ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার আলতাফ গোলন্দাজ ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপিকা আমেনা খাতুন ছুটি ছাড়াই বছরে একবার করে আমেরিকা সফরে যান। সেখানে দুই থেকে তিনমাস অবস্থান শেষে কলেজে যোগদান করেন। ২০০৯ সাল থেকেই প্রতিবছর তাঁর আমেরিকা সফরে শুরু হয়েছে সমালোচনা। তবে অধ্যাপিকা আমেনা খাতুনের দাবি তিনি চিকিৎসার জন্য কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে আমেরিকায় যান।
জেলার গফরগাঁও উপজেলার ঐহিত্যবাহী বিদ্যাপীঠ আলতাফ গোলন্দাজ ডিগ্রি কলেজ। প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থী রয়েছে ৪৭০ জন। শিক্ষার্থী অনুপাতে রয়েছে শিক্ষকের স্বল্পতা। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের দুইশ জন শিক্ষার্থী রয়েছে দুইজন। আমেনা খাতুন এবং মারিয়া মোস্তারী। করোনার জন্য গেল দুই বছরে বেশির ভাগ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও নিয়মিত ক্লাশ হয় অনলাইনে। এদিকে বছরে দুই থেকে তিন মাস আমেনা খাতুন আমেরিকা থাকায় একজনের পক্ষে দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে ক্লাশ করানো সম্ভব হয় না। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
দ্বাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, আমেনা খাতুন দেশে থাকলে নিয়মিত কলেজে আসেন কিংবা অনলাইনে ক্লাশ করান। কিন্তু ম্যাডাম আমেরিকা চলে গেলে আমাদের জন্য খুব সমস্যা হয়। একজন শিক্ষকের পক্ষে এতগুলো শিক্ষার্থীর ক্লাশ নেয়া সম্ভব হয় না। হঠাৎ করে ম্যাডামের প্রতি বছর আমেরিকা যাওয়া আমাদের ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই না।
একজন শিক্ষক বলেন, আমেরিকায় হয়তো ম্যাডামের কোন আত্মীয় থাকে তাই চলে যায়। আমরা ইচ্ছা করলেই কোথাও যেতে পারি না। অধ্যক্ষ স্যারের সাথে হয়তো ম্যাডামের ভালো সম্পর্ক তাই ছুটি না নিয়েই চলে যায়। শিক্ষক হয়ে এমন কাজ করা দৃষ্টি গোচর দেখা যায়।
গফরগাঁও উপজেলার আলতাফ গোলন্দাজ ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপিকা আমেনা খাতুন বলেন, গত বছরের ১ ডিসেম্বর আমেরিকা গিয়ে ১৪ জানুয়ারী ঢাকায় আসছি। এর কয়েকদিন পর কলেজে যোগদান করি। এবার কম সময় সেখানে থাকা হয়েছে। চিকিৎসার জন্য ২০১৯ সাল থেকে বছরে একবার আমেরিকা যেতে হয়। সেখানে ভাইয়ের বাসায় দুই-তিনমাস থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে চলে আসি। পরে কলেজ পরিচালনা কমিটি আমার ছুটি মঞ্জুর করে। সেই যাওয়া যদি কারো ভালো না লাগে তাহলে আর যাব না।
গফরগাঁও উপজেলার আলতাফ গোলন্দাজ ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিজন কুমার বর্ধন বলেন, আমেরিকা সফর শেষে ২০ জানুয়ারী ম্যাডাম কলেজে যোগদান করেছেন। পরে তাঁর ছুটি মঞ্জুর করা হয়। করোনার জন্য ম্যাডাম না থাকায় খুব একটা সমস্যা হয়নি। উনার ক্লাশে দুইশ জন শিক্ষার্থী থাকলেও ৬০ থেকে ৭০ জন শিক্ষার্থী ক্লাশে কিংবা অনলাইনে উপস্থিত থাকে। তবে যেহেতু বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে ম্যাডাম আর কোন দিন আমেরিকা যেতে পারবে না। যদি যেতে হয় তাহলে চাকরী ছেড়ে যাবে।
জেলা শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, একজন শিক্ষক বছরে ১১ থেকে ১২ দিন ছুটি কাটাতে পারেন। যদি উনি বেশি অসুস্থ থাকেন সেক্ষেত্রে ভিন্ন কথা। তবে প্রতি বছর দুই থেকে তিন মাস দেশের বাহিরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই কারোর। বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দেখা হবে।