বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচন কমিশন যাই হোক, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। গণতন্ত্রের জন্যই দেশের মানুষ নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়।
সোমবার দুপুরে ময়মনসিংহ নগরীর নতুন বাজার দলীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর বিএনপি আয়োজিত বিদ্যুৎ, গ্যাস, চাল, ডাল তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে এবং টিসিবির মাধ্যমে স্বল্পম‚ল্যে সর্বত্র পণ্য সরবরাহের দাবিতে অনুষ্ঠিত বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখনো সময় আছে চাল ডাল তেলের দাম কমাও, গ্যাস বিদ্যু পানির দাম কমাও এবং জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্থান্তর করে পদতাগ করুন। তিনি বলেন, ভোটের আগে বলেছিল দশ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে, ঘরে ঘরে চাকরি দিবে, বিনামূল্যে সার কৃষকদের সার দিবে কিন্তু দেয়নি এটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগ। মানুষকে ভুল বুঝিয়ে, প্রতারণা করে ক্ষমতায় গিয়ে সব ভুলে গেছে। সরকার প্রতারণার মাধ্যমেই ক্ষমতায় টিকে আছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা যাতে ভোট দিতে না পারেন, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে তাদের মতো সীল মেরে ইভিএম দিয়ে তাদের সরকার গঠন করবে। এটাকে বলা হচ্ছে ‘হাইব্রিড রেফিং’। বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করেছে। সরকার যা হুকুম দেয়, তাই রায় হয়। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। কোনো সত্যতা নাই। দুই কোটি ৩৩ লাখ টাকা এখন সেই ব্যাংকে আট কোটি হয়েছে। একটা পয়সাও সরানো হয়নি। অথচ হাজার হাজার কোটি টাকা সরকারের মন্ত্রী, আমলা ও নেতারা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে সেখানে একটি মামলাও হয়না। আজকে ওয়ার্ড থেকে কেন্দ্রীয় নেতাসহ ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। এমন কোনো নেতা নেই যার নামে ১০টি মামলা নেই। মামলা আর পুলিশের হাত থেকে বাঁচার জন্য অনেকেই পালিয়ে ঢাকায় গিয়ে রিকসা চালায়, ভ্যান চালায়, নৈশপ্রহরীর কাজ করে
তিনি বলেন, ইলয়াস আলীসহ ৬০০ নেতাকর্মীকে গুম করেছে। অসংখ্য মানুষ হত্যা করেছে। ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা দিয়েছে। অনেক শিশু তাদের পিতাকে দেখেনি। সেই শিশু এখন বড় হয়ে বাবাকে দেখতে চায়। এসব হত্যাকান্ডের জন্য আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তাদের অর্থবিত্ত বাজেয়াপ্ত করেছে। এটা প্রধানমন্ত্রীর জন্য অপমানজনক। আওয়ামী লীগ এখন জনগণের টাকায় প্রতিমাসে ২০ হাজার ডলার দিয়ে লবিষ্ট নিয়োগ করে নিজেদের পাপ ধোয়ার জন্য। পাপ কোনোদিন ধোয়া যাবে না। ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। এদেরকে জবাব দিতে হবে। নির্দেশদাতাসহ যারা এদেরকে হুকুম দিয়েছে এই রক্তবন্যার জন্য তাদের জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
তিনি বলেন, যেকোনো কথা বলা আগে একটাই কথা, দেশনেত্রীকে মুক্তি দিতে হবে। ৩৫ লাখ লোকের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে তা প্রত্যাহার করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের তালবাহনা দেখিয়ে মুলা ঝুলিয়ে কোনো লাভ হবে না। ড. জাফরউল্লাহ নাকি বিএনপির লোক আ’লীগ নেতা হানিফের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমি পরিস্কার ভাষায় বলে দিতে চাই, ড. জাফরউল্লাহর সাথে বিএনপির কোনো সর্ম্পক নেই। নির্বাচন কমিশন নিয়ে এটা তাঁর নিজস্ব বক্তব্য। এ বিষয়ে বিএনপি পক্ষে কথা বলার তিনি কেউ নন।’ আ’লীগ একটি প্রতারক দল, অত্যাচারি দল। এখন কেউ খারাপ আচরণ করলেই মানুষ বলে এটা মানুষ নয়, আ’লীগ এমন মন্তব্যও করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আ’লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আমাদের সাথে প্রতারণা শুরু করেছে। তারা বলেছিল আবার একটা নির্বাচন দিবে, সেই নির্বাচন দেয় নাই। এরশাদ সরকারের পতনের পর সবদলের পরামর্শে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে তত্ত¡াধায়ক সরকারের অধিনে অনুষ্ঠিত সুষ্ঠু নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। কেই ভাবতে পারেনি বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। বিএনপি হলো এদেশের মানুষের দল। পরবর্তীতে আ’লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার জন্য ১৭৩ দিন লাগাতার হরতাল দিয়েছিল, শতশত মানুষ হত্যা করেছিল। গান পাউডার দিয়ে বাস পুড়িয়েছিল। কলকারখানা বন্ধ করে দিয়েছিল। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করলেন। চারটি নির্বাচন হয়ে গেলো সুষ্ঠুভাবে। তখন দেশের শত্রু বিচারপতি খায়রুল হক একটা রায়ের মাধ্যমে তা বাতিল করলেন আর আ’লীগ সেটা লুফে নিল। এরপরও সংসদীয় কমিটির সামনে শেখ হাসিনা বলেছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মেনে নিবে। কিন্তু তিনি তা করলেন না দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচন করলেন। বেইমানী করলেন মানুষের সাথে। আজকে দলীয় সরকারের অধিনে দু’টি নির্বচিন করে মানুষের সব আশা-আকাঙ্খা ধুলিৎসাত করে দিয়ে অত্যাচার নির্যাতনের স্টীমরোলার চালিয়েছে। তিনি বলেন, যারা ত্বাত্তিক আছেন তারা বলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নাকি গনতন্ত্রের সাথে চলে না। তারা ভুল বলেন। গনতন্ত্রই মানুষের আশা-আকাঙ্খা। জনগণের ভোটে যা প্রতিফলিত হবে সেটাই গণতন্ত্র। জনগণ ভোট দিতে চায়। সেজন্যই তত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। এই নির্বাচন কমিশন দিয়ে কোনোমতে ভোট দিয়ে আবার ক্ষমতায় চলে যাবা সেটা আর এবার হবে না। ‘বারবার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান, এইবার ঘুঘু তোমার বধিব পরাণ।’ এবার মানুষ সমস্ত চক্রান্ত নস্যাৎ করে দিয়ে দেশনেত্রীকে মুক্ত করবে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে। এখনো সময় আছে চাল, ডাল, তেলের দাম কমাও, গ্যাস বিদ্যু পানির দাম কমাও এবং জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে পদতাগ করুন এবং নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। বর্তমানকে বাধ্য করতে আন্দোলন করতে হবে। এজন্য দেশের মানুষকে নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে।
বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, বর্তমান সরকার মিথ্যাবাদী। জনগণকে দশটাকা কেজি চাল খাওয়ানোর কথা বলে ৭০ টাকা কেজি চাল খাওয়াচ্ছে। সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ ওয়ারেস আলী মামুন, সরকার নিজেদের মতো নির্বাচন কমিশন গঠন করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় যেতে চায়।
মহানগর বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে যুগ্ম-আহবায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ ওয়ারেস আলী মামুন ও শরীফুল আলম, সাবেক এমপি মাহমুদুল হক রুবেল ও শাহ শহীদ সারোয়ার, কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম মিলন, কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সভাপতি হাসান জাকির তুহিন, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক ডা. মাহবুবুর রহমান লিটন, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক জাকির হোসেন বাবলু, আলমগীর মাহমুদ, উত্তর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলী ও কাজী রানা প্রমুখ।
এসময় ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ফখরউদ্দিন আহমেদ বাচ্চু, মহানগর যুগ্ম আহবায়ক এ কে এম মাহবুবুল আলমসহ দক্ষিণ ও উত্তর জেলা এবং মহানগর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্চাসেবকদল, শ্রমিকদল ও মহিলাদলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এরআগে ভালুকা থেকে বিএনপি নেতা মোরশেদ আলমসহ মহানগর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলা বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী সমাবেশে মিছিল সহকারে যোগদান করেন।