ময়মনসিংহে ইংরেজি সাইনবোর্ডের ছড়াছড়ি: বাংলা ব্যবহারে নেই স্বদিচ্ছা

২১ শে ফেব্রুয়ারীকে ময়মনসিংহবাসী না ভুললেও- ভুলে যেতে বসেছে ভাষা শহীদদের অবদানের কথা। ভুলে যেতে বসেছে সর্বস্তরে বাংলা ব্যবহারের কথা।

শুধু তাই নয়, বাংলা ভাষার ব্যবহার ভুলে ময়মনসিংহ শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ডে ইংরেজি ব্যবহার করছে দেদারছে। সাত বছর আগে হাইকোর্ট সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ডে বাংলা লেখা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দিলেও এখনও সেই আদেশ বাস্তবায়ন হয়নি। হাইকোর্টের সেই আদেশ অমান্য করে ময়মনসিংহ নগরীর অনেক প্রতিষ্ঠান স্বগর্বে ইংরেজিতে সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড ঝুলিয়ে রেখেছে।

এদিকে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে দেশের সব সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার, গাড়ির নম্বরপ্লেট, সরকারি দপ্তরের নামফলক এবং গণমাধ্যমে ইংরেজি বিজ্ঞাপন ও মিশ্র ভাষার ব্যবহার বন্ধ করতে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে বলেন। দীর্ঘ সাত বছরেও হাইকোর্টের নির্দেশ বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগ না থাকায় ময়মনসিংহে দোকানপাট, শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইংরেজিতে সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ডের সংখ্যা বাড়ছেই। বরংচ, ইংরেজিতে সাইনবোর্ড ব্যবহারের জন্য রীতিমতো প্রতীযোগীতায় নেমেছে বিভিন্ন দোকানপাট, শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

ময়মনসিংহ নগরী ঘুরে দেখা গেছে, ইংরেজি শব্দে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম রাখার প্রবণতা বেশি। এ ছাড়া ইংরেজিতে (রোমান হরফ) লেখা সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, নামফলকেরও রয়েছে ছড়াছড়ি। দোকানপাট, শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ সাইনবোর্ড ইংরেজিতে লেখা, এক্ষেত্রে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোও পিছিয়ে নেই। তবে সরকারি দপ্তরের সাইনবোর্ড বা নামফলকে ইংরেজির ব্যবহার দেখা যায়নি।

বাংলাদেশের সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। এ ছাড়া বাংলা ভাষা প্রচলন আইন, ১৯৮৭-এর ৩ ধারায়ও সরকারি অফিস, আদালত, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চিঠিপত্র, আইন-আদালতের সওয়াল-জবাব এবং অন্যান্য কাজে বাংলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

ময়মনসিংহ নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং অন্তত ২০টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে ময়মনসিংহ লাইভ এর এই প্রতিবেদক। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলদের মতে, অনেকেই আদালতের আদেশের কথা জানেন না, স্থানীয় প্রশাসন থেকেও এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়নি। আবার অনেকেই বলছেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডের নাম ও লোগো ইংরেজিতে হওয়ায় বাধ্য হয়ে ইংরেজিতে সাইনবোর্ড তৈরি করেছেন। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন থেকে ব্যবসার অনুমতি নেয়ার সময় অর্থাৎ ট্রেড লাইসেন্স নেওয়ার সময় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সাইনবোর্ডে বাংলা ব্যবহারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়। অতিরিক্ত একটি সিল দিয়ে ট্রেড লাইসেন্সে লেখা থাকে, ‘সাইনবোর্ড/ব্যানার বাংলায় লিখতে হবে’।

সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ডে বাংলা ব্যবহারের হাইকোর্ট নির্দেশনা জারি করলেও বাংলা ব্যবহারে ময়মনসিংহে দৃশ্যত কোনো অগ্রগতি নেই। বরংচ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইংরেজি সাইনবোর্ড ব্যবহার করে অন্যসব প্রতিষ্ঠানকেও ইংরেজিতে সাইবোর্ড লিখতে উৎসাহিত করছে যা বাংলা ভাষা প্রচলন আইন, হাইকোর্টের রুল ও আদেশের পরিপন্থী।

এব্যাপারে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পুলক কান্তি চক্রবর্তী ময়মনসিংহ লাইভকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি অবশ্যই দেখব এবং যারা সম্পূর্ণ ইংরেজি সাইনবোর্ড ব্যবহার করছে তা আমাদের নজরে আসলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। আর এবিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক স্যারের সাথেও কথা বলব।’

এব্যাপারে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী মো. ইউসুফ আলী ময়মনসিংহ লাইভকে বলেন, ’মূলত বিদেশীদের বুঝার জন্য সাইনবোর্ডে ইংরেজি ব্যবহার করা হয়। তবে বাংলাকে প্রাধান্য দিয়ে সাইনবোর্ডে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা যায়। সম্পূর্ণ ইংরেজিতে সাইনবোর্ড কখনই গ্রহণযোগ্য না।’ তিনি ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনে নতুন দায়িত্ব নেয়ায় সব বিষয়ে এখনও অবগত নন বলেও জানান। তবে ইংরেজিতে সাইনবোর্ড যারা ব্যভহার করছেন তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

Share this post

scroll to top