পাকিস্তানে কত বিনিয়োগ করবেন সৌদি যুবরাজ?

চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে পাকিস্তান সফর করবেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। আশা করা হচ্ছে এই সফরের সময় তিনি পাকিস্তানে কয়েক বিলিয়ন ডলারের বিনেয়োগের কথা ঘোষণা করবেন। পাকিস্তান বেশ অনেকদিন ধরেই অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং সৌদি আরবের ঐতিহ্যবাহী মিত্র ও সহযোগী হিসেবে ইসলামাবাদ একটি বিশাল অংকের বিনিয়োগ লাভ করতে যাচ্ছে।

নাম না প্রকাশের শর্তে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা মঙ্গলবার বলেন, আগামী শনিবার বিকেলে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ইসলামাবাদ পৌছাবেন এবং পাকিস্তান ত্যাগ করবেন পরের দিন রোববার রাতে। এই সফরে সৌদি যুবরাজের সাথে থাকবেন ৬৩০ সদস্যের প্রতিনিধি দল।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, সফরে সৌদি যুবরাজ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সাথে বৈঠক করবেন এবং এরপর তারা বিভিন্ন সেক্টরের উপর ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর করবেন। অবশ্য কোন কোন ক্ষেত্রে বা প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হবে তা ওই কর্মকর্তা স্পষ্ট করেননি।

এদিকে গত সোমবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা রাজাক দাউদ সাংবাদিকদের বলেন, তেল, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও খনিজ পদার্থ ইস্যুতে দুই দেশ বিভিন্ন চুক্তি সম্পাদন করবে।

রাজাক দাউদ আরো বলেন,‘তেল ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষরের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।’

দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর দেশ পাকিস্তান বেশ কিছুদিন ধরেই অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। দেশটির অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে বাজেট ঘাটতি, বাণিজ্য ঘাটতি এবং বৈদিশিক রিজার্ভ বা মুদ্রার ঘাটতি। বর্তমানে পাকিস্তানের বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দেশটির মোট জিডিপির ৬.৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

তাছাড়া ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পেতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান।

গত বছরের অক্টোবরে সৌদি আরব পাকিস্তানকে এক বছরের জন্য ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দেয়ার কথা ঘোষণা করে। পাশাপাশি বিলম্বে মূল্য পরিশোধের সুযোগ রেখে ইসলামাবাদকে তেল দেয়ার কথাও ঘোষণা করে রিয়াদ।

এরপর গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতও ঘোষণা করে যে, তারা পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জমা রাখবে।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সংক্ষেপে ‘এমবিএস’ নামেও পরিচিত। তিনি এমন এক সময় পাকিস্তান সফরে আসছেন যখন সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকান্ডের বিষয়ে তিনি বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়ে বৈশ্বিক ভাবেই ইমেজ সংকটে পড়েছেন।

উল্লেখ্য, গত বছরের অক্টোবর মাসে সৌদি বংশোভূত সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে তুরস্কের সৌদি আরব দূতাবাসে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। বান্দ্ধবীকে বিয়ে করার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র আনতে সাংবাদিক জামাল খাশোগি সৌদি দূতাবাসে প্রবেশ করেছিলেন। আর এরপরই তাকে হত্যা করা হয়। সাংবাদিক জামাল খাশোগি সৌদি আরবের রাজ পরিবারের একজন বড় সমালোচক ছিলেন।

সেসময় প্রাথমিকভাবে সৌদি কতৃপক্ষ এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে, সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে তুরস্কের সৌদি দূতাবাসের অভ্যন্তরেই হত্যা করা হয়েছে। তবে এই হত্যাকান্ডের সাথে সৌদি রাজ পরিবারের জড়িত থাকার কথা এখনো অস্বীকার করছে দেশটি। সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে সৌদি আরব কৃতপক্ষ।

অবশ্য এসব ঘটনার কোনো প্রভাব সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্সের আসন্ন পাকিস্তান সফরে পড়বে না। তার কারণ, সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকান্ডের সাথে ‘জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত ও শাস্তি প্রদানের বিষয়ে সৌদি সরকারের অঙ্গীকারের’ প্রশংসা করেছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top