আমরা কেন ঘুমাই? এর বৈজ্ঞানিক কারণ হচ্ছে, মস্তিষ্কের মেডালা ও মিডব্রেনের মাঝখানে রয়েছে ওয়েকিং সেন্টার বা জাগৃতি কেন্দ্র। জাগৃতি কেন্দ্র যখন কাজ করে তখন আমরা জেগে থাকি। আর এ কেন্দ্রটি যখন কাজ বন্ধ করে দেয় তখন আমরা ঘুমিয়ে পড়ি। জাগৃতি কেন্দ্রের কাজ নিয়ন্ত্রিত হয় হরমোন সঙ্কেত দ্বারা। আর এই হরমোন নিঃসরণের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয় শরীর, মনের অবস্থা দ্বারা।
শরীর-মনের অবস্থা অনুসারে হরমোনের মাত্রা কমতে কমতে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় এলে জাগৃতি কেন্দ্র কাজ বন্ধ করে দেয়, ফলে আমরা ঘুমিয়ে পড়ি।
মাঝে মধ্যে কেন ঘুম আসে না? এর কারণ ব্রেনের জাগৃতি কেন্দ্রকে পরিচালিত করে যে হরমোন তার নিঃসরণ মাত্রা হ্রাস না পাওয়া। হরমোন নিঃসরণ অব্যাহত রয়েছে জাগৃতি কেন্দ্র সক্রিয় রয়েছে, আপনি জেগে থাকছেন। ঘুমানোর ইচ্ছে সত্ত্বেও ঘুম আসছে না।
হরমোনের স্বাভাবিক এই ওঠা-নামায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে স্ট্রেস বা টেনশন। এই অশান্তি, অস্থিরতাই হরমোনের স্বাভাবিক প্রবাহকে ব্যাহত করে। ফলাফল অনিদ্রা।
মুক্তির উপায় : অনিদ্রার কারণ অনুসন্ধান করুন। মনোদৈহিক সমস্যার ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানী বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সহায়তায় তা দূর করার চেষ্টা করুন। ঘুমের ওষুধ অনিদ্রার সমাধান নয়। সাময়িকভাবে উপকৃত হলেও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষেত্রে এটি শারীরিক-মানসিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। ঘুমানোর জন্য প্রথম মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। ঢিলেঢালা আরামদায়ক পোশাক পরুন। ঘরে হালকা আলো জ্বেলে রাখুন। ঘুমাতে যাওয়ার ১ ঘণ্টা আগে থেকে প্রচুর পানি পান থেকে বিরত থাকুন। ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঝগড়া, বিবাদ, বিতর্ক এড়িয়ে চলুন। রাতে উত্তেজনাপূর্ণ হরর, ভায়োলেন্স, পরকীয়াপূর্ণ টিভি সিরিয়াল ও মুভি দেখবেন না। এগুলো স্নায়ুবিক উত্তেজনা, উৎকণ্ঠা, অনিদ্রা, দুঃস্বপ্ন ও হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান এবং একই সময়ে জেগে উঠুন। বিছানায় যাওয়ার আগে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করুন। ঘুমানোর আগে কিছুক্ষণ গো মুখাসন (যোগ ব্যায়াম) করুন। এরপর শবাসনে মেডিটেশন বা ধ্যানে সুন্দর কল্পনা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ুন। নিয়মিত দু’বেলা মেডিটেশন বা ধ্যান একদিকে যেমন আপনাকে স্ট্রেস বা টেনশনমুক্ত করবে অন্যদিকে মেডিটেশনের ‘আয় ঘুম আয়’ টেকনিক আপনাকে নিয়ে যাবে প্রশান্তিময় ঘুমের রাজ্যে।
লেখক: কো-অর্ডিনেটর, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন, শান্তিনগর, ঢাকা।