বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে এবং পরে পশ্চিমা বিশ্বের কিছু দেশ এবং সংস্থা নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং ফলাফল নিয়ে সমালোচনা করেছিল।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠানোর প্রশ্ন প্রথমেই নাকচ করে দিয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তারা এই নির্বাচন বা ফলাফল নিয়ে কোন মন্তব্যও করবে না বলেও জানিয়েছিল।
কিন্তু সেই নির্বাচনের পরেই ইউরোপের কয়েকটি দেশের সরকার প্রধান দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্বাচনে জেতার জন্য স্বাগত জানায়।
আর আজ প্রধানমন্ত্রী ইউরোপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ জার্মানিতে যাচ্ছেন।
নির্বাচনের আগে যে পশ্চিমা দেশগুলো সমালোচনায় করেছিল তারা কেন শেখ হাসিনার সরকারকে স্বাগত জানিয়ে তাদের আস্থা প্রকাশ করছে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক রোকসানা কিবরিয়া বলছিলেন, একটি নির্বাচিত সরকারের সাথে যদি বৃহৎ শক্তির নীতির কোন বিঘ্ন না ঘটে সেক্ষেত্রে সেই দেশের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা তারা দেখবে না।
“নির্বাচনের আগে কী বলেছে, নির্বাচনে কী হয়েছে – সেটা তাদের জন্য বড় কথা না। তাদের কথা হল নির্বাচনের পরে সরকার কী ধরণের পলিসি (নীতি) নেয় সেটা।”
মিজ. কিবরিয়া বলেন, পশ্চিমা বিশ্ব দেখবে সেই নীতিগুলো তাদের স্বার্থের পক্ষে আসছে নাকি বিপক্ষে আসছে।
‘পক্ষে থাকলে তারা অনেক কিছুই তারা দেখবে না। সেটা নিয়ে তারা ততটা ইস্যু করবে না। আন্তর্জাতিক রাজনীতির এটাই ট্রেন্ড।’
এদিকে গত ১১ই ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন কংগ্রেসের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি।
কমিটির সদস্যরা একটি চিঠিতে গত বছরের ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগগুলোকে কংগ্রেসের সদস্যরা ‘গণতন্ত্রের জন্য হুমকি’ বলেও অভিহিত করেছেন।
সাবেক রাষ্ট্রদূত নাসিম ফেরদৌস বলছিলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বড় বিষয় প্রত্যেকটা দেশ নিজের স্বার্থটা দেখে।
সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে উন্নয়ন এবং স্থিতিশীল থাকলে তারাও অংশীদার হবে।
‘পশ্চিমা দেশ বলেন বা অন্য যে দেশ বলেন তারা আশা করছে বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা আসুক, সেখানে কোন সন্ত্রাসবাদের স্থান থাকবে না। সেটা আমাদের প্রতিবেশী দেশরাও আশা করছে, পশ্চিমারাও।’
কারণ এখানে যদি অশান্তি হয় সেটা স্ফুলিঙ্গের মত অন্য জায়গায় উড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
‘সুতরাং শান্তি বজায় রেখে প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানো এবং প্রগ্রেস যেটা বলে আন্তর্জাতিকভাবে সেই পথে যদি বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারে তাহলে পশ্চিমা দেশ এবং অন্য দেশের স্বার্থ পূরণ হবে,’ এমনটাই মনে করেন সাবেক এই রাষ্ট্রদূত।
‘তাই তাদের কাছে এটা গ্রহণযোগ্য এবং এই সরকারকে তারা এভাবেই গ্রহণ করেছে।’
দেশীয় কয়েকটি পর্যবেক্ষণ সংস্থায় আর্থিক সহায়তা করলেও সরকারি পর্যবেক্ষক পাঠায়নি যুক্তরাজ্য, সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্ক।
নির্বাচন নিয়ে যেমন প্রশ্ন তোলে তেমনি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক চর্চা নিয়ে প্রশ্ন তোলে কিছু দেশ এবং পশ্চিমা সংস্থা।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে নির্বাচনকে ঘিরে এসব অভিযোগকে দুঃখজনক বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। নানা অভিযোগ নির্বাচনকে কলুষিত করেছে বলে মন্তব্য করেছিল ইয়োরোপীয় ইউনিয়ন। অনিয়মের অভিযোগের বিষয় সব পক্ষকে একসাথে কাজ করতে বলছিল যুক্তরাষ্ট্র।
আবার একই সাথে নির্বাচিত হওয়ায় শেখ হাসিনার সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে তারা।
এ প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির বলছিলেন, বাংলাদেশের নানা দিকে ইতিবাচক যে বিবর্তন হয়েছে সেটা দীর্ঘমেয়াদে আঞ্চলিক শান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে তারা মনে করছেন।
‘প্রশ্ন যেটা আছে সেটা তারা রাখছে একটা ট্র্যাকে। কিন্তু পাশাপাশি এই যে বাংলাদেশের ইতিবাচক বিবর্তন সেটাকে তারা মনে করে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের ইতিবাচক পরিবর্তন যেমন বাংলাদেশের মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তেমন আঞ্চলিক উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।’
মি. কবির বলেন, ‘সেটাকে তারা ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হিসেবে গ্রহণ করে। আমি মনে করি তারা মনে এই জায়গাটাতে বাংলাদেশের সাথে কাজ করা প্রয়োজন, এবং সেই জায়গায় তারা সকলেই কাজ করতে আগ্রহী।’