জাহাজে হামলার ঘটনা রাশিয়া তদন্ত করছে : পররাষ্ট্র সচিব

বাংলাদেশি জাহাজ এমভি বাংলার সমৃদ্ধিতে রকেট হামলার ঘটনা রাশিয়া তদন্ত করছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। গতকাল সন্ধ্যায় ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।

বুধবার ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে থাকা বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ এমভি বাংলার সমৃদ্ধি রকেট হামলার শিকার হয়। স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা ১০ মিনিটে এ হামলা হয়। এতে জাহাজে আগুন ধরে যায়। নিহত হন হাদিসুর রহমান। রাশিয়া এ হামলায় তাদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছে। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রাশিয়া হামলা করেছে এটার কনক্রিট এভিডেন্স কারও কাছে নাই ফগ অব ওয়্যারে অনেক ধরনের গোলাগুলি হয়।

তারা বের করার চেষ্টা করছে কারা করেছে। কিন্তু তারা করেনি এটা বলছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট না দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করে বলা হয়েছে। আমরা একটা স্টেটমেন্ট দিয়েছি। আমাদের নৈতিক অবস্থান হচ্ছে কোনো সুনির্দিষ্ট দেশের বিরুদ্ধে রেজ্যুলেশন আনা হলে আমরা ভোটদান থেকে বিরত থাকি। শুধু মিয়ানমারের ব্যাপারে এটা ব্যতিক্রম ছিল। সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দ্রুততম সময়ে কীভাবে নাবিকদের নিরাপদ জায়গায় নেয়া যায় এবং নিহত হাদিসুরের লাশের ব্যাপারে কি ব্যবস্থা হবে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া জাহাজটি কীভাবে নিরাপদ জায়গায় নেয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। রাশিয়া আমাদের সব ধরনের সহায়তা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। নাবিকরা একটা নিরাপদ জায়গাতে যাচ্ছে। জাহাজ থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ইউক্রেনের টেরিটরি রাশিয়ানদের দখলে চলে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমাদের রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। আমরা জাহাজের চিন্তা এই মুহূর্তে করছি না। মানুষজনকে সরিয়ে আনাই প্রাধান্য। ইউক্রেনে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ইউক্রেনে স্টুডেন্টরা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে আছে, সেটা অল্প সংখ্যক। ভারতের সঙ্গে সমন্বয় করে তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেখানকার মূল জনগোষ্ঠী পোল্যান্ডে চলে গেছে। বড় সংখ্যক বাংলাদেশি পোল্যান্ডের সেফ হাউজে রয়েছে। সেটা ১০০ জনের মতো রয়েছে। মোট ৬০০ এর মতো বাংলাদেশি পোল্যান্ডে গেছে। বাংলাদেশে আসতে চাইলে তাদের সহায়তা করা হবে। তিনি বলেন, হাঙ্গেরির একটা বিশ্ববিদ্যালয় ১৫ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তির সুযোগ দেবে। রাশিয়ার ওপর আমেরিকাসহ অন্য দেশের স্যাংশনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাশিয়ার ওপর যে স্যাংশন এসেছে এতে আমাদের ওপর কি ধরনের প্রভাব পড়বে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা বিভিন্ন জিনিস আমদানি-রপ্তানি করি বেলারুশ, ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে। ব্যাংকের ট্রানজেকশনের কী হবে, আমাদের যেসব প্রজেক্ট ছিল এবং সামনের যেসব ইনিশিয়েটিভ রয়েছে সেগুলোর কি হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা গম আনি সেটার বিষয়ে বিকল্প চিন্তা করতে হবে। গত ৯ বছরে তেলের দাম সর্বোচ্চ বেড়েছে। পশ্চিম ইউরোপে যদি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় তাতে আমাদের এলএনজি সাপ্লাইয়ে কী ধরনের প্রভাব পড়বে তা আলোচনায় ছিল। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, যারা রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সরাসরি ব্যবসা করে তাদের সঙ্গে বসতে বলা হয়েছে। যেগুলো পেমেন্ট না করলেই নয় সেগুলো করা। সুইফটের মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফারে আটকে যেতে পারে। এই জটিলতাগুলো চিন্তা করা দরকার। আমাদের যদি কোনো প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয় সেটা যেন মিনিমাইজ করা হয় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ৬/৭ দিনের মধ্যে আরেকবার বসে অন্য দেশগুলো কি করছে সেই তথ্যগুলো সংগ্রহ করে আলোচনা হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং পেট্রোবাংলা, এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ-এর কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। মস্কো, পোল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, বুখারেস্টের রাষ্ট্রদূতরা ভার্চ্যুয়ালি বৈঠকে যোগ দেন।

Share this post

scroll to top