চবিতে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ, লাঠিসোঁটা-রামদা নিয়ে মহড়া চলছে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রলীগের দুই উপপক্ষের মধ্যে আবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পুরোনো শত্রুতার জের ধরে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ছাত্রলীগের উপপক্ষ বিজয় ও সিএফসির মধ্যে এ সংঘর্ষ বাঁধে। এতে দুই কর্মী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

গতকাল মঙ্গলবারও এ দুই উপপক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। ওই দিন অর্থনীতি বিভাগের র‍্যাগ ডে ছিল। এ উপলক্ষে সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের মিলনায়তনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান দেখতে যান সিএফসির কয়েকজন কর্মী। কিন্তু বিজয়ের কর্মীরা তাদের মিলনায়তনে ঢুকতে দেননি বলে অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা ও পরে দুই হলে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।

বিজয় ও চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি) দুই উপপক্ষই শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী। আজকের ঘটনার জন্য দুই উপপক্ষই একে অপরকে দোষারোপ করেছে। সিএফসির নেতৃত্বে আছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক ও বিজয়ের নেতৃত্বে সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াছ।

ছাত্রলীগ সূত্র বলছে, সন্ধ্যায় বিজয়ের নেতা ও সাবেক সহসম্পাদক মাহমুদুল হাসান আবদুর রব হলের ঝুপড়িতে যান। সেখানে সিএফসির কর্মীদের সঙ্গে তার বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। পরে বিজয়ের নেতা-কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে ও সিএফসির নেতা-কর্মীরা শাহ আমানত হলের সামনে এসে জড়ো হন। এ সময় দুই উপপক্ষের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা ও রামদার মহড়া দেন। একপর্যায়ে একে অপরকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। হয় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। সংঘর্ষে দুই কর্মী আহত হন।

এদিকে রাত ৮টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলার পর পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। তবে ক্যাম্পাস উত্তপ্ত রয়েছে। আহত একজনকে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

সংঘর্ষের বিষয়ে সভাপতি রেজাউল হক বলেন, ‘মাহমুদুল হাসান একজন চাঁদাবাজ। তিনি আবদুর রব হলের ঝুপড়িতে চাঁদাবাজি করতে গিয়েছিলেন। পরে নেতা-কর্মীরা তাকে প্রতিহত করেছেন।’

আর সাবেক সহসম্পাদক মাহমুদুল হাসান বলেন, রেজাউল হকের নির্দেশে জুনিয়র কর্মীরা তাকে ধাক্কা দিয়েছে। তিনি জুনিয়র কর্মীদের কাউকেই চেনন না। উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটি করা হয়েছে।

বিজয়ের নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, ‘সিএফসির নেতা-কর্মীরা সভাপতি রেজাউল হকের `পাওয়ার’ দেখিয়ে অর্থনীতি বিভাগের অনুষ্ঠানে ঝামেলা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিজয়ের কর্মীরা প্রতিহত করেন। আজও তাদের এক নেতাকে ধাক্কা দিয়েছেন। কোনো কারণ ছাড়াই ঝামেলা করছেন।’

তবে রেজাউল বলেন, ‘বিজয়ের কয়েকজন কর্মীকে ফাও খেতে না দেওয়ায় সোহরাওয়ার্দী হলের বাবুর্চিকে মারধর করেছে তারা। এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে সংঘর্ষ লাগিয়েছে।

সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী প্রক্টর শহিদুল ইসলাম বলেন, গতকাল রাতের ঘটনার জের ধরে আজ আবার সংঘর্ষ বাঁধে। পরে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। এখন ক্যাম্পাস শান্ত।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি দুপক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষ সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী ও আরেকটি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসানের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। দুটি পক্ষের আবার ১১টি উপপক্ষ রয়েছে।

Share this post

scroll to top