বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) কৃষিবিদ দিবসে শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে ছাত্রলীগের এক গ্রুপের নেতাকর্মীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। রবিবার বেলা সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ওই হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অফিসার পরিষদের দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ মাহমুদুল কবির খানসহ ১০ জন কর্মকর্তা আহত হন বলে অভিযোগ করেছে বাকৃবি অফিসার পরিষদ।
জানা গেছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্য বিধি মেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে কৃষিবিদ দিবস পালিত হয়। সকাল ১০ টায় অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি চত্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি এবং পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, অফিসার, কর্মচারী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। এর পর সবাই মিলে একটি র্যালি বের করে। র্যালিটি প্রশাসনিক ভবনের সামনে আসলে বাকৃবি অফিসার পরিষদের সাথে বাকৃবি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। কথা কাটাকাটি চলতে চলতে এক সময় হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে বাকৃবি অফিসার পরিষদের ১০ জনের মতো নেতাকর্মী আহত হয় বলে জানা যায়। বর্তমানে পুলিশ এবং প্রশাসনের চেষ্টায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার পরিষদের অভিযোগ পত্রে বলা হয়, ১৩ই ফেব্রুয়ারি ২০২২ ‘কৃষিবিদ দিবস’ উপলক্ষ্যে বাকৃবি প্রশাসন কর্তৃক অনুষ্ঠানটি উদযাপনের জন্য বঙ্গবন্ধু স্মৃতি চত্ত্বরে ফুল দেয়া ও সন্ধ্যায় ভার্চুয়াল মিটিংয়ের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় র্যালিসহ সকল জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতেও বাকৃবি এলামনাই এসোসিয়েশনের ব্যানাওে র্যালী করতে চায়। এমন পরিস্থিতিতে আমরা সহ বাকৃবি প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি রক্ষার স্বার্থে তাদেরকে র্যালি করা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরের ইন্ধনে সাবেক বহিঃস্কৃত নেতা, ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদ ও দেলোয়ারের নেতৃত্বে অফিসারসহ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উপর চড়াও হয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে করে অফিসার পরিষদের দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ মাহমুদুল কবির খানসহ অনেক কর্মকর্তা আহত হন। আমরা এমতাবস্থায়, উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য প্রক্টর, পরিচালক-বাউরেস ও পরিচালক পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখাসহ জড়িত সকলকে আগামী ৭ (সাত) দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি। অন্যথায় অফিসার পরিষদ বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবো।
ছাত্রলীগের পদপত্যাশী নেতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা কৃষিবিদ দিবস উপলক্ষ্যে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করতে গেলে অফিসার পারিষদের নেতাকর্মীরা আমাদের বাধা দেয় ও ব্যানার ধরে টানা হিচড়ে শুরু করে। এ সময় আমরা বাঁধা দিতে গেলে তাদের সাথে বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হয়। আমরা র্যালি করবো, আমাদের বাধা দেওয়ার অধিকার তাদের নেই।
আরেক পদপ্রত্যাশী ছাত্রলীগ নেতা তায়াফুর রহমান রিয়াদকে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমরা র্যালী করতে গেলে অফিসার পরিষদের নেতারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইদের অপমান অপদস্ত করা হয়। এসময় আমরা বাধা দিতে গেলে তারা আমাদের উপর চড়াও হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠানে তারা বাঁধা প্রদানের কেউ না।
অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মহির উদ্দীনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এ ব্যাপারে ফোনে কিছু বলতে চাই না। আমি এখন ক্যাম্পাসের বাইরে আছি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এ কে এম জাকির হোসেন বলেন, দিবসটি পালনে সিডিউল অনুযায়ী কোনো ধরনের র্যালির আয়োজন ছিলো না। তবে তারা যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই, সেহেতু তারা অনুরোধ করেছিলো র্যালি করার জন্য। তবে অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে তাদের র্যালি না করতে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়। তবে আমি মনে করি, আজকের অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য দুই পক্ষই দায়ী।