ছাত্রলীগ না করায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় এখনও ব্যবস্থা না নেয়ায় ৩ মার্চ থেকে আমরণ অনশনের ডাক দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
জানাযায়, ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবিস্থত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন ও সরকার পরিচালনাবিদ্যা বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী ওয়ালিদ নিহাদকে ছাত্রলীগ না করায় মারাত্বকভাবে নির্যাতন করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ঘটনা দিন রাত দেড়টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হলের ৩২৪ নাম্বার কক্ষে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনায় বিচারের দাবীতে ২য় দিনের মত আন্দোলন করে ক্লাস বর্জন ও আমরণ অনশনের ঘোষনা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। ঘটনা তদন্তে হল প্রশাসন থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠনের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আহত শিক্ষার্থী ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে বলে জানিয়েছেন প্রক্টরিয়াল বডি।
জানাযায়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী ওয়ালিদ নিহাদ তার ডিপামের্ন্টের বড় ভাই সারজিলের কাছে গেলে রুম থেকে ৩২৪ নাম্বার কক্ষে ডেকে নিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিচারের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে আন্দোলন করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ২৪ ঘন্টা সময় বেঁধে দেয় শিক্ষার্থীরা। ঘটনার ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অপরাধীদের শাস্তির ঘোষণা না আসায় মঙ্গলবার (১মার্চ) ২য় দিনের মতো প্রতিবাদে নামে শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদ মিছিলটি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বঙ্গবন্ধু হলের সামনে গিয়ে সমবেত হয়। এসময় তারা ঘটনার বিচার না হলে ক্লাশ বর্জনসহ আমরণ অনশনের ঘোষনা দেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল আন্দোলনের পর থেকে নজরদারি করে রেখেছে ও আমাদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন থেকে সরে যাবনা। প্রয়োজনে আমরা আমরণ অনশন করব। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিচারের দাবীতে ২মার্চ সন্ধ্যায় নিহাদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও ৩ মার্চ সুষ্ঠু বিচার হলে আমরণ কর্মসূচি ঘোষণা করে। এছাড়াও লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগে আগামীকাল থেকে সকল ধরনের ক্লাস পরীক্ষা বর্জন ঘোষণা করা হয়েছে।
অন্যদিকে নিজেদের উপর দায় অস্বীকার করে সুষ্ট তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর একটি অভিযোগপত্র জমা দেয় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্টার ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোষ্ট মাসুম হাওলাদারকে আহবায়ক করে ছাত্র উপদেষ্টা তপন কুমার সরকারকে সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর উজ্জল কুমার প্রধানকে সদস্য সচিব করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে তাদেরকে রিপোর্ট প্রদানের জন্য বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে বিশ্বদ্যিালয় প্রশাসন সেই অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান হল প্রভোস্ট মাসুম হাওলাদার বলেন, আমাদের দুটি নতুন হল চালু হয়েছে মাত্র মাস খানেক সময় ধরে। এখনো আমরা সকল রুম বরাদ্ধ দিতে পারিনি। টর্চার সেল নামে যে কথা গুলো বলা হচ্ছে তা সত্য নয়। তবে হলের ভিতরে যদি এমন কোন রুম থেকে থাকে তাহলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
প্রক্টর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, শিক্ষার্থী মারধরের অভিযোগে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিব। এতে যদি কেউ দোষী প্রমানিত হয় তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবশ্যই ব্যবস্থা করবে।
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান রাকিবের রাজনীতি না করায় নিহাদের উপর রবিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে সদ্য চালু হওয়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৩২৪ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনের পর সোমবার সকালে তাকে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে রেফার করেন।তার সহপাঠীরা বলেন, নিহাদকে রাত দেড়টার পর ডেকে নিয়ে গিয়ে পিঠে ও মাথায় গুরুতর আঘাত করা হয়েছে। অত্যাচারের শিকার হয়ে সে বেশ কয়েকবার বমি করেছে।
রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠানো লিখিত বক্তব্যে নিহাদ জানান, আমি কেন ছাত্রলীগের গ্রুপভিত্তিক রাজনীতি করি না এ অভিযোগেই মূলত আমাকে ডাকা হয়। আমাকে নানাভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে আমার হাতে রামদা ধরা হয়৷ খালেদা জিয়ার ছবি আমার ফেসবুকে আপলোড দেয়ানো হয়। আমার একটা ভিডিও ধারণ করে জোরপূর্বক বলানো হয়, ২০২৩ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। তারেক জিয়া দেশে ফিরবে। তখন ক্যাম্পাসে কোনো ছাত্রলীগের কুত্তা থাকবে না।
তিনি আরও জানান ‘ সমাজবিজ্ঞান বিভাগের পলাশ ভাই আমাকে হলে নিয়ে যায় এবং যাওয়ার সাথে সাথেই আমাকে থাপ্পড় মারে নাট্যকলা বিভাগের হিমেল ভাই। আমার বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের তুহিন ভাই, ২০১৪-১৫ সেশনের মুমিন ভাই, ইইই বিভাগের অ্যালেক্স সাব্বির ভাই, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের তানভীর ভাই সহ আরো ৫/৬ জন টানা লাথি ঘুষি মারতে থাকে। সাথে ফোকলোর বিভাগের যাযাবর নাঈম (আবু নাঈম আব্দুল্লাহ) ভাই লাথিঘুষি মারতে থাকে। গলায় ও বুকের ওপর দাঁড়িয়ে অনেক মেরেছে নাঈম ভাই। আমি কেন রাকিব ভাইয়ের রাজনীতি করি না। আমি নাকি অন্যদেরও রাজনীতি করতে বাধা দিয়েছি, যা ভিত্তিহীন। আমার পারিবারিক সমস্যার কারণেই আমার রাজনীতি করা সম্ভব নয়। আমি পড়াশোনা নিয়েই থাকতে চাই। কিন্তু আমাকে ক্যাম্পাসে থাকতে হলে নাকি রাজনীতি না করে উপায় নাই। একপর্যায়ে নাট্যকলার হিমেল ভাই আমার হাতে রামদা দিয়ে আমাকে যাযাবর নাঈম ভাইয়ের কাছে রাজনীতি করবো বলে পা ধরে মাফ চাইতে বলে। এরপর আমার প্রোফাইলে খালেদা জিয়ার ছবি আপলোড দেয়ানো হয়, যা আমি পরে ডিলিট করি। একটি ভিডিও বানায় হাতে রামদা দিয়ে জোরপূর্বক বলানো হয়, ২০২৩ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। তারেক জিয়া দেশে ফিরবে। তখন ক্যাম্পাসে কোনো ছাত্রলীগের কুত্তা থাকতে পারবে না। কোনো শিক্ষকের কাছে বিচার নিয়ে যাবি না। রাকিব ভাই চাইলে ভিসি পরিবর্তন হয়। বেশি কথা বললে ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করতে পারবি না, আবরারের মত মরবি।