বিশ্বকাপের সূচি প্রকাশের পর থেকেই বাংলাদেশের আসল সুযোগ হিসেবে ধরা হচ্ছিল ১৪ মার্চের ম্যাচটিকে। যেখানে প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান নারী ক্রিকেট দল। সেই সুযোগটি সত্যিই কাজে লাগালো টাইগ্রেসরা। পাকিস্তানকে হারিয়ে তুলে নিলো বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম জয়।
হ্যামিল্টনের সেডন পার্কে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৩৪ রান করেছিল বাংলাদেশ। জবাবে ৯ উইকেটে ২২৫ রানের বেশি করতে পারেনি পাকিস্তান নারী দল। নার্ভ ধরে রেখে ৯ রানে জিতে বিশ্বকাপে জয়ের খাতা খুললো নিগার সুলতানা জ্যোতির দল।
প্রথমবারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচেই প্রথম জয় পেয়ে গেলো বাংলাদেশ নারী দল। অন্যদিকে ওয়ানডে বিশ্বকাপে এ নিয়ে টানা ১৮ ম্যাচ হারলো পাকিস্তান। সবশেষ ২০০৯ সালে বিশ্বকাপে জয়ের মুখ দেখেছিল তারা।
এ জয়ের সুবাদে ওয়ানডে ফরম্যাটে পাকিস্তানের সঙ্গে মুখোমুখি দ্বৈরথে সমতা নিয়ে এলো বাংলাদেশ। এ নিয়ে দুই দলের মধ্যকার ১২ ম্যাচে বাংলাদেশের ষষ্ঠ জয় এটি। এর মধ্যে শেষ তিন ম্যাচের তিনটিতেই জিতেছে বাংলাদেশ দল।
বাংলাদেশের করা ২৩৪ রানের জবাবে শুরুটা বেশ ভালো করেছিল পাকিস্তান। উদ্বোধনী জুটিতে ৯১ রান যোগ করেন সিদ্রা আমিন ও নাহিদা খান। ইনিংসের ২৪তম ওভারে এ জুটি ভাঙেন রুমানা আহমেদ। নাহিদা সাজঘরে ফেরেন ৪৩ রান করে।
পরে দ্বিতীয় উইকেটে সিদ্রার সঙ্গে ৬৪ রান যোগ করেন অধিনায়ক বিসমাহ মারুফ। পাকিস্তানের অধিনায়ককে ফেরান জাহানারা আলম। বিসমান করেন ৪৮ বলে ৩১ রান। তখনও একপ্রান্ত ধরে রেখে দলের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন সিদ্রা আমিন।
চার নম্বরে নেমে উমাইমা সোহেল মন দেন রানরেট বাড়ানোর দিকে। একপর্যায়ে ২ উইকেটে ১৮৩ রান করে ফেলে পাকিস্তান। তখন শেষ ৫০ বলে তাদের প্রয়োজন ছিল ৫২ রান। সেই অবস্থা থেকেই ম্যাচের দখল নিজেদের হাতে নেয় বাংলাদেশ।
ইনিংসের ৪২তম ওভারের শেষ বল থেকে ৪৪তম ওভারের শেষ বল পর্যন্ত ১৩ বলে ৫টি উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। ফলে ২ উইকেটে ১৮৩ থেকে ৭ উইকেটে ১৮৭ রানের দলে পরিণত হয় পাকিস্তান। তখনই প্রায় শেষ হয়ে যায় তাদের জয়ের সম্ভাবনা।
এই ম্যাচ দিয়েই প্রথমবারের মতো একাদশে ফেরা ফাহিমা খাতুন ৪৪তম ওভারে নেন দুইটি উইকেট, সেই ওভারে হয় একটি রানআউটও। এছাড়া রুমানাও ৪৩তম ওভারে নেন একটি উইকেট। মাত্র ৫ রানের ব্যবধানে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় বাংলাদেশ।
তবু আশা বাঁচিয়ে খেলছিলেন সিদ্রা আমিন। তার ব্যাট থেকে আসে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের প্রথম সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত ৪৮তম ওভারে গিয়ে রানআউটে কাটা পড়েন ১৪০ বলে ১০৪ রান করা সিদ্রা আমিন। তার বিদায়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের জয়। তবে শেষ পর্যন্ত অলআউট হয়নি পাকিস্তান।
