ভারতের ঐতিহ্যবাহী আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটিতে (এএমইউ) একদল ছাত্রের সাথে একটি টিভি চ্যানেলের সংবাদকর্মীদের বিতণ্ডার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ১৪ জন ছাত্রকে দেশদ্রোহে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
ওই টিভি চ্যানেলটির নাম রিপাবলিক টিভি – যা ভারতে একটি উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রচারমাধ্যম হিসেবে পরিচিত।
এটির প্রধান হলেন ভারতের সুপরিচিত টেলিভিশন নিউজ অ্যাঙ্কর অর্ণব গোস্বামী।
তার চ্যানেলের একদল কর্মী মঙ্গলবার বিকেলে আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে খবর সংগ্রহের জন্য যাওয়ার পরই ছাত্রদের সাথে তাদের বাগবিতণ্ডা শুরু হয়।
বিতর্কের সূত্রপাত হয় যখন ওই প্রতিষ্ঠানের একজন ছাত্র টুইট করেন, রিপাবলিক টিভির ক্রুরা তাদের চ্যানেলে আলিগড়কে ‘জঙ্গীদের বিশ্ববিদ্যালয়’ বলে পরিচয় দিচ্ছে।
রিপাবলিক টিভি পরে অভিযোগ করেছে, ক্যাম্পাসের ভেতর একদল ছাত্র তাদের কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে এবং তারা শারীরিক হেনস্থারও শিকার হয়েছেন।
ওই ছাত্রদের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর করেন আলিগড়ের স্থানীয় একজন বিজেপি নেতা, আর তারপরই উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের পুলিশ ওই দেশদ্রোহের অভিযোগ এনেছে।
আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অবশ্য এই এফআইআরকে ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে দাবি করেছে।
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি সালমান ইমতিয়াজ দাবি করেছেন, রিপাবলিক টিভির কর্মীদের সাথেই বিজেপি ও আরএসএস সমর্থকরাও ‘দুরভিসন্ধি নিয়ে’ তাদের ক্যাম্পাসে ঢুকেছিলেন।
তিনি জানাচ্ছেন, ‘এএমএউ-কে যখন ওই সাংবাদিকরা সন্ত্রাস ও দেশবিরোধী কার্যকরাপের আঁতুরঘর বলে বর্ণনা করতে থাকেন, তখন সঙ্গত কারণেই আমাদের ছাত্ররা তার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।’
‘ক্যাম্পাসে ফিল্মিংয়ের জন্য তাদের প্রয়োজনীয় অনুমতি আছে কি না, সেটা জানতে চাওয়া হলে ওই রিপোর্টাররা ছাত্রদের ওপর চড়াও হন। এমন কী একজন মহিলা সাংবাদিক ভয় দেখান তিনি ওই ছাত্রদের যৌন হেনস্থার অভিযোগে ফাঁসিয়ে দেবেন।’
নলিনী শর্মা নামে রিপাবলিকান টিভির যে মহিলা সাংবাদিক ঘটনাস্থলে ছিলেন তিনি অবশ্য এই বিবরণ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন।
মিজ. শর্মা টুইট করেছেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাদের স্টোরির সাথে এএমইউর কোনো সম্পর্ক ছিল না, আর আমরা আশেপাশে কোনো ছাত্রের সাথে কথাও বলছিলাম না।’
‘তা সত্ত্বেও আমাদের ঘিরে ধরে ছাত্ররা হেনস্থা করতে থাকে, আমাদের হুমকি দিতে থাকে।’
ঘটনার এই পরস্পরবিরোধী বিবরণের মধ্যেই রাতে আলিগড়ে বিজেপির যুব শাখার নেতা মুকেশ লোধির করা এফআইআরের ভিত্তিতে রাজ্য পুলিশ ১৪ জন ছাত্রের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগ আনে।
মুকেশ লোধি তার এফআইআরে বলেন, আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটির ‘শত শত ছাত্র’ তার গাড়ি ঘিরে ধরে তাকে হেনস্থা করেছে।
এমন কী, তাকে লক্ষ্য করে না কি ‘গুলি’ও চালানো হয়েছে।
ওই ছাত্ররা পাকিস্তানের সমর্থনে ও ভারতের বিরুদ্ধে লাগাতার স্লোগান দিচ্ছিল বলেও তিনি দাবি করেছেন।
কিন্তু আলিগড়ের ক্যাম্পাসে তিনি কেন সে সময় হাজির ছিলেন, তার কোনো ব্যাখ্যা মেলেনি।
এদিকে গত রাতের ওই ঘটনার পর আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও পুলিশে দুটি আলাদা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এর একটি হল অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার অভিযোগে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। অপরটি হল ক্যাম্পাসে অগ্নিসংযোগসহ নানা বেআইনি কার্যকলাপের অভিযোগে ‘অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতী’দের বিরুদ্ধে।
এর আগে দিল্লির জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়েও (জেএনইউ) কানহাইয়া কুমার, উমর খালিদের মতো ছাত্র নেতাদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগ উঠেছে।
ভারতে পার্লামেন্ট হামলায় ফাঁসি-হওয়া আফজল গুরুর মৃত্যুদণ্ডের বার্ষিকীতে তারা জেএনইউ ক্যাম্পাসে দেশবিরোধী স্লোগান দিয়েছিলেন বলে তখন ভারতের কয়েকটি টিভি চ্যানেল দাবি করেছিল।
তিন বছর আগের ওই ঘটনার তদন্ত করে দিল্লি পুলিশ সম্প্রতি যে চার্জশিট পেশ করেছে তাতেও কানহাইয়া কুমার-উমর খালিদরা সিডিশান বা দেশদ্রোহে অভিযুক্ত হয়েছেন।
তারা ভারতকে ‘টুকরো টুকরো করার’ স্লোগান দিয়েছিলেন, এই অভিযোগ তুলে রিপাবলিকসহ ভারতের বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেল নিয়মিতই তাদের ‘টুকরা টুকরা গ্যাং’ বলে বর্ণনা করে থাকে।