে ওই ১০০ জনের অনেকে সফর শুরু করেছেন। তাদের দুই-একজন নেদারল্যান্ডস থেকে ইউরোপ সফরে বেরিয়ে পড়ছেন।
‘সবুজ নগর গড়ে তোলা’-এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নেদারল্যান্ডসের আলমেয়ারে আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সিবিশন (ফ্লোরিয়েড এক্সপো-২০২২) শুরু হয়েছে। এতে সরকারিভাবে প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করছে বাংলাদেশ।
৬ মাসব্যাপী এ প্রদর্শনী উদ্বোধন হয়েছে বুধবার। বাংলাদেশসহ প্রায় ৩৩টি দেশ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করছে। আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সিবিশন প্রতি দশকে একবার নেদারল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত হয়। এবার বসেছে প্রদর্শনীর সপ্তম আসর।
মেলাসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ ধরনের মেলায় মূলত বাংলাদেশ সম্পর্কে অন্য দেশের উদ্যোক্তারা বিভিন্ন বিষয় জানতে চান। এসব প্রশ্নের উত্তর স্থানীয় অভিজ্ঞদের মাধ্যমে দেওয়ার জন্য স্টলে এক-দুইজনকে স্টলে রাখতে হয়।
নেদারল্যান্ডসে ডাচ, ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। সেখানে বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের কেউ প্রশ্নকারীদের ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে পারবেন না।
করোনার প্রভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতি পূরণে যখন সব ধরনের খরচে কৃচ্ছ সাধনে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, তখন একটি মেলাকে কেন্দ্র করে এমন বিদেশ সফরকে ‘প্রমোদভ্রমণ’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভ্রমণের তালিকায় আছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব সায়েদুল ইসলাম। তিনি রোববার বলেন, ‘সবাই একসঙ্গে যাবে না, পর্যায়ক্রমে যাবেন। বাংলাদেশের কৃষিকে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার জন্য এই মেলা বিশাল সুযোগ।’
শতাধিক কর্মকর্তা যাওয়াসংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘একটি তালিকা আগে থেকে পাঠিয়ে রাখতে হয়। না হলে সে দেশের সরকার যখন-তখন যে কাউকে গ্রহণ করতে চায় না। যাদের তালিকা করা হয়েছে, তাদের সবাইকে পাঠানো হবে না।’
তিনি আরও জানান, ‘নেদারল্যান্ডসে থেকে পড়াশোনা করছেন-এমন বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে মেলায় থাকা বাংলাদেশের স্টলে কাজ করানোর বিষয়ে আমাদের দূতাবাসের সঙ্গে কথা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সামারি ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সর্বনিু অফিসার যাওয়ার অনুশাসন এসেছে, আমরা সেভাবেই কাজ করছি।’ একজন অতিরিক্ত সচিবের নেদারল্যান্ডস থেকে স্ত্রীসহ সুইডেন চলে যাওয়ার বিষয়ে সায়েদুল ইসলাম বলেন, মেলায় আমাদের স্টলের জন্য অনেক কিছু সংগ্রহ করতে ইউরোপের দেশে যাওয়ার দরকার হয়। এমন কাজে কেউ কেউ নেদারল্যান্ডসের বাইরে যেতে পারেন।’
কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে তৈরি করা তালিকায় সাতটি বিশেষ টিমের সদস্য হিসাবে নেদারল্যান্ডস সফরে যাচ্ছেন ৩৩ জন। এর বাইরে প্রতি টিমে ৩ জন করে ১৮টি টিম গঠন করা হয়েছে। যারা মেলার ছয় মাসের বিভিন্ন সময়ে নেদারল্যান্ডসে অবস্থান করবেন।
এর বাইরে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১০ সংসদ-সদস্যসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা নিয়ে পৃথক আরও দুটি টিম সফরে যাবে। এছাড়া সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অফিসারদের সমন্বয়ে পৃথক একটি মনিটরিং টিম গঠন করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেই তালিকায় কারা থাকবেন, তাদের নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানা গেছে।
১৬ মার্চ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ৩০ জন কর্মকর্তার নেদারল্যান্ডস সফরের আদেশ জারি করা হয়েছে। এতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব, একাধিক অতিরিক্ত সচিব, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা কমিশনের অতিরিক্ত সচিবসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা রয়েছেন।