বল হাতে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন ফাহিমা খাতুন। এছাড়া রুমানা ২, সালমা ১ ও জাহানারার শিকার ১টি করে উইকেট।
এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৩৪ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশের মেয়েরা। যা নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে বাংলাদেশ নারী দলের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।
২০১৯ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষেই ৯ উইকেটে ২১১ রান করেছিল টাইগ্রেসরা। সেটি টপকে আজ ২৩৪ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর পেয়েছে নিগার সুলতানা জ্যোতির দল।
বাংলাদেশের এই রেকর্ড সংগ্রহের ইনিংসে ব্যাট হাতে আলো ছড়িয়েছেন ফারজানা হক পিংকি, শারমিন আক্তার সুপ্তা ও নিগার সুলতানা জ্যোতি। নারী বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে ব্যাক টু ব্যাক ফিফটি হাঁকিয়েছেন ফারজানা পিংকি।
আগের দুই ম্যাচের মতো আজও উদ্বোধনী জুটিতে ভালো সূচনা এনে দেন শামীমা সুলতানা ও শারমিন সুপ্তা। দলীয় ৩৭ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ১৭ রানে আউট হন শামীমা। এরপর ৪২ রানের জুটি গড়েন সুপ্তা ও পিংকি।
মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে ফিফটির দেখা পেয়ে যাবেন সুপ্তা। কিন্তু ব্যক্তিগত ৪৪ রানে উমাইমা সোহেলের বলে বোল্ড হয়ে নিজের উইকেট হারান সুপ্তা। তার ৫৫ বলের ইনিংসে ছিল ৬টি চারের মার।
তৃতীয় উইকেটে ৯৬ রান যোগ করেন পিংকি ও জ্যোতি। সুপ্তার মতো জ্যোতিও আটকা পড়েন ফিফটির খুব কাছে গিয়ে। তার ৬৪ বলে ৪৬ রানের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে ফাতিমা সানার বলে লেগ বিফোরে কাটা পড়ে। রিভিউ নিয়েও উইকেট বাঁচাতে পারেননি জ্যোতি।
সুপ্তা ও জ্যোতি সুযোগ হাতছাড়া করলেও কোনো ভুল করেননি ফারজানা পিংকি। আগের ম্যাচে ৫২ রান করা পিংকি এই ম্যাচেও তুলে নেন ফিফটি। যা তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নবমবার পঞ্চাশ ছোঁয়ার ঘটনা। তার ব্যাটে ভর করেই দুইশ পেরোয় বাংলাদেশের সংগ্রহ।
ইনিংসের ৪৭তম ওভারে পরপর দুই বলে আউট হন ফারজানা পিংকি ও ফাহিমা খাতুন। দুইটি আউটেই রিভিউ নিয়ে সফল হয় পাকিস্তান। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে ১১৫ বলে ৫ চারের মারে ৭১ রান করেন পিংকি।
মাঝে ১৩ বলে ১৬ রানের ক্যামিও খেলেন তারকা অলরাউন্ডার রুমানা আহমেদ। শেষ দিকে রিতু মণি ১৩ বলে ১১ ও সালমা খাতুন ১০ বলে ১১ রান করলে ২৩৪ রানে থামে বাংলাদেশ। শেষ ১২ ওভারে মাত্র দুইটি বাউন্ডারি হাঁকাতে পেরেছে টাইগ্রেসরা।
পাকিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নিয়েছে নাশরা সিন্ধু। এছাড়া নিদা দার, ফাতিমা সানা ও উমাইমা সোহেলের শিকার ১টি করে উইকেট।