‘আত্মহত্যা নয়, ছাদ থেকে ফেলে সুমাইয়াকে মেরে ফেলেছে জ্বিন!’

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় একমাসের ব্যবধানে দুইবার ছাদ থেকে লাফ দেয়ার পর অবশেষে মারাই গেছেন মোসাম্মাৎ সুমাইয়া (১৯) নামে এক গৃহবধূ। শুক্রবার ভোরে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

তবে সুমাইয়ার মৃত্যু আত্মহত্যা মানতে নারাজ তার পরিবার ও স্থানীয়রা। তাদের ভাষ্য, সুমাইয়াকে জ্বিনে ধরেছিল। জ্বিনের কারণেই তাকে এভাবে মরতে হলো।

জানা গেছে, নিহত সুমাইয়ার পিতা হাফিজুর রহমান (৫২) ভাঙ্গা পৌর এলাকার কাপুড়িয়া সদরদি মহল্লার দাড়িয়ারমাঠ কওমি মাদরাসার একজন শিক্ষক। পাশাপাশি হজ্ব এজেন্সির প্রতিনিধি হিসেবে সৌদিতে লোক পাঠান। এলাকায় ধর্মপ্রাণ পরহেজগার হিসেবে পরিচিত। বাবার মাদরাসা থেকেই পড়াশুনা শেষে আড়াই বছর আগে কাপুড়িয়া সদরদি গ্রামের হাশমত মুন্সির (৬৫) বিদেশফেরত ছেলে মুন্সি চান মিয়ার (২৬) সাথে সুমাইয়ার বিয়ে হয়। তাদের সংসারে এক বছরের একটি সন্তান রয়েছে। মেয়ে জামাইয়ের বাড়ির কাছে সুমাইয়ার বাবা হাফিজুর রহমান একটি বাসায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন।

স্থানীয়রা জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্বামীর বাড়ির ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হয় সুমাইয়া। এরপর তাকে প্রথমে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ফরিদপুরের বিএসএমএমসি হাসপাতালে নেয়া হয়। এর মাসখানেক আগেও সে এভাবে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে। তাতে তার হাত-পা ভেঙ্গে যায়। এরপর হাসপাতাল থেকে ব্যান্ডেজ করে বাসায় ফিরলেও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেনি সে। তার চিকিৎসা চলছিলো। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্বামীর বাড়ির ছাদ হতে আবার লাফ দেয় সুমাইয়া।

সুমাইয়ার বাবা হাফিজুর রহমান বলেন, তার মেয়ের উপরে জ্বিনের নজর ছিলো। ওই খারাপ জিনিসটাই তাকে বারবার মেরে ফেলতে চেষ্টা করে যাচ্ছিল। গত মাসে পারেনি। এবার সে হাত-পা ভাঙ্গা অবস্থাতেই লাফ দিয়ে মারা গেল।

সুমাইয়ার স্বামী মুন্সি চান মিয়া বলেন, ঘটনার সময় আমি বাইরে ছিলাম। খবর পেয়ে বাড়ি এসে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে ভোরের দিকে ফরিদপুরের মেডিক্যাল হাসপাতালে মারা যায় সে। তিনি বলেন, তার স্ত্রী সুমাইয়ার কোনো শারীরিক সমস্যা ছিল না। তবে মাঝেমধ্যে সে পাগলামি করতো। সবাই বলতো ওর উপর জ্বিনের প্রভাব আছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে হুজুর দেখাতাম। মাঝে একটু ভালো ছিল। কিন্তু তারপর আবার সেরকমই হলো।

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুন্সি জাকির হোসেন বলেন, মাসখানেক আগে সুমাইয়া এভাবে লাফ দেয়ার পর শরীরের হাড় ভেঙে যায়। তারপর হাসপাতালে অপারেশন করে রড দিয়ে হাড় জোড়া দেয়া হয়েছিল। গতকাল লাফ দেয়ার পর শরীরের ওই রড বের হয়ে রক্তক্ষরণ হয়। তিনি বলেন, মাদরাসায় পড়া অবস্থাতেই সুমাইয়ার উপর জ্বিনের ভাব ছিলো। তার নিজেরও মাদরাসা পড়ুয়া একটি মেয়ের এমন জ্বিনের ভাব আছে বলে জাকির মুন্সি জানান।

ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা: মোহসিন ফকির জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুমাইয়াকে মুমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তার রক্তক্ষরণ হচ্ছিল এবং শরীরে ভাঙাচোরা ছিলো। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ফরিদপুরে পাঠানো হয়। রাতে সেখানে মারা যায় সে। সুমাইয়ার ছাদ থেকে লাফ দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, মেয়েটির মানসিক সমস্যা ছিলো কিন্তু পরিবার হতে সঠিকভাবে চিকিৎসা পায়নি। বরং এটিকে ‘জ্বিনে ধরা’ বলে তারা তাদের উপায়ে মতো সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছিল।

ভাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সেলিম রেজা জানান, এ ব্যাপারে তারা কোনো অভিযোগ পাননি।

এদিকে, শুক্রবার দুপুরে ভাঙ্গা ঈদগাহ মাঠে বাদজুমা জানাযা শেষে সুমাইয়াকে দাফন করা হয়।

Share this post

scroll to top