বাংলাদেশে মাছ চাষে ঔষধের যেমন ব্যবহার রয়েছে, অপব্যবহারও হয় ব্যাপক পরিমাণে। অধিকাংশ ঔষধ ব্যবহার করা হয় পানির গুনাগুণ রক্ষা এবং রোগর প্রতিকার ও প্রতিরোধের জন্য। অথচ মাছ চাষে ঔষধের ব্যবহার কমানোর জন্য কোনো প্রণোদনার ব্যবস্থা সরকারি সহযাগিতা না থাকায় বেসরকারি সংস্থাগুলার অদক্ষ জনবল নিয়েই পরিচালিত হচ্ছে এই খাত।
‘মাছ চাষে ঔষধের ব্যবহারের প্রয়াজনীয়তা মূল্যায়ন’ শীর্ষক একটি গবেষণা শেষে এসব তথ্য দিয়েছেন প্রকল্পের প্রধান গবষক ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক। প্রকল্পটির আওতায় বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) সকাল ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের সভাকক্ষে আয়াজিত এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি জানান, বাংলাদেশে মাছ চাষিরা ঘনঘন মাছের রোগের প্রাদুর্ভাবের জন্য আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই রোগ নিরাময়ে ঔষধের ব্যবহার অপরিহার্য। কিন্তু ঔষধের সঠিক ব্যবহার প্রণালি না জানা, সামাজিক প্রেক্ষাপট ও প্রভাবকগুলা সম্পর্ক পরিষ্কার ধারণা না থাকায় মাছ চাষে ঔষধের ব্যাপক অপব্যবহার হচ্ছে। এর ফলে পরিবেশ, জনস্বাস্থ ও খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে। সামগ্রিকভাব মাছ চাষে ঔষধ প্রয়াগের ক্ষেত্রে ৬১ শতাংশ সঠিক ডোজ ব্যবহার করা এবং ৮২ শতাংশ ক্ষেত্রে চিকিৎসার সঠিক সময়সীমা মেনে ঔষধ ব্যবহার করা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুকুরের পানি ও মাটি ব্যবস্থাপনায় এসব ঔষধ প্রয়াগ করা হয় বিধায় ঔষধের প্রোবায়াটিক কার্যকারিতা সবচেয়ে কম। তাই এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ের চাষিদের কাছে ঔষধের ভ্যালু চেইন ম্যাপ তৈরি, বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা এবং বিচক্ষণতার সাথে ঔষধের ব্যবহার নিশ্চিত করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়।
তিনি আরো বলেন, প্রকল্পের আওতায় ময়মনসিংহ জেলার তিনটি উপজলায় জরিপ করা হয়। মৎস্য চাষি, দোকান মালিক, কোম্পানির এজেন্ট ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে, মাছ চাষে ঔষধের অপব্যবহারের প্রধান কারণ তিনটি। এগুলা হলা শিক্ষার অভাব, আইনের দুর্বল বাস্তবায়ন ও রোগ নির্ণয় অপ্রতুলতা। মাছ চাষিরা ঔষধের প্রাপ্যতা, আগ্রহ ও পছন্দের ক্ষেত্রে ঔষধের দোকানদারদের ইচ্ছা ও পছন্দ দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়।
তাই ভালো মানের মাছ উৎপাদনের জন্য তরল ঔষধের যথার্থ প্রয়াগ, ঔষধ শিল্প পর্যবেক্ষণ জাতীয় নীতি প্রণয়ন এবং ব্যবহারবিধি ও ব্যবস্থাপনা বিষয় মাছ চাষি ও দোকান মালিকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার উপর তিনি জোর দেন।
বাকৃবির মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোঃ আবুল মনসুরের সভাপতিত্বে প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসব উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি রিসার্চ সিস্টেমের (বাউরেস) পরিচালক অধ্যাপক ড. মোঃ আবু হাদী নূর আলী খান। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সালাম, বাংলাদেশ মাৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) পরিচালক ড. মো. খলিলুর রহমান, মৎস্য অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ বিভাগ উপ-পরিচালক ড. মোঃ আফতাব হোসেন। এছাড়া অনুষদের বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধানগণ, ময়মনসিংহের বিভিন উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তাবৃন্দ ও মাছ চাষিরা কর্মশালায় অংশ নেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মোঃ আবু হাদী নূর আলী খান বলেন, এসব গবেষণা প্রকল্পের সাফল্য মাঠ পর্যায় থেকে তুলে আনতে হবে। চাষীদের অবশ্যই মাছ চাষে সচেতন হতে হবে।