মেলায় অংশ নিতে বর্তমানে নেদারল্যান্ডসে অবস্থান করছেন বছরব্যাপী ফল উৎপাদনসংক্রান্ত একটি প্রকল্পের পরিচালক মেহেদী মাসুদ। শনিবার টেলিফোনে তিনি বলেন, এই মেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল হর্টিকালচার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হতে পারবে বাংলাদেশ।
এতে এ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক জ্ঞান বিনিময়ের সুযোগ হবে। এছাড়া দেশীয় বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য নিয়ে এসেছে, যেগুলোর অনেক অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে।
সর্বশেষ ১২ এপ্রিল জারি করা অফিস আদেশ অনুযায়ী, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব সায়েদুল ইসলামের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দলের জন্য অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে।
এতে রয়েছেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রুহুল আমিন তালুকদার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বেনজির আলম ও কৃষি সচিবের একান্ত সচিব গোলাম রাব্বি।
৭ এপ্রিল জারি করা অফিস আদেশে রয়েছেন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব তাজখেরা খাতুন, উপসচিব ইশরাত রেজা ও কৃষিমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব হাবিবুল আলম।
একই আদেশে যুগ্মসচিব তাজখেরা খাতুনের স্বামী মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানকে সঙ্গী করা হয়েছে। আদেশে এই ব্যক্তির খরচ ব্যক্তিগতভাবে বহনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
৬ এপ্রিলের অফিস আদেশে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালহা যুবায়ের মাশরুর ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পুষ্টি উন্নয়নের জন্য বছরব্যাপী ফল উৎপাদনসংক্রান্ত প্রকল্পের কর্মকর্তা রাসেল আহমেদের নাম রয়েছে।
৫ এপ্রিলের আদেশে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাসানুজ্জামান কল্লোল, উপসচিব জসিম উদ্দিন ও কৃষি তথ্য সার্ভিসের প্রধান তথ্য অফিসার সুরাজিত সাহা রায়ের নাম রয়েছে।
৪ এপ্রিলের আদেশে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বলাই কৃষ্ণ হাজরা ও উপসচিব আলী আকবরের নামের সঙ্গে রয়েছে হাসি হাজরার নামও। হাসি হাজরা বলাই কৃষ্ণ হাজরার স্ত্রী। তার খরচ নিজেই বহন করার কথা বলা হয়েছে আদেশে।
তাদের মধ্যে হাজরা দম্পতি নেদারল্যান্ডসে একদিন অবস্থান করে এখন সুইডেনে অবস্থান করছেন বলে নেদারল্যান্ডসে অবস্থান করা অন্য কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে।
গত ২৮ মার্চের আদেশে নাম রয়েছে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কমলারঞ্জন দাস, পরিকল্পনা কমিশনের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার আহসান হোসেইন, বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচার ডেভেলমেন্ট করপোরেশনে (বিএডিসি) কর্মরত যুগ্মসচিব আমিরুল ইসলাম।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান (কৃষি ও পানিসম্পদ) মোহম্মদ সোলায়মান, একই মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রধান বৈশাখী বড়ুয়া, বিএডিসির প্রধান প্রকৌশলী (স্টোর-ওয়ার্কশপ ডিভিশন) মোহাম্মদ বদিউল আলম সরকার, বৃহত্তর বগুড়া ও দিনাজপুর জেলা মাইনর ইরিগেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এসএম শহীদুল আলম, বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী (বগুড়া জোন) প্রিয়নাথ রায়।
১৬ মার্চের আদেশে আছেন পুষ্টি উন্নয়নের জন্য বছরব্যাপী ফল উৎপাদনসংক্রান্ত প্রকল্পের পরিচালক মেহেদী মাসুদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (বীজ) জাকির হাসনাত, অতিরিক্ত উপপরিচালক (সবজি) শামীম আহমেদ ও হর্টিকালচার সেন্টারের গার্ডেনার রবি শেখ।