ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে পড়া ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজের নাবিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে তাদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করছে। শিগগিরই তাদের দেশে আনা সম্ভব হবে। বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) দুপুরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) নির্বাহী পরিচালক ড. পীযূষ দত্ত।
তিনি বলেন, ‘জাহাজে রকেট হামলায় নিহত হাদিসুর রহমান আরিফ ওই জাহাজের তৃতীয় প্রকৌশলী ছিলেন। তার লাশ বর্তমানে ওই জাহাজের ফ্রিজে আছে। তার লাশ আনা এত সহজ হবে না। জাহাজ থেকে নাবিক-ক্রুদের নেমে আসার পর এসি বন্ধ হয়ে যাবে। তখন লাশ ভালো থাকবে না। এ কারণে মর্গে রাখার চেষ্টা চলছে। জাহাজের বাকি ২৮ নাবিক-ক্রু অক্ষত আছেন। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে।’
পীযূষ দত্ত আরও বলেন, ‘জাহাজে থাকা নাবিকদের উপকূলে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। তাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার আগে বন্দরের তীর থেকে কাউকে সেফটি ও সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য ক্লিয়ারেন্স পেতে হবে। ক্লিয়ারেন্স পেলে আমরা তাদের যেতে অনুমতি দেবো।’
এদিকে জাহাজে আটকে পড়া নাবিকদের বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে দেওয়া একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে। এতে বলা হয়, ‘আমি ইঞ্জিন ক্যাডেট মৌ বলছি। আমাদের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার স্যার অলরেডি মারা গেছেন। আমাদের শিপে বোমা মারা হয়েছে। আমরা এখনও শিপের মধ্যে আছি। আমরা সবাই চাচ্ছি এখান থেকে বের হতে। আপনারা প্লিজ কোনও একটা উপায় করে আমাদের বের করুন। আমরা এখানে থাকতে চাচ্ছি না।’
‘আমি ইঞ্জিন ক্যাডেট তুহিন। আমি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজ থেকে বলছি। কিছুক্ষণ আগে আমাদের ওপর বোমা মারা হয়েছে। আমাদের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার স্যার অলরেডি মারা গেছেন। আমরা সবাই খুব বিপদে আছি। আমাদের প্লিজ উদ্ধার করেন। আমাদের বাঁচান।’
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মো. আনাম চৌধুরী বলেন, ‘ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে নোঙর করে রাখা বিএসসির জাহাজ এমভি বাংলার সমৃদ্ধিতে হামলার ঘটনায় জাহাজে আগুন ধরে যায়। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। বাংলাদেশ সময় বুধবার রাত ৯টা ২৫ মিনিট ও ইউক্রেন সময় ৫টা ২৫ মিনিটে এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার পর জাহাজে শর্টসার্কিটের কারণে আলো জ্বলছে না। চালু হচ্ছে না জাহাজের ইঞ্জিন। ইমার্জেন্সি জেনারেটর দিয়ে কয়েক ঘণ্টা পরপর আলো জ্বালানো হচ্ছে। জাহাজটি মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাহাজে থাকা ২৯ জনই বাংলাদেশি। এখানে কয়েকজন নারী নাবিক-ক্রুও আছেন। তাদের সঙ্গে আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করছি। হামলায় একজন মারা গেছেন। বাকিরা সুস্থ আছেন। তাদের কীভাবে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনা যায় আমরা সেই চেষ্টা করছি।’
জাহাজটিতে যারা রয়েছেন- জাহাজের মাস্টার জি এম নুর ই আলম, সহকারী মাস্টার মো. মনসুরুল আমিন খান। এ ছাড়াও রয়েছেন- সেলিম মিয়া, রমা কৃষ্ণ বিশ্বাস, মো. রুকনুজ্জামান রাজিব, ফারিয়াতুল জান্নাত তুলি, ফয়সাল আহমেদ সেতু, মোহাম্মদ ওমর ফারুক, সৈয়দ আসিফুল ইসলাম, রবিউল আউয়াল, মোহাম্মদ হাদিসুর রহমান, সালমান সরওয়ার সামি, ফারজানা ইসলাম মৌ, মো. শেখ সাদি, মো. মাসুদুর রহমান, মো. জামাল হোসাইন, মোহাম্মদ হানিফ, মো. আমিনুর ইসলাম, মো. মহিন উদ্দিন, হোসাইন মোহাম্মদ রাকিব, সাজ্জাদ ইবনে আলম, নাজমুল উদ্দিন, মো. নজরুল ইসলাম, সরওয়ার হোসাইন, মো. মাসুম বিল্লাহ, মোহাম্মদ হোসাইন, মো. শফিকুর রহমান, মো. আতিকুর রহমান ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন।
রকেট হামলায় নিহত হাদিসুর রহমানের জন্ম ১৯৯৩ সালের ১৮ মে। বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের বাসিন্দা মো. আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে তিনি। চার ভাইবোনের মধ্যে হাদিস মেজো।
বিএসসি সূত্র জানায়, জাহাজটি ইউক্রেনের বন্দর থেকে পণ্য ভর্তি করে ইতালির বন্দরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় ওই বন্দর থেকে পণ্য লোডিং কাজ বাতিল করা হয়। এ কারণে জাহাজটি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে নোঙর করে রাখা হয়। জাহাজটিতে অন্তত ২৫ দিনের রসদ মজুত আছে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি এমভি বাংলার সমৃদ্ধি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে পৌঁছে। তুরস্কের এরেগলি বন্দর থেকে গত ২১ ফেব্রুয়ারি খালি অবস্থায় অলভিয়া বন্দরের উদ্দেশে ছেড়ে যায় বাংলার সমৃদ্ধি।