কলা গাছের ফলন শেষে বর্জ্য হিসেবে পরিচিত কান্ড থেকে উৎপাদন করা যাবে উন্নতমানের গো-খাদ্য। এমন প্রযুক্তিই উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশুপালন অনুষদের পশুবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম আহসান কবীর ও তার সহধর্মিনী জুবাইদা গুলশান। বুধবার সকালে জামালপুর উপজেলার প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের আয়োজনে এবং প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিপি) সহযোগিতায় ‘প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী-২০২২’ মেলায় গো-খাদ্য তৈরির ওই কৌশল প্রদর্শন করা হয়।
দিনব্যাপী প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী ওই মেলার উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি জামালপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য মো. মোজাফ্ফর হোসেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাহমিনা আক্তারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামালপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবুল হোসেন।
গবেষক ড. আহসান কবীর গো-খাদ্য হিসেবে কলা গাছের সাইলেজ, হেলেজ এবং মিশ্র খাদ্য তৈরির কৌশল উদ্ভাবন করেছেন।
তিনি জানান, প্রথমে কলা গাছের কান্ড মেশিনের সাহায্যে কেটে ছোট ছোট টুকরা করে আর্দ্রতা শতকরা ৬৫ থেকে ৭০ ভাগে আনা হয়। তারপর এর সাথে বিভিন্ন খাদ্য উপাদান মিশিয়ে বায়ুরোধী ড্রাম বা ব্যাগে বায়ুশূন্য অবস্থায় ৭ থেকে ১৪ দিন গাঁজন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। গাঁজনকৃত এই খাদ্যই কলা গাছের সাইলেজ। আর কলা গাছের সাইলেজকে রোদে শুকিয়ে আর্দ্রতা শতকরা ৩৫ থেকে ৪০ ভাগে আনার পর সেই খাদ্যকে কলা গাছের হেলেজ বলে। কলা গাছের হেলেজ শতকরা ৪০ থেকে ৬০ ভাগ ও অন্যান্য দানাদার খাদ্যের মিশ্রণে কলা গাছের মিশ্র খাদ্যটি প্রস্তুত করা হয়েছে। উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রস্তুতকৃত গো-খাদ্যগুলো খুব সুস্বাদু এবং পুষ্টি গুণসম্পন্ন।
গবেষক আরও জানান, কলা গাছ এক বর্ষজীবী উদ্ভিদ। বছরে একবার ফল দিয়েই গাছ মারা যায়। গাছ থেকে কলা সংগ্রহের পর গাছের বাকি অংশ (কান্ড) পরিবেশে বর্জ্য হিসেবে থেকে যায়। প্রতি টন কলা উৎপাদনে দ্বিগুন পরিমানে কলা গাছের বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার কোন ব্যবহার নেই বললেই চলে। এই বিপুল পরিমান কলা গাছের বর্জ্য পরিবেশে ফেলে রাখলে পরিবেশ দূষণ করে। তাই পরিবেশ দূষণরোধ ও গো-খাদ্যের বিকল্প হিসেবে কলাগাছের ব্যবহারের উদ্দেশ্যে গবেষণাটি শুরু করেছিলাম। উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে কম দামে গো-খাদ্য তৈরি করা সম্ভব। এতে খামারিরা অল্প খরচে গবাদি পশু পালন করে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।