হিজাবের পর এবার মাইকে আজান নিষিদ্ধের দাবি কর্ণাটকে

দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্য কর্ণাটকে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো প্রশাসনের কাছে দাবী তুলেছে যে মসজিদ থেকে মাইক বাজিয়ে আজান দেওয়া বন্ধ করতে হবে। শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধি ভেঙ্গে বিনা অনুমতিতে মাইক বাজিয়ে আজান দেওয়া হচ্ছে বলে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর অভিযোগ।

কর্নাটকে উগ্র হিন্দুত্ববাদ প্রচারের জন্য পরিচিত সংগঠন শ্রীরাম সেনে বলছে মসজিদগুলো থেকে মাইক বাজিয়ে যে আজান দেওয়া হয়, তাতে রাজ্যের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ আইন ভঙ্গ করা হচ্ছে।

আজানের সময় মাইক যাতে ব্যবহার না করা হয়, সেটা পুলিশ প্রশাসনকে সুনিশ্চিত করার দাবীও তোলা হয়েছে।

কর্ণাটকে সক্রিয় অন্যতম হিন্দু সংগঠন হিন্দু জনজাগৃতি সমিতির রাজ্য মুখপাত্র মোহন গৌড়া বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন যে তারা আজানের বিরুদ্ধে নন, কিন্তু মানুষের অসুবিধা করে মাইকে কেন আজান দেওয়া হবে?

গৌড়ার কথায়, ‘বেঙ্গালুরু শহরের বিভিন্ন থানায় তথ্যের অধিকার আইন অনুযায়ী আমরা জানতে চেয়েছিলাম যে কোন মসজিদে কতগুলো মাইক ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। থানাগুলো থেকে জানানো হয়েছে যে এধরণের কোনও অনুমতি তারা দেয় নি।

‘এর আগে কর্ণাটক হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল বেআইনী মাইক বাজেয়াপ্ত করতে হবে। সেই নির্দেশও পুলিশ মানে নি। এদিকে রাজ্য স্তরের বিভিন্ন পরীক্ষা চলছে আর মাইকে আজান দেওয়া হলে অসুবিধা হচ্ছে – এই মর্মে বেঙ্গালুরু শহরেই ১২৫টি অভিযোগ জমা পড়েছে,’ বলে জানান গৌডা।

এর আগে কন্নড় নববর্ষের সময়ে গৌড়ার সংগঠনই দাবী তুলেছিল যে হালাল মাংস বিক্রি বন্ধ করতে হবে রাজ্যে।

তারও আগে বড়সড় বিতর্ক বেধেছিল মুসলমান ছাত্রীদের হিজাব পরে ক্লাস করা নিয়ে। সেই মামলা এখন সুপ্রীম কোর্টে পৌঁছেছে। তারই মধ্যে হিন্দুত্ববাদীদের নতুন দাবী মাইকে আজান দেওয়া বন্ধ হোক।

বিশ্লেষকদের মতে, এসবই করা হচ্ছে আগামী বিধানসভা ভোটের আগে ধর্মীয় মেরুকরণের জন্য। কর্নাটকের বিধানসভা নির্বাচনের বাকি আছে এক বছরেরও কম সময়। এর আগের ভোটে বিজেপি পরাজিত হলেও কংগ্রেস আর জেডি এস বিধায়কদের দল বদল করিয়ে তাদের সমর্থন নিয়ে সরকার গড়েছিল বিজেপি।

কিন্তু এবার কংগ্রেস আর বিজেপির মধ্যে সমানে সমানে টক্কর হতে পারে, তাই সতর্কতা হিসাবে ধর্মীয় মেরুকরণ করিয়ে কিছু বাড়তি সিট নিশ্চিত করতে চাইছে বিজেপি, এমনটাই মনে করেন বেঙ্গালুরুতে বিবিসির জন্য কাজ করেন এমন একজন সাংবাদিক ইমরান কুরেশি।

কর্ণাটকের যা রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে মূল লড়াইটা হবে বিজেপি আর কংগ্রেসের মধ্যে। যদিও জে ডি এসের কিছু জনসমর্থন আছে, তবে তা সীমিত। বিজেপি আর কংগ্রেস দুই দলেরই ৯০ থেকে ১০০র কাছাকাছি আসন পাওয়ার একটা সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

‘কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য যে সংখ্যাটা দরকার, সেই ১১২টি আসন কে পাবে, তা নিশ্চিত নয়। তাই বিজেপি এই ধর্মীয় মেরুকরণের কৌশলটা নিয়েছে যাতে নিজেদের আসনসংখ্যাটা যতটা সম্ভব বাড়িয়ে নেওয়া যায়,’ বলছিলেন ইমরান কুরেশি।

হিজাব, হালাল আর আজানের পর মঙ্গলবার হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো নতুন দাবী তুলেছে যে আগামী আমের মরসুমে মুসলমান ফল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে যাতে কেউ আম না কেনেন।

আবার হিজাব পরে পরীক্ষাকেন্দ্রে কোনও শিক্ষিকা গার্ড দিতে পারবেন না, এমন নিয়ম আনার কথাও সরকারের চিন্তায় রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে কর্নাটক যেন হয় উঠছে হিন্দুত্ববাদের এক নতুন পরীক্ষাগার।

Share this post

scroll to top